ডেস্ক নিউজ:
কথায় বলে মরার উপর খাঁড়ার গা। তারপরও প্রাণ বাঁচাতে না দিয়ে উপায় নেই। আর সেই সুযোগে পেট মোটা করছেন অসাধু কর্মকর্তা। ঘটনাটি ঘটেছে রোহিঙ্গাদের মধ্যে বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির ত্রান বিতরণে।
জানা গেছে, উখিয়া ও টেকনাফের নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত রোহিঙ্গাদের মধ্যে বিভিন্ন দাতা সংস্থার দেয়া ত্রান বিতরণ করে বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি। এসব ত্রাণ বিতরণ করে কক্সবাজার ইউনিট কার্যালয়ের প্রকল্প সমন্বয়ক সেলিম আহমেদ। ত্রাণ বিতরণের তিনটি প্রকল্পে হরিলুট করার অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। সেলিম আহমদের দুর্নীতিতে সদর দপ্তরের রিলিফ বিভাগের পরিচালক নাজমুল আজম খানের জড়িত থাকারও অভিযোগ উঠেছে। এঘটনায় জেলা ইউনিট থেকে ইতোমধ্যে সদর দপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করা হয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে মুসলিম রোহিঙ্গাদের উপর সেই দেশের সেনাবাহিনীর ভয়াবহ নির্যাতনের কারণে দলে দলে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে এসে উখিয়ার কুতুপালং, বালুখালী, টেকনাফের লেদা নয়াপাড়া এলাকায় আশ্রয় নেয়। মিয়ানমার সরকারের নির্যাতন শিকার হয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণ সামগ্রি ‘ফুড ফ্রুটিলা’ পাঠায় মালয়েশিয়া। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে সেই ফুড ফ্রুটিলা বিতরণের দায়িত্ব দেওয়া হয় বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিকে। ওই ফুড ফ্রুটিলা প্রোগ্রামে ৪৭৫ টন খাদ্য সামগ্রি ছিল। প্রতিটি প্যাকেটে চাল, ডাল, তেলসহ ৩৫ ধরণের খাদ্য সামগ্রি ছিল। সেগুলোর ১৫ হাজার ২৫০ টি প্যাকেট করা হয়। পরে সেগুলো প্রতি পরিবারে একটি করে প্যাকেট বিতরণ করা হয়। প্যাকেট বিতরণ আগে তালিকা করার সময় প্রতি পরিবারে একটি করে কার্ড দেওয়া হয়। ওই সময় প্রতি কার্ডে ১ হাজার টাকা করে আদায় করা হয়। সম্পূর্ণ বিনামূল্যে বিতরণের জন্য দেওয়া হলেও প্যাকেট প্রতি রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে ১ হাজার টাকা করে আদায় করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে খোদ জেলা ইউনিটের ম্যানেজিং কমিটি।
জানা গেছে, বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির রোহিঙ্গাদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম দেখাশুনা করেন কক্সবাজার জেলা ইউনিটের ডাইজেস্টার রেসপন্স প্রোগ্রামের সমন্বয়ক সেলিম আহমেদ। সেলিম আহমেদ বিনামূল্যের ফুড ফ্রুটিলা প্রোগ্রামে ১৫২৫০ রোহিঙ্গা পরিবারের কাছ থেকে ১ কোটি সাড়ে ৫২ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। ওই টাকার সরাসরি ভাগ নিয়েছেন বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি সদর দপ্তরের রিলিফ বিভাগের পরিচালক নাজমুল আজম খান। একারণে ওই দুর্নীতির বিষয়ে অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার আসেনি।
সূত্রমতে, এমআরআরও প্রকল্পে কুতুপালং ক্যাম্পের নিবন্ধিত ৬ হাজার ৫০০ রোহিঙ্গা পরিবারকে ত্রাণ সামগ্রি দেওয়া হয়। এই ননফুড প্রকল্পের ৬ হাজার ৫০০ উপকারভোগি পরিবারের কাছ থেকেও আদায় করা হয়েছে ১ হাজার টাকা করে। সেখানে সেলিম আহমেদ দুর্নীতির মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন ৬৫ লাখ টাকা। এই প্রকল্পটি বর্তমানেও চলমান। এছাড়াও পপুলেশন মুভমেন্ট প্রোগ্রামে ৫হাজার রোহিঙ্গা পরিবারকে খাদ্য সামগ্রির প্যাকেট দেওয়া হয়। সেখানে প্রতি প্যাকেটে সাড়ে ৬ হাজার টাকার খাদ্য সামগ্রি ছিল। সেখানেও প্যাকেট প্রতি ১হাজার টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছে সেলিম আহমেদ। পপুলেশন মুভমেন্ট প্রোগ্রাম থেকে সেলিম সিন্ডিকেট লুটে নিয়েছেন প্রায় ৫০ লাখ টাকা। যদিও এসব প্রকল্পের ত্রান গুলো বিনামূল্যে দেওয়ার কথা। এভাবেই রোহিঙ্গাদের ত্রাণের প্রতিটি প্রকল্প থেকে সেলিম সিন্ডিকেট হাতিয়ে নেয় লাখ লাখ টাকা।
জানা গেছে, বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির (বিডিআরসি) দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা সেলিম আহমেদ দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে কক্সবাজার ইউনিটে কর্মরত রয়েছেন। স্বাভাবিকভাবে একটি ইউনিটে ৫ বছরের বেশি সময় থাকার নিয়ম না থাকলেও ২৭ বছর ধরে বহাল রয়েছেন সেলিম আহমেদ। দীর্ঘ এই সময়ে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার মালিক বনেছেন তিনি। তাকে সরাসরি সহযোগিতা করেন সদর দপ্তরের রিলিফ বিভাগের পরিচালক নাজমুল আজম খান। একারণে বহুবার অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার আসেনি।
এবিষয়ে জানতে চাইলে সেলিম আহমেদ বলেন, ফুড ফ্রুটিলা প্রোগ্রামের খাদ্য সামগ্রি বিতরণ ও তালিকা করার সময় প্রশাসন ও আরসিওয়াই কর্মীরা ছিল। কার্ডের বিনিময়ে টাকা নেওয়ার অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সদর দপ্তরের রিলিফ বিভাগের পরিচালক নাজমুল আজম খানের বক্তব্য নেওয়ার জন্য একাধিকবার মোবাইলে চেষ্টা করলেও রিসিভ না করায় তার পাওয়া যায়নি।
— দৈনিক সকালের কক্সবাজার
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।