হাফিজুল ইসলাম চৌধুরী :

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির বাইশারি-দোছড়ি সীমান্তের অদূরে সাপমারাঝিরি-লেদুখাল নামক এলাকায় মিয়ানমারের ‘জলপাই রঙের পোশাকধারী’ শতাধিক সদস্যের একটি বাহিনীর আনাগোনা নিয়ে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে ওই স্থানে বাহিনীটির উপস্থিতি দেখতে পায় স্থানীয়রা।

স্থানীয় সূত্র জানায়, কয়েক মাস ধরে জলপাই রঙের পোশাক পরিহিত স্বল্প সংখ্যক সদস্যের বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় বিচরণের খবর পাওয়া গেলেও বৃহস্পতিবার থেকে দোছড়ি ইউনিয়নের ছাগলখাইয়া বিজিবির আওতাধীন সাপমারাঝিরি-লেদুখাল এলাকায় অন্তত শতাধিক অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীর আনাগোনা দেখতে পায় স্থানীয়রা। অত্যাধুনিক অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত ওই বাহিনীটি নিজেদের ‘আরাকান পার্টি’ হিসেবে স্থানীয়দের পরিচয় দিচ্ছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ‘অ, খ, ন আদ্যক্ষর নামের ব্যক্তি বলেন, ‘জলপাই রঙের পোশাকধারী সন্ত্রাসীরা আরাকান পার্টি পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন ক্ষেত খামার থেকে খাবার হিসেবে ফলমূল নিয়ে গেছে। পরে জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানো হলে বৃহস্পতিবার রাতে ৩১ বিজিবির অধিনায়ক (সিও) লেফটেনেন্ট কর্নেল মো.আনোয়ারুল আযীমের নেতৃত্বে বিজিবি পৃথক অভিযানে নামে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শুক্রবার বিকেলে মো.আনোয়ারুল আযীম বলেন, মিয়ানমারের বিদ্রোহী সদস্যদের আনাগোনার খবরে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে বৃহস্পতিবার রাত থেকে বিশেষ অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। তবে এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশ অভ্যন্তরে তাদের সন্ধান পাওয়া যায়নি। অভিযান অব্যাহত রয়েছে। পাহাড়ি এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় এ ধরনের অভিযান সবসময় চলে।

নাইক্ষিংছড়ির বাইশারি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলম বলেন, ‘কয়েকমাস আগে হাঙ্গার্স পিপলস পার্টি (এইচপিপি) নামক একটি উগ্রপন্থী গ্রুপের পক্ষ থেকে বিভিন্ন রাবার বাগানে চিঠি পাঠানো হয়।’ বিষয়টি তিনি উপরের মহলে জানিয়ে এলাকার মানুষের জানমালের নিরাপত্তার জন্য গহীন অরণ্যে সেনা-বিজিবির যৌথ অভিযান জোরদারের দাবি তোলেন।

উগ্রপন্থী এ সন্ত্রাসী গ্রপটিকে নাইক্ষ্যংছড়ি-লামা সীমান্তের তিরের ডিব্বা এবং আলীক্ষ্যং-ঈদগড় ও বাইশারী মৌজায় আনাগগোনা দেখা গেলেও মূলত তারা ছাগলখাইয়ার অদূরে সাপমারাঝিরি-লেদুমুখ এলাকায় প্রায় সময় অবস্থান করে থাকতে পারে বলে মনে করছেন পাহাড়ের কাঠুরিয়ারা।

অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, চলমান ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমকে কেন্দ্র করে মিয়ানামার বিদ্রোহী উপজাতীয় কিছু জনগোষ্ঠী সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এরই ধারাবাহিকতায় তারা বাংলাদেশে বসবাসরত উপজাতীদের আত্মীয়স্বজন পরিচয় দিয়ে ভোটার হওয়ার জন্য কৌশল অবলম্বন করছে। যার কারণে শুক্রবার সীমান্তের দোছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো: হাবিবুল্লাহকে ডেকে এনে বিজিবি সর্তকর্তার সাথে কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশনা দিয়েছেন।

উল্লেখ্য, বিগত ২০০৩ সাল নাগাদ সাপমারাঝিরি-লেদুখাল নামক ওই এলাকায় মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী আরাকান আর্মি (এএ) হেডকোয়াটার হিসেবে ব্যবহার করে। তৎসময় বিজিবি ব্যাপক অভিযানে শত শত ভারী অস্ত্র উদ্ধার করে আস্তানা গুড়িয়ে দিয়েছিল। বর্তমানে একই স্থানে জলপাই রঙের পোশাক পরিহিত সন্ত্রাসী বাহিনীর আনাগোনা নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে সীমান্তের মানুষের মাঝে।