ইমাম খাইর, সিবিএন:
টানা বর্ষণে জেলার নিম্নাঞ্চল আবারো প্লাবিত হয়েছে। সদরের ঈদগাঁও এলাকায় প্রায় ১০০ মিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। চকরিয়া-মগনামা সড়কের প্রায় ২ কিলোমিটার পানিতে তলিয়ে গেছে। কক্সবাজার শহরসহ জেলার অধিকাংশ এলাকায় বিপদ সীমার উপরে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বেড়েছে বাঁকখালী ও মাতামুহুরী নদীতে। শহরের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়ীতে বৃষ্টির সাথে পাহাড়ী ঢলের পানি ঢুকে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সদরের পোকখালী, গোমাতলী, মহেশখালীর অধিকাংশ চিংড়িঘের ও পানের বরজ। এসব এলাকায় অন্তত ৩ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।এদিকে অবিরাম ভারি বর্ষণের কারণে কক্সবাজারে ভয়াবহ পাহাড় ধসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ঝুঁকি জেনেও পাহাড়ে বসবাসকারী অন্তত ৩ লাখ মানুষ নিজ গৃহ ছেড়ে যাচ্ছে না। প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিদিন মাইকিং করে সচেতনা সৃষ্টিসহ ঝুঁকিপূর্ণ বসতিগুলোয় অভিযান চালিয়ে উচ্ছেদ করার পরও তারা ফিরে গিয়ে নিশ্চিত মৃত্যুর কবলে পড়ছে। বুধবারও ভোর রাত ৪টার দিকে শহরের কলাতলীর লাইট হাউস এলাকা ও রামু উপজেলার মিঠাছড়ি ইউনিয়নের চেইন্দা এলাকায় দুই শিশুসহ মারা গেছে চার জন। এসময় আহত হয়েছে কমপক্ষে ১০ জন।
গত চার দিনের ভারি বর্ষণে চকরিয়া, পেকুয়া, রামু, কক্সবাজার সদর, উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন এলাকায় পাহাড়ি ঢলের পানি ঢুকেছে।
পানিবন্দি হয়ে পড়েছে জেলার নিম্নাঞ্চলের অন্তত ৩ লাখ মানুষ। অব্যাহত ভারি বর্ষণের কারণে সোমবার (২৪ জুলাই) থেকে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কটি পানিতে তলিয়ে গেছে। কক্সবাজার শহরে সঙ্গে উখিয়া ও টেকনাফের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
জানা গেছে, প্রায় দুই হাজার পাঁচশ কিলোমিটার আয়তনের কক্সবাজার জেলার একটি বড় অংশ জুড়েই রয়েছে ছোট বড় কয়েক হাজার পাহাড়। এসব পাহাড় কেটে বা পাহাড়ের পাদদেশে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে ৩ লাখ মানুষ। পাহাড় ধসে প্রাণহানির পাশাপাশি বহু ঘর-বাড়ি ভেঙে বিলিন হলেও এখনো একটি বিরাট অংশ ঝুঁকিপূর্ণভাবে পাহাড়ে বসবাস করছে। গত ৭ বছরে কক্সবাজারে পাহাড় ধসে মারা গেছে প্রায় ২২০ জন।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ একেএম নাজমুল হক জানান, গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালার কারণে বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দর সমুহকে ৩নং স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এসব উপকুলীয় এলাকার মাছ ধরার ট্রলার ও নৌযানগুলোকে উপকুলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
সোমবার দুপুর থেকে কক্সবাজারে থেমে থেমে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। গত ২৪ ঘটনায় শুধুমাত্র কক্সবাজারে ২০৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আরো বৃষ্টিপাত হবে এবং ভয়াবহ পাহাড় ধসের আশংকা রয়েছে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পঙ্কজ বড়ুয়া বলেন, সরে আসতে প্রতিদিন মাইকিংসহ নানাভাবে সতর্ক করা হচ্ছে। বেশ কয়েকবার উচ্ছেদও করা হয়েছে। অভিযান শেষে আমরা অফিসে চলে আসার সঙ্গে সঙ্গে তারা পাহাড়ে ফিরে যাচ্ছে। সতর্ক বার্তা না মানার কারণেই এসব দুর্ঘটনা ঘটেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সদরের ঈদগাঁও নদীর ওয়াপদার প্রায় ১০০ মিটার বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গিয়ে পোকখালীর আবুল ফজল পাড়াসহ বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে গেছে। ঈদগাঁও ফরাজী পাড়া, পোকখালী সড়কের পুর্বের নির্মিত বাঁশের সাকু পানির স্রোতে ভেসে গেছে। ইসলামাবাদের বাঁশ ঘাটার ঝুলন্ত ব্রীজটি যে কোন সময় ভেসে যেতে পারে।
ঈদগাঁও ইউনিয়নের বাঁশখাইল্লা বিলের পুর্বের ভাঙ্গন থেকে পানি ঢুকে বৃহত্তর ভোমরিয়াঘোনা, কানিয়াছড়া, পালপাড়া, শিয়াপাড়া, দরগাহপাড়া প্লাবিত হয়ে তিন মাইজপাড়াসহ চান্দেরঘোনা, কালিরছড়া, ভাদিতলা পানিতে ভাসছে। সড়ক উপ-সড়ক ভেঙে মানুষ চলাচল করতে পারছেনা।
পেকুয়ায় পাউবোর নিয়ন্ত্রনাধীন দুই পয়েন্টে বেড়িবাঁধ বিলীন হয়ে উজানটিয়া ইউনিয়নের পূর্ব উজানটিয়ার বিপুল এলাকা পানিতে প্লাবিত হয়েছে। মাতামুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলের পানির আঘাতে উজানটিয়া ইউনিয়নের পূর্ব উজানটিয়া গোদারপাড়া স্টেশনের অদূরবর্তী স্থানে দুটি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে।
উপজেলার ৯ টি ইউনিয়নে ব্যাপক জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। অব্যাহত বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলের পানিতে উপজেলার শিলখালী, বারবাকিয়া ও টইটং ইউনিয়নের বিপুল এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। পাহাড়ী ঢলের পানি উজানের দিকে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে মাতামুহুরী নদীসহ শাখা নদীগুলিতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে উপজেলার প্রধান সড়ক চকরিয়া-মগনামা সড়কের প্রায় ২ কিলোমিটার পানিতে তলিয়ে গেছে। চকরিয়া-পহরচান্দা সীমান্ত ব্রীজ থেকে শিলখালী ইউনিয়নের হাজিরঘোনা সালাহ উদ্দিন ব্রীজ পর্যন্ত সড়কটি পানিতে তলিয়ে যায়।
উজানটিয়া ইউনিয়নের বিপুল এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। বেড়িবাঁধ বিলীন হওয়ায় এ ইউনিয়নের শত শত বাড়িঘরে পানি ঢুকেছে। গ্রামীণ অবকাঠামো পানিতে তলিয়ে গেছে। গোদারপাড়ার সাথে সোনালী বাজারের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন রয়েছে। রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে গেছে। চিংড়ি ঘের ও মৎস্যখামার পানির তোড়ে ভেসে গেছে। ফসল ও বীজতলা পানিতে তলিয়ে গেছে।
সোমবার দুপুরে বেড়িবাঁধের ভাঙ্গন অংশ পরিদর্শন করতে গিয়ে দেখা গেছে কক্সবাজারের পানি উন্নয়ন বোর্ড নিয়ন্ত্রিত পূর্ব উজানটিয়ার গোদারপাড় এলাকায় পৃথক দুটি স্থানে প্রায় তিন চেইন বেড়িবাঁধ বিলীন হয়েছে। মাতামুহুরীর নদীর প্রচন্ড স্রোতের আঘাতে বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত হয়।
জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসাইন জানান, টানা বর্ষণের কারণে জেলা অধিকাংশ নিম্নাঞ্চল এখন পানিতে ডুবে গেছে। চারজনের মৃত্যুর ঘটনা সবাইকে উদ্বিগ্ন করেছে। তিনি জানান, যে জায়গায় পাহাড় ধ্বসে পড়েছে সেখানে আরো অন্তত ২০/৩০ টি পরিবার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তাদেরকে দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।