আলমগীর মাহমুদ :
“রোয়াং রোয়াং
রোয়াং অর টিয়া বরুনা পান
তর মারে কইছ ন কাঁদ্দে পান।”১
সমৃদ্ধশালী ভূ গর্ভের বিলীন হওয়া দেশ আরাকান।পৃথিবীর মাটিতে আমেরিকার মতই ছিল তার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। ভাগ্যান্বেষণে মানুষ পাড়ি জমাত ঐশ্বর্যময় আরাকানে।এটি রোয়াং নামেও ছিল পরিচিত ।
এই সমৃদ্ধশালী দেশ কেমন ছিল উক্ত বচনে তার প্রকাশ।এমন একটি সমৃদ্ধশালী দেশে যাতায়তের পথ ছিল এই বালুখালী তম্ব্রু।
বালুখালী কাষ্টম অফিস এলাকাটি ছিল আমাদের প্রাচীন বাস স্টেশন। এরপর আর গাড়ী যোগাযোগের রাস্তা ছিল না।টেকনাফ থেকে নৌকা,সাম্পান, বোটে এসে বর্তমান বেতুয়াবাজারের ওখানে ছিল উখিয়ারঘাট। ওখানে নেমে বালুখালী কাষ্টম অফিস এলাকায় বাস স্টেশনে এসে উত্তরমুখী বড় শহর পানে যাত্রা করত।
টেকনাফ থেকে যেখানে নামার ঘাট ঐটা উখিয়ার ঘাট, অনেকের কাছে এটি’ বোটঘাড়া ‘নামেও ছিল পরিচিত।এই ঘাটে উইক্যচং নামের মগ সামন্ত নিয়ন্ত্রন, টোল আদায় করতেন বলে প্রচার আছে।তাঁর নামে এই ঘাটের নাম হয় উইক্যং ঘাট।কালক্রমে উইক্যং ঘাট উখিয়ারঘাট হিসাবে জরীপ বিভাগে নথিভুক্ত হয়ে পরিচিতি অর্জন করে উখিয়া।
সে সূত্রে থানার নাম উখিয়া হয় বলে প্রচার আছে।বালুখালী আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্যের সাথে বাঁধানো এমনই একটি নাম।এমনই জনগুরুত্বপূর্ণ এলাকা।
কালের বৈচিত্র্যতায় সে হারিয়েছে তার জৌলুষ মাখা অতীত।কালের ঘূর্ণায়নে রেলপথ তুম্বুরু জংশন হলে বালুখালী আবারও সেই গুরুত্ববহতা পাবে ফিরে।
বালুখালী বর্তমান ফালংখালী ইউনিয়নের। অতীতে বৃহত্তর রাজাপালং ইউনিয়নের অংশ ছিল এটি।তখন বৃটিশ শাসন। সেই বৃহত্তর রাজাপালং ইউনিয়নের নেতা,এবং ক্ষমতাধর ব্যক্তি ছিলেন মকবুল আহমদ সিকদার। তিনি মানবহিতৈষী হিসেবে মানুষের সুবিধার কথা চিন্তা করে বালুখালী বাজারটি প্রতিষ্টা করেন।
# বালুখালী বাজারের অবস্থান
পুরাতন কাষ্টম অফিস সংলগ্ন যে খালের অস্তিত্ব তার দক্ষিন পার্শ্বস্থ এলাকায় বর্তমান আরাকান রোডের পাশ্বেই ছিল বালুখালী বাজার।
# বালুখালী বাজার।
উখিয়া টেকনাফের মধ্যে এই বাজারের সুখ্যাতি ছিল কানায় কানায়। জমজমাট হাট বসত। দ্রব্য মিলবেই এমন আস্থায় পূর্ণ ছিল জনসাধারনের বিশ্বাস।
এমন বিশ্বাস এবং আস্থায় লালিত ছিল বলে, টেকনাফ সেন্টমার্টিন থেকেও লঞ্চযোগে জনসাধারন এই বালুখালী বাজারে সৌদায় আসত।
বাজারে এতই ভিড় থাকত, এক পার্শ্ব থেকে অন্য পার্শ্বে যেতে ১৫থেকে ২০ মিনিট সময় লেগে যেত।
# বালুখালী বাজারটির স্বরূপ
চাটগাঁর মানুষের কাছে এটি বাজার বলে পরিচিতি পেলেও মূলত এটি ছিল হাট।আমাদের চাটগাঁইয়াদের কাছে হাট ও লোকাল ভাষায় বাজার। তাই হাট শব্দটার ক্ষেত্রে বাজার ব্যবহৃত হয়েছে বারেবার।
এই হাট বসত সপ্তাহের..রোববার /বুধবার …………বারে।বেশী বিক্রি হতো চাল,কাপড়, পান,সুপারী, মাছ,হরেকরকমের কাঁচা তরিতরকারি। এই বাজারে চা,য়ের সুনাম ছিল।
আবদুল লতিফ মাষ্টারের হোটেল ছিল সুনামধন্য,প্রশংসিত। অধিকাংশ দোকানের মালীক ছিল’ চট্টগ্রাম সাতকানিয়ার অধিবাসী।
তথ্যদাতাদের মতে ১৯৯০-১৯৯১ সালে মায়ানমার থেকে রোহিঙ্গা রিফিউজি এই বালুখালীতে আগমন ঘটে।বাজারের পশ্চিম পার্শ্বে রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প স্থাপিত হয়।তখনও বাজার জমজমাট ছিল।
যে কেউ ছোট ছেলে নিয়ে বাজারে গেলে হারিয়ে যাবার শংকাবোধ করতো।
# বিলীনকাল
পরবতী কয়েকবছর পর রোহিঙ্গাদের পার্শ্ববর্তী এলাকা কুতু পালং নিয়ে যাওয়া হলে বালুখালি বাজারের ঝাকঝমকতা কমতে থাকে।
অন্যদিকে পার্শ্ববর্তী এলাকা ফালংখালী ও থাইংখালীতে জমজমাট স্টেশন গড়ে উঠায়,যোগাযোগ ব্যবস্থা সুবিধা হওয়ার কারণে বালুখালী বাজার শূণ্য হয়ে পড়ে।
১৯৯৫ ইং—-১৯৯৬ সালে বালুখালী বাজারের একেবারে বিলুপ্তি ঘটে।এই বাজারের কথা শুনলে এখন অবিশ্বাস্য রূপকথার কাহিনীর মতই মনে হয়।ভাবায়…….
তথ্যসূত্র :
১/প্রাক্তন ছাত্র মোহাম্মদ নুরুজ জলীল নোভেল এর মাধ্যমে ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমে এলাকার প্রবীণদের দেয়া তথ্যমতে।
২/ হাট কি বারে বসত তথ্যদাতা —-কামরুল হাসান শিমূল (কমেন্টের মাধ্যমে)
৩/এম,ডি রিদুয়ান—-রোববার/ বুধবার এই হাট বসত।(কমেন্টে)
লেখক:
উখিয়া কলেজের সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষক।
alamgir83cox@gmail.com
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।