শাহেদ মিজান, সিবিএন:
অর্ধমাস না পেরোতেই জেলায় ফের বন্যার পদধ্বনি দেখা দিয়েছে। টানা প্রবল বৃষ্টির কারণে পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির পানি জমে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এরই মধ্যে চকরিয়া, রামু, পেকুয়াসহ এলাকায় বন্যার উপক্রম দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে অনেক বসতবাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনা পানির নিচে ডুবে গেছে। ভেঙে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। এতে অনেক মানুষ ফের দুর্ভোগের মুখে পড়েছে। তাদের মধ্যে বাসস্থান, খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে ফের ভয়াবহ বন্যা সৃষ্টি হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় রোববার থেকে চকরিয়া উপজেলা ও পৌরসভার বেশির ভাগ নীচু এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। মাতামুহুরী নদীতে ফের পাহাড়ি ঢলের পানি বেড়ে তা বিভিন্নভাবে ঢুকে পড়ে লোকালয় প্লাবিত হয়েছে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকায় চকরিয়ায় আবারও বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্লাবিত হওয়ায় উপজেলার ও পৌরসভার নিমাঞ্চলে মানুষেলর জনদুর্ভোগ বেড়েছে।
জনপ্রতিনিধিদের দেয়া তথ্য মতে, রোববার সকাল থেকে ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকার কারনে মাতামুহুরী নদীতে উজান থেকে আবারও পাহাড়ি ঢলের পানি নামতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে কয়েকটি স্থান দিয়ে পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে। বর্ষণ অব্যাহত থাকলে মারাত্মকভাবে পানি ঢুকে উপজেলায় ফের ভয়াবহ বন্যা সৃষ্টি হবে।
অতিবৃষ্টির ফলে সাগরের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জোয়ারের পানিতে ঢুকে কক্সবাজার সদর উপজেলার পোকখালী ইউনিয়নের গোমাতলী ফের তলিয়ে গেছে। রবিবার-সোমবার প্রবল জোয়ারের পানিতে উত্তর-পূর্ব-পশ্চিম গোমাতলীর বিভিন্ন এলাকার ২শতাধিক বসত বাড়ি প্লাবিত হয়েছে। অথৈই পানিতে তলিয়ে গেছে চিংড়ি ঘের, ফসলের ক্ষেত, বসতবাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও চলাচল রাস্তা। অন্যদিকে অতিবৃষ্টির পানি জমে ঈদগাঁও, পিএমখালী, ঝিংলজাসহ আরো কয়েকটি ইউনিয়নের বিভিন্ন নিচু এলাকা ডুবে রয়েছে। এতে লোকজন চরম দুর্ভোগে পড়েছে। ঈদগাঁও বাজারে হাঁটু সমান পানি জমে জনচলাচলে চরম দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে।
প্রবল বর্ষণে মহেশখালীতে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে কাঁচা বাড়ীঘর ও ফসলি জমি। টানা ৩ দিনের ভারী বর্ষণে মহেশখালী উপজেলার পৌরসভাসহ ৮ ইউনিয়নে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। রাস্তা ঘাট ভেঙ্গে গিয়ে খন্ড খন্ড ভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে সড়ক যোগাযোগ। বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে ৩ দিন ধরে। পাহাড়ী ঢলের তোড়ে ছরার বাঁধ ভেঙ্গে গিয়ে ফসলী জমি ও বীজতলার ক্ষতি সাধিত হয়েছে।
জানা যায়, টানা বৃষ্টিতে উপজেলার পৌরসভা, কুতুবজোম, ঘটিভাংগা, ছোট মহেশখালী, বড় মহেশখালী শাপলাপুর, মাতারবাড়ী, হোয়ানক ও ধলঘাটার নিচু এলাকায় প্লাবিত হয়েছে। মাতারবাড়ী-চালিয়াতলী সড়কের মধ্যবর্তী স্থানে ভেঙ্গে গিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে পুরো মাতারবাড়ী ইউনিয়নের মানুষ।
টানা প্রবল বৃষ্টিতে মাতামুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলের পানির আঘাতে উজানটিয়া ইউনিয়নের পূর্ব উজানটিয়া গোদারপাড়া ষ্টেশনের অদূরবর্তী স্থানে দুটি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ বিলীন হয়ে গেছে। ২৪ জুলাই দুপুরে গোদারপাড় কমিউনিটি ক্লিনিক সংলগ্ন স্থানে মাতামুহুরী নদী পয়েন্টে পৃথক বেড়িবাঁধের দুটি পয়েন্ট বিলীন হয়। বেড়িবাঁধের ভাঙন অংশ দিয়ে মাতামুহুরী নদীর পানি সরাসরি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। এতে করে সোমবার দুপুর থেকে এই ইউনিয়নের পূর্ব উজানটিয়ার সুতাচোরা, গোদারপাড়া, দক্ষিন সুন্দরীপাড়া, নুরীর পাড়া, রুপালীবাজার পাড়া, দক্ষিন সুতাচুরা, মালেকপাড়া, ঠান্ডার পাড়া, আতরআলী পাড়াসহ বিপুল এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়াও বৃষ্টির পানিতে জমাট হয়ে পেকুয়ার নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার ৯ টি ইউনিয়নে ব্যাপক জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এতে ঘরবাড়িসহ রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠাান পানিতে তলিয়ে গেছে। চিংড়ি ঘের ও মৎস্যখামার পানির তোড়ে ভেসে গেছে। ফসল ও বীজতলা পানিতে তলিয়ে গেছে।
প্রবল বর্ষণে রামু উপজেলায়ও নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পাহাড়ি ঢলে পানি বাঁকখালী নদীর বিপদ সীমা করে গত বন্যায় ভেঙে যাওয়া বাঁধের অংশ দিয়ে ঢুকে নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে রাজারকুল, ফতেখাঁরকুল, কাওয়ারখোপ ও দক্ষিণমিঠাছড়ি ইউনিয়নের সব নিচু এলাকা পানিতে ডুবে রয়েছে। এতে ঘরবাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনা পানিতে ডুবে গেছে।
কক্সবাজার আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়া কর্মকর্তা নাজমুল হক বলেন, ‘সোমবার সকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৪৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বৃষ্টি আরো দু’য়েক দিন বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, টানা বৃষ্টিতে জেলার চকরিয়াসহ আরো দু’য়েকটি উপজেলার বিভিন্ন এলাকা আবারো পানিতে তলিয়ে গেছে। তবে তা এখন পর্যন্ত সহনীয় পর্যায়ে। তারপরও প্রশাসন সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখছে। অবস্থা খারাপ হলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।’