হাফিজুল ইসলাম চৌধুরী :
মহেশখালীর মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের ২০ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় কারাগারে বন্দি জীবন কাটাচ্ছেন কক্সবাজারের সাবেক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জাফর আলম। এবার প্রায় ৬৬ লাখ টাকা আত্মসাতের দায়ে কক্সবাজার দায়রা জজ আদালতে আরেকটি মামলা হয়েছে জাফর আলমসহ ৬ ব্যক্তির বিরুদ্ধে।

গত ২২ মে মামলাটি দায়ের করেন কুতুবদিয়ার আলীআকবরডেইল ইউনিয়নের তাবলেরচর গ্রামের আবদুর রশিদ। গত ২৪ জুলাই আদালতের বিচারক ( সিনিয়র স্পেশাল জজ) মীর শফিকুল আলম মামলাটি আমলে নিয়ে অভিযোগ তদন্ত করে আগামী ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে দুর্নীতি দমন কমিশন ( দুদক) ঢাকাকে নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলার অন্যান্য আসামীরা হলেন, চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানার নন্দনকানন এলাকার সূজিত চৌধুরী, কুতুবদিয়ার বড়ঘোপ এলাকার অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম, কক্সবাজার পৌরসভার বাহারছড়ার আবুল হোসেন, গোলদীঘির পাড়ের রাজিব পাল ও নন্দনকানন এলাকার অপু পাল।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ১৯৬৫ সালে জনৈক চিত্তরঞ্জন চৌধুরী কুতুবদিয়া নির্বাহি ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে অজি উল্লাহ গংদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। ওই মামলাটি দীর্ঘদিন চলার পর আদালতের নির্দেশে ক্রোকবন্ধ হয় এবং সম্পত্তি রক্ষানাবেক্ষণের জন্য সহকারী কমিশনার (ভুমি) কুতুবদিয়াকে রিসিভার (রিসিভার মিচ নং-০১/৮২-৮৩) নিয়োগ করা হয়। এরপর থেকে লবণ মৌসুমে বিরোধীয় জমি লাগিয়ত করে পাওয়া টাকা সরকারি কোষাগারে অর্থাৎ সোনালী ব্যাংক কুতুবদিয়া শাখায় (চলতি হিসাব নং-১১০৮)এ জমা রাখা হয়। কিন্তু মামলা বিচারাধীন সময় নিস্পত্তির পুর্বে ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিরোধীয় সম্পত্তির ওয়ারিশ সূত্রে দাবিদার সুব্রত চৌধুরী গং সোনালী ব্যাংক কুতুবদিয়া শাখায় রিসিভার সম্পত্তি নিলামে জমাকৃত অর্থ ফেরৎ পাওয়ার আবেদন করে। এরপর জাফর আলমসহ অন্যান্য আসামীরা পরস্পর যোগসাজস করে জালজালিয়তির মাধ্যমে রিসিভারের জমাকৃত ৬৫ লাখ ৯৮ হাজার ২০০ টাকা উত্তোলন করে নিজেরা ভাগভাটোয়ারা করেন। তখন (২৭/১০/২০০৯) কুতুবদিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভুমি) দায়িত্বে ছিলেন, তৎকালীন কুতুবদিয়া উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা জাফর আলম।

এজাহারে বলা হয়, উক্ত টাকা সোনালী ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে ডিডি মুলে স্তানান্তর করা হয়েছে চট্টগ্রামের জুবলিরোডস্থ মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকে সুজিত চৌধুরীর একটি হিসাবে। যার নম্বর ০০১৮০৩১০০০৮৩। তৎমধ্যে ৪০ লাখ টাকা পাঠানো হয় মামলার চার নং আসামী আবুল হোসেনের সাউথইস্ট ব্যাংক কক্সবাজার শাখার ০০২২১১০০০০৭১০০ নং হিসাবে। আবুল হোসেন তখন কুতুবদিয়া ভুমি অফিসের তহশিলদার ছিলেন। তৎকালীন ইউএনও জাফর আলম মোটা অংকের টাকা দুর্নীতির মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহার করে জমাকৃত ৬৫ লাখ ৯৯ হাজার ২০০ টাকা আসামীদের পাওয়ার বন্দোবস্ত করেন। এতে কুতুবদিয়ার ৫০টি পরিবারসহ ৫০০ জন কৃষক আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখিন।

মামলার বাদি আবদুর রশিদ বলেন, ইউএনও জাফর আলমের যোগসাজসে রিসিভারের প্রায় ৬৬ লাখ টাকা লুটপাট হয়েছে। এরমধ্যে অর্ধেকের বেশি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন জাফর আলম।

বাদিপক্ষের আইনজীবি অ্যাডভোকেট নাছির উদ্দীন বলেন, কৃষকের প্রায় ৬৬ লাখ টাকা আত্মসাতের দায়ে সাবেক এডিসি জাফর আলমসহ ৬ ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুর্নীতিদমন প্রতিরোধ আইনে মামলাটি করা হয়েছে। বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ মামলাটি তদন্ত করে আগামী ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে দুদক ঢাকাকে নির্দেশ দিয়েছেন।

মহেশখালীর মাতারবাড়ীর তাপবিদুৎ প্রকল্পের প্রায় ২০ কোটি টাকা আত্মসাতের দায়ে কয়েক মাস আগে কক্সবাজারের সাবেক জেলা প্রশাসক মো. রুহুল আমিন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ( রাজস্ব) জাফর আলমসহ চার জনকে গ্রেপ্তার করে দুদক। বর্তমানে দুই সরকারি কর্মকর্তা কারাগারে বন্দিজীবন কাটাচ্ছেন।