নৈসর্গিক সৌন্দর্যের রাণী কক্সবাজারের সন্তান আব্দুল্লাহ আল মামুন। বহুবিধ প্রতিভার বিরল সমাবেশে সৌভাগ্যবান এবং সরলপ্রাণ একজন মানুষ। আপন আলোয় দেশে-বিদেশে নিজের চারপাশকে তিনি প্রতিনিয়ত আলোকিত করে চলেছেন। আজ তাঁর জন্মদিন।
১৯৫৮ সালের এই দিনে জন্মগ্রহণকারী গুণী ব্যক্তিত্ব আব্দুল্লাহ আল মামুন আজো চিরসবুজ তরুণের মতো প্রাণবন্ত এবং উচ্ছল। মামুন ভাইকে তাই গালফ বাংলা.কমের মাধ্যমে জানাচ্ছি, শুভ জন্মদিন। আরও অনেক অনেক দীর্ঘকাল ধরে আপনি আমাদের আলোময় করে রাখবেন, এই প্রত্যাশা এবং প্রার্থনা মহান করুণাময়ের কাছে।
আব্দুল্লাহ আল মামুন একাধারে একজন প্রকৌশলী, লেখক, গীতিকার, সুরকার এবং শিল্পী। কাতারের পৌরসভা ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে কর্মরত তিনি। এর পাশাপাশি ইন্সটিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইইবি)-এর কাতার শাখার চেয়ারম্যান। জড়িয়ে আছেন বেশ কয়েকটি সামাজিক সংগঠনে। তাঁর জীবনলব্ধ সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতায় উপকৃত হচ্ছেন সমাজের নানা শ্রেণি ও পেশার মানুষ।
বর্ণিল ও বৈচিত্রময় জীবনের অধিকারী আব্দুল্লাহ আল মামুন কাতারে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে হাতেগোনা কয়েকজন সফল এবং সর্বজনশ্রদ্ধেয় মানুষদের একজন। কর্মব্যস্ততার মধ্যেও তিনি চলমান নানা বিষয়ে কলাম লেখেন প্রথম আলো সাপ্তাহিক উপসাগরীয় সংস্করণ, দৈনিক ইত্তেফাকসহ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন দৈনিক, সাপ্তাহিক ও অনলাইন পোর্টালে। মরুদ্যানের রূপকার আখ্যা দিয়ে তাঁকে নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় দৈনিক প্রথম আলোর সাপ্তাহিক আয়োজ ‘অন্য আলো’য়।
অবসরে গান চর্চা করেন। তাঁর লেখা ‘তোরে পুতুলের মতো করে সাজিয়ে’ আজও বাংলাদেশের তরুণ ও নানা বয়সী শ্রোতাদের মুখে মুখে। এছাড়াও ‘এই মুখরিত জীবনের চলার বাঁকে’সহ আরও বেশকিছু গান সমৃদ্ধ করেছে বাংলা গানের জগতকে। সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে তাঁর একক সুরে একটি অ্যালবাম ‘শুধু তোমার জন্য’।
কাতারে আসার আগে আব্দুল্লাহ আল মামুন অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী সিডনিতে দীর্ঘদিন বসবাস করেছেন। তাঁর হাত ধরে যাত্রা শুরু করে ‘সিডনি রেডিও বাংলা সার্ভিস’।
লিখেছেন জীবনধর্মী কলাম এবং কবিতার বই। কাতারে প্রবাসজীবনের সুখ দুঃখের নানা অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা তাঁর বই ‘কাতারের বহতা সময়’ প্রকাশিত হয়েছে মাস কয়েক আগে।
পড়ালেখা ও কর্মজীবনের তাগিদে আব্দুল্লাহ আল মামুন ঘুরে বেরিয়েছেন পৃথিবীর নানা দেশে। পেয়েছেন পুরস্কার, সম্মাননা এবং অসংখ্য মানুষের ভালোবাসা।
কক্সবাজারের সন্তান আব্দুল্লাহ আল মামুনের জন্ম ১৯৫৯ সালের ৩১ জুলাই। চট্টগ্রাম মুসলিম হাইস্কুল থেকে ১৯৭৫ সালে এসএসসি এবং ১৯৭৭ সালে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এইচএসসি পাস করে চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমান চুয়েট) ভর্তি হন। সেখান থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করে একই বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৮৪ সালে তিনি উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশে পাড়ি দেন। থাইল্যান্ডে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রি শেষ করে ১৯৮৮ সালে অভিবাসী হয়ে যান অস্ট্রেলিয়ায়।
২০০৮ সাল থেকে তিনি কাতারে বাস করছেন। এর আগে ১৯৮৮ সাল থেকে অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন শহরে পেশাদার প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করেছেন। সেখানেও রেখেছেন প্রতিভার স্বাক্ষর। সেখানকার নিউ সাউথ ওয়েলস স্টেটের শোলহেভেন এলাকায় পরিশোধিত পানি ব্যবহারের একটি প্রকল্পের রূপকার ছিলেন। তিনি এমন একটি উপায় বের করেন যাতে প্রায় ৫০ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হয়। প্রকল্পটির জন্য যে বাজেট বরাদ্দ হয়েছিল তার প্রায় অর্ধেক টাকা দিয়েই তিনি এই প্রকল্পের কাজ সারেন। সে কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ২০০০ সালে পেয়েছেন দুটো মর্যাদাসম্পন্ন পুরস্কার—নিউ সাউথ ওয়েলস প্রিমিয়ারস পাবলিক সেক্টর অ্যাওয়ার্ড ইন দ্য ইকনমি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট সেক্টর এবং দ্য ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স অস্ট্রেলিয়ার ‘ইঞ্জিনিয়ার্স এক্সেলেন্স অ্যাওয়ার্ড’। সিডনি ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির পুরকৌশল বিভাগে খণ্ডকালীন শিক্ষকও ছিলেন তিনি।
সফলতার যেসব সংজ্ঞা আমরা সচরাচর শুনে থাকি, সেই আলোকে বলতে পারি, কীর্তিমান আব্দুল্লাহ আল মামুন আজ একজন সফল এবং সুখী মানুষ। মানুষের কল্যাণে নিবেদিত তাঁর জীবন ও কর্ম হতে পারে এই সময়ের তরুণ প্রজন্মের অনুপ্রেরণার অমূল্য উৎস।
তামীম রায়হান
কাতারপ্রবাসী লেখক ও সাংবাদিক
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।