বাংলাট্রিবিউন:

সম্প্রতি আওয়ামী লীগের অতি উৎসাহী নেতাকর্মীদের হাতে সংঘটিত বেশ কিছু বিতর্কিত ঘটনায় বেকায়দায় পড়েছে ক্ষমতাসীন দলটি। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃতির অভিযোগে বরগুনার ইউএনও তারিক সালমনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা, শাহবাগে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে পুলিশের মারমুখী ভূমিকা ও তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী সিদ্দিকুর রহমানের দৃষ্টি হারানোর পর আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড়া উঠেছে সবচেয়ে বিশ। এজন্য দল ও সরকারের ভেতরে থাকা অতি উৎসাহীদের দায়ী করছেন আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তাদের মতে, এগুলো দলের ভেতরে অনুপ্রবেশের কুফল। দলের ভেতরে যেমন অনুপ্রবেশকারীতে ঠাসা, তেমনি সরকারের ভেতরেও বিভিন্ন পদে সুযোগ সন্ধানীরা ভরা। এ কারণেই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাও ঘটছে।

এ প্রসঙ্গে সরকারের দুই জন মন্ত্রী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা আরও ঘটাতে সরকার ও দলের ভেতরে বিভিন্ন জায়গায় অতি উৎসাহী মহল ঘাপটি মেরে বসে আছে। এর উদ্দেশ্য, আগামী নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগকে কিছু বিতর্কিত ঘটনার মুখোমুখি করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলা।’ ওই দুই মন্ত্রী আরও জানান, ‘এ ধরনের গোয়েন্দা তথ্য সরকারের উচ্চ পর্যায়ে রয়েছে।’

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এক মন্ত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সুযোগ সন্ধানীরা শুধু দলের ভেতরেই যে ঘাপটি মেরে বসে আছেন, তা নয়; সরকারের ভেতরেও তাদের অস্তিত্ব আছে। বিভিন্ন সময়ে এই অতি উৎসাহীরা যেমন বিতর্কিত পদক্ষেপ নিয়ে সরকারকে সমালোচনার মুখোমুখি দাঁড় করাচ্ছেন, তেমনি দলের ভেতরেও তারা কাজ করছেন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে।’

এরই উদাহরণ হিসেবে এই মন্ত্রী বলেন, ‘বরিশালের ইউএনওকে নাজেহালের ঘটনায় যে আইনজীবী মামলা করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন, তিনিও অতি উৎসাহীদের একজন।’ তিনি বলেন, ‘এই মন্তব্য স্বয়ং আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজের।’

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ক্ষমতা থাকলে দল ও সরকারের সুবিধাভোগী মহল জায়গা করে নেয়। আর এই মহলটি প্রকৃত নেতাকর্মীর চেয়ে যেকোনও কিছুতেই বেশি উৎসাহী হয়ে ওঠেন। যাদের অতি উৎসাহী বলা হয়। এই অংশ তৈরি হয় ক্ষমতাকে ঘিরে। এই গ্রুপের কাজই হলো অনেক ছোটখাটো বিষয়কে বড় করে দেখিয়ে ফায়দা হাসিল করা।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান বলেন, ‘অতি উৎসাহী হোক আর যাই হোক, ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তিনি বলেন, ‘বরিশালের ইউএনওর ঘটনায় আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। শিক্ষার্থীর ওপর হামলার ঘটনায়ও তদন্ত কমিটি হয়েছে। তদন্তে তথ্য বের হয়ে এলে অতি উৎসাহীরা চিহ্নিত হবেন। তাদের শাস্তির আওতায় আসতে হবে।’ এসব বিষয় নিয়ে সরকার অনেক বেশি সতর্ক বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

এর আগে শুক্রবার (২১ জুলাই) আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ডের সভায় দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুপ্রবেশকারীদের তালিকা করতে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বৈঠকে উপস্থিত একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা। তারা জানান, ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘অনুপ্রবেশকারীরা অতি উৎসাহী হয়ে ছোট-ছোট অনেক বিষয়কে বড় করে দলের নেতাদের চেয়ে বেশি এগিয়ে আসবেন। একটি অঘটন ঘটিয়ে দল ও সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করবেন। তাই অনুপ্রবেশকারীদের ব্যাপারে আগে সতর্ক হতে হবে। ’

ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা মনে করেন, ‘এসব ঘটনা হঠাৎ করেই বেড়ে যাচ্ছে। এর পেছনে আগামী নির্বাচন একটি উদ্দেশ্য হতে পারে। এগুলো ঘটিয়ে সরকার ও আওয়ামী লীগকে সমালোচনার মুখোমুখি করে দলের জনপ্রিয়তায় ধস নামানোর চক্রান্তে লিপ্ত অনুপ্রবেশকারীরা।’