বাংলা ট্রিবিউন
গতবারের মতো এবারও পর্যাপ্ত সংখ্যক হজযাত্রী না পাওয়ার কারণে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে হজ ফ্লাইট বাতিল করতে হচ্ছে। রবিবার (৩০ জুলাই) পর্যন্ত বিমানের তিনটি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। হজ যাত্রীদের ভিসা না হওয়ায় এসব ফ্লাইট বাতিল হয়েছে বলে জানিয়েছে বিমান কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে, সৌদি আরব এ বছর ই-হজ ব্যবস্থাপনা চালু করলেও তাদের ই-ভিসা প্রিন্টে কারিগরি সমস্যার কারণে ভিসা প্রদানে সমস্যা হচ্ছে বলে জানিয়েছে হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)। ফলে হজ ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে বিমানকে।
জানা গেছে, চলতি হজ মৌসুম থেকে ই-হজ ব্যবস্থাপনা চালু করেছে সৌদি আরব। তবে দেশটির ই-হজের সার্ভারে কারিগরি সমস্যার কারণে ই-ভিসা প্রিন্টে জটিলতা তৈরি হয়েছে। ফলে আবেদন করলেও ভিসা পাচ্ছেন না বাংলাদেশি হজ যাত্রীরা। অন্যদিকে, বিগত দুই বছরের মধ্যে কোনও ব্যক্তি হজ পালন করলে এবার ভিসার জন্য অতিরিক্ত দুই হাজার রিয়াল (৪৪ হাজার টাকা) দাবি করছে সৌদি আরব। দেশটির এ নির্দেশনায় নতুন করে ভিসা জটিলতা তৈরি হয়েছে। নতুন করে অতিরিক্ত চার্জ দাবি করায় বিপাকে পড়েছে হজ এজেন্সিগুলো।
বিমান সূত্রে জানা গেছে, রবিবার বিমানের একটি হজ ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। এর আগে শনিবার দুটি ফ্লাইট বাতিল করে বিমান। পর্যাপ্ত সংখ্যক হজযাত্রী না পাওয়ায় ফ্লাইটটি বাতিল করে এয়ারলাইন্সটি। হজ ফ্লাইট বাতিলের জন্য সৌদ আরবের ভিসা জটিলতার পাশাপাশি বাংলাদেশের হজ এজেন্সিগুলোকে দায়ী করছেন বিমানের কর্মকর্তারা। অনেক হজ এজেন্সি এখনও হজ যাত্রীদের জন্য সৌদি আরবে বাড়ি ভাড়ার কাজ শেষ করেনি। যদিও হজ অফিসের নির্দেশনা রয়েছে, হজযাত্রীরা সৌদি আরবে যে বাড়িতে থাকবেন সেই বাড়ি বা হোটেলের নাম,তাসরিয়া নম্বর সম্বলিত স্টিকার তাদের পাসপোর্টের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে।
হজ ফ্লাইট বাতিল প্রসঙ্গে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, হজযাত্রী সংকটের কারণে ফ্লাইট বাতিল করতে হয়েছে। যেসব যাত্রীর এই ফ্লাইটে যাওয়ার কথা ছিল, তাদের ভিসা না হওয়ায় এ সংকট তৈরি হয়েছে। হজের জন্য আগে থেকেই ফ্লাইট শিডিউল নির্ধারণ করে দেয় সৌদি আরব। এ মৌসুমে নির্ধারিত সময়ে হজ যাত্রীদের সৌদি আরবে পৌঁছাতে হলে প্রতিদিন দুই হাজার জনকে পরিবহন করতে হবে। ফ্লাইট বাতিল হলে এ প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হবে।
শাকিল মেরাজ বলেন, এ বছর হজ ফ্লাইট ও শিডিউল ফ্লাইটে ৬৩ হাজার ৫৯৯ (ব্যালটি ও নন-ব্যালটি) জন হজ পালনে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে জেদ্দা যাবেন। হজ যাত্রীদের ঢাকা-জেদ্দা-ঢাকা রুটে পারাপারের জন্য ইতোমধ্যেই নিজস্ব বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজের পাশাপাশি ৪০৬ আসনের লিজে আনা বোয়িং ৭৭৭-২০০ উড়োজাহাজ প্রস্তুত রয়েছে। ফলে ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় আর্থিক ক্ষতিতে পড়তে হবে বিমানকে।
ভিসা জটিলতা প্রসঙ্গে হাব মহাসচিব শাহাদত হোসেন তসলিম বলেন, ‘সৌদি আরব এ বছর হজযাত্রীদের জন্য ই-ভিসা চালু করেছে। কিন্তু তাদের সার্ভারে সমস্যা দেখা দেওয়ায় ই-ভিসা প্রিন্ট করতে গিয়ে নানা জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে। এ কারণে ভিসা পেতে জটিলতা তৈরি হয়েছে। এছাড়া, এবার নতুন নিয়ম করেছে সৌদি আরব। কোনও ব্যাক্তি বিগত দুই বছরের মধ্যে হজ পালন করলে এবার তাকে ভিসার জন্য অতিরিক্ত ২ হাজার রিয়াল (৪৪ হাজার টাকা) দিতে হবে। হঠাৎ করে এ সময়ে এত টাকা অনেক হাজি দিচ্ছেন না। ফলে এটাও একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
হজযাত্রীদের বাড়ি ভাড়া প্রসঙ্গে শাহাদত হোসেন তসলিম বলেন, ‘সব হজ এজেন্সি নিয়ম মেনে বাড়ি ভাড়া সম্পন্ন করে ভিসার জন্য আবেদন করেছে। এখন পর্যন্ত ৪০ হাজার ভিসা ইস্যু হয়েছে। অনিয়ম হলে এত ভিসা হতো না। ফলে বিমান যদি এমন অভিযোগ করে থাকে তা সঠিক নয়।’ এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও হজ অফিসের পরিচালক মো. সাইফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
এ বছর হজ ফ্লাইট শুরু হয়েছে ২৪ জুলাই। বাংলাদেশে থেকে হজযাত্রী পরিবহন করছে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও সৌদি আরবের সাউদিয়া এয়ারলাইন্স। বিমানের হজ ফ্লাইট চলবে ২৬ আগস্ট পর্যন্ত। সাউদিয়ার ফ্লাইট চলবে ২৮ আগস্ট পর্যন্ত। বাংলাদেশ থেকে এ বছর প্রায় এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজযাত্রী পবিত্র হজব্রত পালনে সৌদি আরব যাবেন।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।