বিশেষ প্রতিবেদক:
ছবির মানুষটার নাম মোস্তাক আহমদ সবার কাছে তিনি একজন সাকলাইন মোস্তাক। দীর্ঘ দু’দশকেরও বেশি সময় ধরে ঐতিহ্যবাহী দক্ষিণ চট্টগ্রামের বানিজ্যিক জনপদ খ্যাত ঈদগাঁও এলাকায় ক্রীড়া, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক বিভিন্ন কর্মকান্ডে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন দিনহীন এই মানবিক মানুষটি। হাজারো দর্শকের মুখে যে স্বপ্নবাজ মানুষটি হাঁসি ফুটিয়েছেন সেই মানুষটির মুখে হাসি ফুটানোর জন্য একটি মানুষও নেই। যদিও বলতে পারি সাকলাইন মোস্তাক যতই দিনহীন হোক, তিনি একজন সুখী, কর্মঠ ও চৌকস সাদা মনের মানুষ। যে ব্যক্তি আপাদমস্তক একজন সৎ মানুষ সে সাদা মন নিয়ে হাজার হাজার মানুষদের হাঁসির জন্য নিজের হাঁসিকে বিসর্জন দিয়েছেন। সৎ থাকার চেয়ে জীবনে আর কোন বড় অর্জন হয় কি? সুখ কি শুধু টাকায়? সুখ হলো সততায়, মানুষের ভালবাসায়। সচ্চরিত্রই মানুষের ইহকাল এবং পরকালের একমাত্র শ্রেষ্ঠ সম্পদ। সকল মানুষের ভাললাগা-ভালবাসা এর চেয়ে উত্তম পথ মানুষের জন্য আর নেই। পিতা-মাতা, শিক্ষক ও গুরুজনের প্রতি শ্রদ্ধা, আত্মীয় স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশি প্রত্যেকের প্রতি এমন আচরণ করতে হবে যাতে কোন লোকই যেন কারো আচরণে অন্তরে ব্যথা না পায়। কারণ, দোয়া ও আর্শীবাদ কারো কাছে পাওয়া যায়না। অভিশাপের বেলায়ও তাই। সেই সুখ পাখিটাই আমি বলব সাকলাইন। সততা কেবল মোস্তাককে দারিদ্র উপহার দিয়েছে, তিনি হয়তো কবি নজরুলের কথামালা ভেবেছেন ‘হে দারিদ্র তুমি মোরে করেছ মহান তুমি মোরে দানিয়াছ খ্রিস্টের সম্মান’। ১৯৭৯ সালে জন্ম নেয়া লড়াকো এই শক্তিমান প্রাণোচ্ছ্বল স্বপ্নবাজ মানুষটি ১৯৯৬ সালে টিভি স্কীনে বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলা দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে ঐতিহ্যবাহী ঈদগাহ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সর্ব প্রথম ক্রিকেট খেলার প্রচলন করেন। তাঁর বন্ধু লতিফ ও মামুন একই বছরে বৃহত্তর ঈদগাহতে প্রথম আনুষ্ঠানিক ক্রিকেট খেলার বর্নাঢ্য টুর্নামেন্ট আয়োজন করেন। সেই ১৯৯৬ থেকে আজ অবধি ক্রিকেট খেলাসহ বিভিন্ন খেলাধুলা ও সামাজিক কর্মকান্ড ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড ধারাভাষ্য দিয়ে দর্শকদের মাতিয়ে রাখছেন এই ক্রিড়াবিদ। কিন্তু ২০০৬ সালে আকস্মিক ‘পেনিক ডিস অর্ডার’ রোগে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘ ১১ বছর ধরে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। সাধ্যের মধ্যে চিকিৎসা চালালেও এখন আর্থিক সংকটের কারণে উন্নত চিকিৎসা করতে পারছেন না শান্তি প্রিয় এই ভাললাগার প্রিয় সাকলাইন মোস্তাক। ২১ বছর ধরে যে মানুষ অন্যদের মুখে হাঁসি ফোটানোর জন্য কাজ করে গেছেন এখন সময় আমাদের তাঁর মুখে হাঁসি ফোটানোর। তিন ভাষায় ধারাবিবরণী দিয়ে হাজার হাজার মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়েছেন। যাকে এক নামেই চিনেন সাকলাইন মোস্তাক হিসেবে। আমার বিশ্বাস মফস্বলে পড়ে না থেকে যদি কোন মাধ্যমে রাজধানী কেন্দ্রিক কর্ম নির্ধারণ করতে পারতেন তাহলে তাকে আর পিছনে থাকাতে হতো না। তিনি অনেক বড় মাপের ধারাভাষ্যকার হিসেবে তারকা বনে যেতেন। এক দিকে সংসারের বোঝা অপর দিকে দীর্ঘ মানসিক রোগ ভোগ, সব মিলিয়ে দিনহীন ভাবে ছুঁটে চলা। একজন ক্রীড়া সংগঠকের দৈন্যদশা দেখে আমাদের মত ভালবাসার মানুষরা থেমে থাকতে পারিনা! ভালাবাসা কখনো শেষ হয়না এটি মানুষের ধীরে ধীরে কেবল বৃদ্ধিই পায়। কিন্তু আবেগ বা ভাললাগা ধীরে ধীরে কমতে থাকে এবং একটা সময় তা শেষ হয়ে যায়। ভালবাসায় যেকোন সমস্যাকে খুব যতœ করে সমাধানে আনা হয়। আমরাও সামাধানে যেতে চাই। কারণ সামথ্যবান ব্যক্তির সামান্য ভালবাসার উদ্যোগেই পারে অনেক মানুষের জীবন পরিবর্তন করতে। যেমনটি পারবেন সাকলাইন মোস্তাককে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে। জেনেছি, কর্ম অনুসারে ফল লাভ হয় এটাই চিরন্তন সত্য। শিক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য মানবীয় গুনাবলী অর্জন করে তা জীবনের সর্বক্ষেত্রে যথাযথ প্রয়োগ করা। মানুষের প্রকৃত পরিচয় তার মনুষ্যত্ব অর্জনের মধ্য দিয়ে প্রতীয়মান হবে। শুধু পুঁথিগত বিদ্যা বা কৌশলগত জ্ঞানার্জন করলেই প্রকৃত মানুষ হওয়া যায় না। এমনকি শিক্ষাগত যোগ্যতা বা কৌশলগত শিক্ষার উচ্চ মূল্যমানের সার্টিফিকেট গলায় ধারণ করলেই একজন প্রকৃত মানুষ হওয়া যায় না। যদি তার মানবিক গুনাবলি অর্জিত না হয় তবে বহুমূল্যবান মনি মস্তকে ধারণকৃতি বিষধর সর্পের সঙ্গেই তুলনা করা চলে। বর্তমান প্রজন্মের অনেক ছেলেমেয়েদের তাদের পিতা-মাতা, শিক্ষা-গুরুজন, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের প্রতি কিছুটা রূঢ় আচরণ পরিলক্ষিত হচ্ছে। এর জন্য দায়ী কে? আমার মতে, কিছুটা হলেও একাধারে শিক্ষাব্যবস্থা, মুষ্টিমেয় শিক্ষক, পিতা-মাতা ও সমাজব্যবস্থা এর দায়ভার বহন করছে। সাকলাইন মোস্তাক আমার চেয়ে একযুগের অগ্রজ। বয়স এবং প্রতিভার দিক দিয়ে আমি তাঁর চেয়ে অনেক ছোট। কিন্তু তার মানবিক দৃষ্টি, সুন্দর চিন্তা শক্তি, সৃজনশীলতা, সহনশীল আচরণ কোন ভাবেই আমার কাছে মনে হয়নি আমি তাঁর চেয়ে অনেক ছোট। এভাবেই বন্ধুর মত আগলে রেখেছেন আমার মত হাজারো তারুণ্যের মন, মনন ও প্রজ্ঞাকে। এই প্রিয় মানুষটির অবস্থা আজ আমাকে করেছে ব্যতিত। বলতে ইচ্ছে হচ্ছে আমরা কেন মরার পরে সমাধিতে ফুলতে দিতে যাই। যে মানুষটিকে জীবিত অবস্থায় বুঝতে চাইনি খোঁজ নিলাম না তাঁর শারিরিক অবস্থা কোন পর্যায়ে আর এখন মৃত্যুর পরে যেন ফুল দিয়ে শোক বার্তা পাঠিয়ে লোকদেখানো স্বরণ সভা করে দায়মুক্ত হই? আমরা আসলে এমনই। আমাদের স্বভাবগত চিন্তা কেন পাল্টেনা বুঝিনা। কেন, আমরা কি পারিনা জীবিত অবস্থা একটা মানুষের ভাল কাজের স্বীকৃতি দিতে, সাফল্যের মালা পড়াতে! আমি হলফ করে বলতে পারি সাকলাইন মোস্তাক যখন আমাদের থেকে চলে যাবে চির তরে যেখান থেকে কেউ কোন ফিরেনা তখন ঠিকই এই মানুষটি এমন, তেমন ছিল বলে স্পিকারে গলা ফাটানো হবে, পত্রিকায় শোকবার্তায় পৃষ্টায় ভরে যাবে, জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা হবে। আমি বলি একজন মানুষ জীবিত অবস্থায় তার জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠান ও তাঁর ধারাবাহিক সাফল্যের কথন শুনতে পারলেই কিন্তু সে মরার পরে শান্তি পায়। অন্তত জীবৎদশায় তার কৃর্তি নিয়ে সমাজের বড় বড় কর্তারা সৃষ্টিকর্ম নিয়ে আলোচনা করবে, সমাজ কর্মের প্রতিদান দিবে। একজন সৃষ্টিশীল মানুষ এটা আশা করতেই পারে। আমরা পুরাতন শিকল ভাঙ্গবই। নতুনত্বের দীপ্ত শপথ নিয়ে সমাজ বিনির্মাণে আমরা এগিয়ে আসবই। বর্তমানে সাকলাইনকে স্বাভাবিক অবস্থায় দেখলেও শারিরিক ও মানসিকভাবে তিনি অনেক দুর্বল হয়ে গেছেন। ‘পেনিক ডিস অর্ডার’ রোগে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘ ১১ বছর ধরে নিজের সাথে নিরব যুদ্ধ করে চলেছেন। যেটুকু সামর্থ ছিল তা নিয়ে এই মানুষটি চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন সাথে ক্রীড়াঙ্গনের মানুষদের ভালবাসার জায়গাটা আরও প্রসারিত করছেন। আগামী প্রজন্মের জন্য হলেও আমাদের ঈদগাঁও জালালাবাদ তেলীপাড়া এলাকার গর্বের ধন একজন সাকলাইন মোস্তাক এর মত মানুষটিকে বাঁচিয়ে রাখতে আমাদের এগিয়ে আসা উচিত। সাকলাইন’রা মরেনা, জয় তু সাকলাইন, জয় তু ভালবাসার মানবিক মানুষদের। আর্থিক সহায়তা পাঠাতে সাকলাইন মোস্তাক’র ব্যাংক একাউন্ড-০৯৬৩২০১০০০০১৮০৮৩ ইউসিবি, ঈদগাঁও ব্রাঞ্চ। বিকাশ ব্যক্তিগত নম্বর-০১৮২৩৫৫৮৩৮১। ০৯৬৩২০১০০০০১৮০৮৩ টঈই, ঊরফমধড়হ ইৎধহপয. ইকধংয- চবৎংড়হধষ ঘঁসনবৎ: ০১৮২৩৫৫৮৩৮১
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।