তোফায়েল আহমদ
খন্দকার মোশতাকের কান্নায় সেদিন টুঙ্গিপাড়ার পরিবেশ ভারি হয়ে গিয়েছিল। কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে গড়াগড়িও খেয়েছিলেন। খন্দকার মোশতাকের কান্না দেখা গিয়েছিল সেদিন। তিনি কেঁদেছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রয়াত পিতার জন্য। এমনকি বঙ্গবন্ধুর পিতার লাশ যখন কবরস্থ করার জন্য নামানো হচ্ছিল তখন খন্দকার মোশতাকও শোকে-বিহ্বলে নেমে চীৎকার জুড়িয়ে দিয়েছিলেন কবরে।
এ সময় মোশতাক বলেছিলেন-আমার পিতা মারা গেছেন- আমি আর এ দুনিয়ায় থেকে লাভ কি ? আমাকেও পিতার সাথে মাটি চাপা দিয়ে দেন। মারা গেছেন-বঙ্গবন্ধুর পিতা আর কাঁদছেন খন্দকার মোশতাক। এ ঘটনার মাস কয়েক পরেই ঘটে ভয়াল পনের আগষ্টের বিয়োগান্তুক ঘটনা। সেই দৃশ্যপটে বাংলার আরেক মীরজাফর খন্দকার মোশতাকের কথা সবারই জানা।
সাবেক রাষ্ট্রপতি জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের মা মারা গেছেন। জাতীয় পার্টির নেতা এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর কাঁদছেনতো কাঁদছেন। এক পর্যায়ে খন্দকার মোশতাকের মত করে কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছিলেন। শেষ পর্যন্ত জেনারেল এরশাদ কান্না থামানোর জন্য কাজী জাফরকে বলছিলেন-‘জাফর সবারই মা এভাবে মারা যান। কেঁদে আর কি হবে।’ মা মারা গেছেন এরশাদের আর কাঁদছেন কাজী জাফর। সেই কাজী জাফরই কিনা নিজ হাতে অফিস থেকে এরশাদের ছবি নিয়ে বাথ রুমে ঢুকিয়ে রেখেছিলেন।
খন্দকার মোশতাক এবং কাজী জাফরের চেয়ে আরো এক ধাপ এগিয়ে গেলেন বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ওবায়েদ উল্লাহ সাজু। তিনি এক শিশুর হাতে অংকিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি নিয়ে মামলা ঠুকিয়ে দিয়েছেন বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং মুক্তিযোদ্ধা পুত্র গাজি তারিক সালমনের বিরুদ্ধে।
ওবায়েদ উল্লাহ সাজু বিএনপি থেকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারি হাইব্রীড বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানা গেছে। ওবায়েদ উল্লাহ সাজুর দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হচ্ছেন বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনা বলছেন-শিশুদের হাতে জাতির জনকের ছবি যত বেশী পারা যায় অংকন করতে। আর হাইব্রীড সাজু বঙ্গবন্ধুর জন্য বেশী কাঁদতে গিয়েই শিশুর ‘অংকিত ছবির’ অজুহাতে মামলা করে সারা দেশে তোলপাড় সৃষ্টি করেছেন।
বরিশালের এরকম সাজুর মত কত ‘হাইব্রীড সাজু’ কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ থেকে শুরু করে অঙ্গসংগটনের আশ্রয়ে ঢুকে পড়েছেন তার হিসাব মিলানু বেশ কষ্টসাধ্য বিষয়। যেমনি কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ড. মওলানা নুরুল আবছারকে নিয়েও এরকম নানা কথা রয়েছে। কথা উঠেছে, জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক খালেদ মোহাম্মদ মিথুনের ব্যাপারেও।
মিথুন চকরিয়া সন্ত্রাস, নাশকতা ও জঙ্গি প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সচিব এবং চকরিয়ার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযুক্ত আসামী প্রয়াত বদরুদ্দোজা চৌধুরী ওরফে বদর মিয়ার নাতি। এক সময়ের বিএনপি’র অঙ্গ সংগটন জেলা তরুন দলের শীর্ষ নেতা চকরিয়ার খলিল উল্লাহ চৌধুরীও বর্তমানে ক্ষমতাসীন দলের ক্ষমতাধর নেতা। এমনকি তিনি মাতামুহুরি সন্ত্রাস, নাশকতা ও জঙ্গি প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সচিব।
চকরিয়ার খুটাখালী বাজারে বিএনপি নেতা বাহাদুর হকের একটি নিজস্ব অফিস ছিল। সেই অফিসে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, তারেক জিয়া ও সাবেক মন্ত্রী সালাউদ্দিন আহমদের ছবি টাঙ্গানো ছিল। সেই অফিসটিতেই এখন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি। বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এই বিএনপি নেতা নৌকা মার্কার প্রার্থী হয়ে ধরাশায়ী হন। চকরিয়া সদরের শিবিরের এক সময়ের দুর্ধর্ষ ক্যাডার এখন স্বেচ্ছাসেবক লীগার।
মহেশখালীর গোরকঘাটার বাসিন্দা, জেলা আওয়ামী লীগ সদস্য ও মহেশখালী পৌর মেয়র মকসুদ মিয়া গত ২২ জুলাই টেকনাফে বলেন-‘ নূহ (আঃ)এর নৌকায় যিনি উঠেন নি- তিনি যেমনি ধ্বংস হয়েছেন, তেমনি আজকে যারা নৌকার সভায় আসেন নি তারাও ধ্বংস হয়ে যাবেন।’ মেয়র মকসুদ মিয়ার পরিচয় দেয়ার তেমন দরকার নেই।
বরিশালের সাজুর মত কক্সবাজারে এরকম ডজন ডজন সাজূ ঢুকে পড়েছেন দলে। উখিয়া-টেকনাফেতো ‘সাজুদের’ নিয়ে আলাদা গ্রুপের কথাই শুনা যায়। যার পরিণতিতে বিগত ইউপি নির্বাচনে জাতির জনকের দল আওয়ামী লীগ নেতাদের পরাজয় ঘটে। এমনকি উখিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের আসন্ন কমিটি গঠণের কথা চাওর হবার সাথে সাথে হরেক সাজু ছাত্রলীগের নেতৃত্বে ঢুকে পড়তেও ল্যাং মারতে শুরু করেছে।
উখিয়ায় জামায়াতের একজন ভয়ংকর ক্যাডার বর্তমানে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের ছত্রছায়ায় থেকে থানা-পুলিশে তদবির কার বিষয়টিও কারও অজানা থাকার কথা নয়। এই ক্যাডার বৌদ্ধ মন্দিরে আগুন দেওয়া সহ নাশকতার মামলা এবং আজীবন দন্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা মওলানা সাঈদীকে চাঁদে পাঠিয়ে মহাসড়কের গাছ কাটার মামলারও আসামী।
লেখক ঃ তোফায়েল আহমদ, সিনিয়র রিপোর্টার, দৈনিক কালের কন্ঠ ও আর্ন্তজাতিক সংবাদ সংস্থা বিবিসি ও এসোসিয়েটেড প্রেস-এপি’র ষ্ট্রিঙ্গার। ২৫-০৭-১৭ : tofayelcox@yahoo.com
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।