শাহেদ মিজান, সিবিএন:
পর্যটন রাজধানী কক্সবাজার শহরের সৌন্দর্য্য নিয়ে সংশ্লিষ্টদের নজর নেই- এ অভিযোগ অনেক দিনের। তারপরও দীর্ঘ সময়েও কক্সবাজার শহরের প্রত্যাশিত সৌন্দর্য্য বর্ধন হয়নি। বিশ্বের দীর্র্ঘতম সমুদ্র সৈকতের এই তাই এই শহর নানা ধরণের সৌন্দর্য্য ঘাটতি নিয়ে চলছে। কিন্তু যেটুকু রয়েছে তা রক্ষণাবেক্ষণেও কারো গরজ নেই! এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসন, পৌরসভাসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো চরম উদাসীন। এই উদাসীনতার কারণে শুষ্ক মৌসুম কোনো ভাবে গেলেও বর্ষায় এই শহরটি ময়লার ভাড়াড়ে পরিণত হয়। চলতি বর্ষাতেও এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
পানি নিষ্কাশনে প্রতিবন্ধকতা, সড়কে ময়লা ফেলা, অপরিস্কার-অপরিচ্ছন্নতা এবং ফুটপাতে অবৈধ ঝুপড়ি দোকানগুলোই হচ্ছে এই শহরের সৌন্দর্য্যহানির অভিশাপ। তবে চলতি মৌসুমে নালা দখলমুক্ত করার হওয়ায় বাজারঘাটার চিরাচরিত জলাবদ্ধতা লাঘব হয়েছে। এতে ওই এলাকায় ব্যবসায়িক মহলে স্বস্তি ফিরেছে। জলাবদ্ধতা লাঘব হলেও যত্রতত্র ময়লায় সয়লাব হয়ে আছে শহর। শহরের প্রায় প্রতিটি পয়েন্টে ময়লা আর কাদায় একাকার হয়ে আছে। সেই সাথে প্রধান সড়কের ভঙ্গুরতার কারণে পানিতে সয়লাব সর্বত্র।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, শহরের বাজারঘাটাস্থ বড়বাজার মসজিদ পুকুর সংলগ্ন স্থানে কাদা ও ময়লা একাকার হয়ে চলাফেলা করা যাচ্ছে না। একইভাবে আইবিপিস্থ চৌরাস্তা পয়েন্টও দুর্গন্ধযুক্ত কাদা আর ময়লায় সয়লাব হয়ে আছে। এই স্থানে সড়কের মারাত্মক ভঙ্গুর অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এতে যানচলাচলেও মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। ইসলামী ব্যাংকের সামনের সড়কেও অনেক দিন ধরে গর্ত হয়ে মিনি পুকুরে পরিণত হয়েছিল। সড়ক বিভাগ তা জোড়াতালি দিলেও এখনো খানা-খন্দ রয়ে গেছে। এতে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।
পাশপাশি শহরের প্রধান সড়কের ৬নং মোড় থেকে পিটিস্কুল বাজার পর্যন্ত বিভিন্ন পয়েন্টে ময়লায় সয়লাব হয়ে আছে। একই সাথে এসব এলাকার বিভিন্ন স্থানে খানা-খন্দযুক্ত সড়কে পানি জমে রয়েছে। এদিকে ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র সময় বিধ্বস্ত হয়ে যায় ৬নং মোড়স্থ বিশালাকার বিলবোর্ডটি। কিন্তু দীর্ঘ দু’মাস অতিবাহিত হলেও এখনো বিধ্বস্ত ওই বিলবোর্ডটি সরিয়ে নেয়নি। এটা অনেকটা বিমানবন্দর সড়কের উপরেই হেলিয়ে আছে। এতে বড় গাড়ি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে এবং মারাত্মক সৌন্দর্য্যহানি ঘটছে। প্রতিদিন দেশ-বিদেশের পর্যটক এবং সরকারি-বেসরকারি ভিআইপি লোকজন এই সড়ক দিয়ে চলাচল করছে। তারা এই অবস্থা দেখে কক্সবাজার সম্পর্কে বিরূপ ধারণা নিয়ে যাচ্ছে বলে সচেতন মহল দাবি করেন। লালদিঘির মসজিদ সংলগ্ন প্রধান সড়কে ময়লা ফেলা হয় প্রতিদিন। ময়লাগুলো সরানো হলেও অনেক ময়লা থেকে যায়। এই কারণে ওই স্থানে সব সময় দুর্গন্ধ বিরাজ থাকে। এতে চলাচলকারী লোকজন চরম বিড়ম্বনায় পড়ে। এছাড়াও শহরের কলাতলীসহ বিভিন্ন স্থানে নানা কারণে সৌন্দর্য্যহানি ছড়িয়ে আছে।
শহরবাসীর অভিযোগ, কক্সবাজারে সৌন্দর্য্য নিয়ে বর্তমানে যে বিরূপ পরিবেশ বিরাজ করছে তার জন্য জেলা প্রশাসন, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, পৌরসভা ও সড়ক বিভাগ দায়ী। এই দপ্তরগুলোর উদাসীনতার কারছে বিশ্বেও কাছে পরিচিত কক্সবাজার শহরটি এক ভীতিকর অবস্থায় থেকে গেছে। এতে কক্সবাজারে আসা পর্যটকেরা যে আকাঙ্খা নিয়ে আসে তা থেকে বঞ্চিত হয় এবং একটি নেতিবাচক ধারণা নিয়ে ফিরে যায়।
কক্সবাজার সোসাইটির সভাপতি কমরেড গিয়াস উদ্দীন বলেন, কক্সবাজার পর্যটন শহর- এটা নামে মাত্র। সে ভাবে শহরকে এখন পর্যন্ত সাজানো যায়নি। উপরন্তু আরো অনুপযোগী করা রাখা হয়েছে। পর্যটন শহরের দুর্গন্ধ থাকতে পারে না। সড়কে খানা-খন্দ ও ময়লা থাকতে পারে না। তারপরও আমাদের অভিভাবকদের বোধোদয় হয় না। কবে হবে তাও জানি না।
জানতে চাইলে কক্সবাজার পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র মাহবুবুর রহমান চৌধুরী বলেন, অতিবৃষ্টির কারণে শহরের পানি ও ময়লা জমে কিছুটা অপরিচ্ছন্ন হয়েছে। তবে অনেক দিনের বাজারঘাটার দুর্দশা আমরা দুর করতে পেরেছি । আশা করি আস্তে আস্তে শহর সুন্দর হবে।’
ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম মজুমদার বলেন, ‘শহরের সৌন্দর্য্য রক্ষার প্রধান দায়িত্ব পৌরসভার। পৌরসভা সেভাবে দেখবে। জেলা প্রশাসন পৌরসভাকে সহযোগিতা করবে।’
কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্ণেল (অব.) ফোরকান আহামদ বলেন, ‘কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গড়া হয়েছে কক্সবাজারকে সাজাতে। এই সাজানোর মধ্যে কক্সবাজার শহরই মূখ্য। কারণ এই শহরকে ঘিরেই পর্যটনের মূল উৎস। আমরা কাজ শুরু করা সাথে সাথে এই বিষয়টি মাথায় নিয়ে এগুচ্ছি। কিছু পরিকল্পনাও হাতে নিয়েছি। এগুলো সংশ্লিষ্ট আরো যারা সহযোগিতা দরকার। সবার সমন্বয় হলে শহরের সৌন্দর্য্য বাড়ানো যাবে।’
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।