সংবাদদাতা :
হঠাৎ স্ট্রোক করে মারা গেলেন কক্সবাজার শহর সমাজসেবা কার্যালয়ের কর্মকর্তা কুমকুম আচার্য্য । কুমকুম আচার্য্যের পরিবারের দাবী, শহর সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক ফরিদুল আলমের মারাত্মক মানসিক টর্চারে স্ট্রোক করেছেন তিনি৷ এঘটনায় এডি ফরিদুল আলমের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছে তাঁর পরিবার৷ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নিহত কুমকুম আচার্য্যের বড় ছেলে শাওন আচার্য্য৷
সূত্র মতে, গত শুক্রবার সকালে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে মারা যায় শহর সমাজসেবা কর্মকর্তা কুমকুম আচার্য্য৷ এর আগে তিনি হঠাৎ স্ট্রোক করে হাসপাতালে ভর্তি হন । কুমকুম আচার্য্যের অনাকাঙ্খিত মৃত্যুর পর পরিবারের পক্ষ থেকে দাবী করা হয়, তাকে দীর্ঘদিন ধরে মানসিকভাবে টর্চার করছে কক্সবাজার শহর সমাজসেবা অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক ফরিদুল আলম৷ মানসিক টর্চার সহ্য করতে না পেরে স্ট্রোক করে মারা গেছে কুমকুম আচার্য্য৷
কুমকুম আচার্য্যের বড় ছেলে শাওন আচার্য্য অভিযোগ করে বলেন, তাঁর মা (কুমকুম আচার্য্য) ছিলেন শহর সমাজ সেবা প্রকল্প পরিষদের কর্মকর্তা৷ সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে গরীব-দুস্থ মানুষকে বিনাসুদে ঋণ দেওয়া হয়৷ ওই ঋণ কার্যক্রম দেখাশুনা করে তাঁর৷ গত সমাজসেবা দিবসে তাঁর মায়ের কাছ থেকে সরকারি ঋণ ফান্ড থেকে ত্রিশ হাজার টাকা ধার নেন সহকারি পরিচালক ফরিদুল আলম৷ ২/৩ দিনের মধ্যে পরিশোধের কথা বললেও আজ দেবে কাল দেবে কালক্ষেপন করে ফরিদুল আলম৷ এক পর্যায়ে বিরক্ত হয়ে দেড়মাস পর ধারের ওই টাকা পরিশোধ করেন ফরিদুল আলম৷ সেই টাকা পরিশোধ করার পর থেকেই তাঁর মায়ের উপর ক্ষেপে যান তিনি৷ এরপর থেকে এডি ফরিদুল আলম কারণে-অকারণে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেয় তাঁর মাকে৷ নানাভাবে মানসিক নির্যাতন শুরু করে৷ অফিসে পৌছতে সামান্য দেরি হলেও জুনিয়র কর্মচারিদের সামনে নাজেহাল করে তাঁর মাকে৷ একটানা মানসিক অত্যাচারে শারীরিকভাবে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে কুমকুম আচার্য্য৷
শাওন বলেন, মাস দেড়েক আগে সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মকভাবে আহত হন তাঁর মা৷ ওই সময় হাসপাতাল থেকে একজন বাহকের মাধ্যমে অফিসকে বিষয়টি অবগত করেন তাঁর মা৷ কিন্তু ছুটি নামঞ্জুর করে কেন অফিসে উপস্থিত হবে না মর্মে শোকজ করে৷ তাঁর মায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালককে পর্যন্ত সুপারিশ করেন একাধিকবার৷
তিনি বলেন, এডি ফরিদুল আলমের মানসিক অত্যাচারে তাঁর মা গত বেশ কিছুদিন ধরে মানসিকভাবে ভারসান্যহীন হয়ে পড়ে৷ প্রায় সময় অসুস্থ হয়ে পড়ত৷ কিন্তু কোন অবস্থাতেই ফরিদুল আলম তার আচরণ পরিবর্তন করেনি৷ মাকে নিয়ে আমরা পরিবারের সবাই দুশ্চিন্তা শুরু করি৷ এক পর্যায়ে সিনিয়র কর্মকর্তা, প্রকল্প পরিচালক থেকে শুরু করে এমনকি মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনের এমপি আশেক উল্লাহ রফিককেও বিষয়টি জানানো হয়৷ একবার এমপি মহোদয় তাঁর মাকে আর মানসিক অত্যাচার না করার জন্য ওই ফরিদুল আলমকে নিষেধ করে৷ কিন্তু তারপরেও সেটি তিনি কানে নেননি৷ মানসিক অত্যাচারের মাত্রা আরো বাড়তে থাকে৷ কিছুদিনের ব্যবধানে বিনা অপরাধে তাঁর মাকে আট বার শোকজ করে৷ ফরিদুল আলমের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে গত ২/৩ তিন আগে তাঁর মা স্ট্রোক করে হাসপাতালে ভর্তি হয়৷ গতকাল শুক্রবার সকালে হাসপাতালে মৃত্যু বরণ করে৷ এরজন্য একমাত্র ফরিদুল আলমকেই দায়ী করছেন তারা৷ তার বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান৷
শাওন বলেন, স্ট্রোক করে হাসপাতালে ভর্তি হলে সেখানেও শোকজ নোটিশ করে৷ মৃত্যুর সময় হাসপাতালের বেডের মধ্যে শোকজ নোটিশের ফাইল ছিল৷
এদিকে অভিযুক্ত সহকারি পরিচালক ফরিদুল আলমের কাছে জানতে চাইলে তিনি টাকা ধার নেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, আমি সিনিয়র কর্মকর্তা, তাকে শোকজ করে দায়িত্ব পালন করেছি৷
এবিষয়ে শহর সমাজসেবা প্রকল্প পরিষদের সভাপতি শিক্ষাবিদ সিরাজুল ইসলাম বলেন, কুমকুম আচার্য্যকে মানসিক নির্যাতনের কথা শুনেছি৷ তাঁর পরিবারকে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি৷
এদিকে কুমকুম আচার্য্যের ছেলে শাওন আচার্য্যের অভিযোগটি আমলে নিয়ে দীপক কুমার সিংহ নামে এক উপপরিদর্শককে বিষয়টি তদন্তের জন্য দায়িত্ব দিয়েছেন বলে জানান সদর মডেল থানার ওসি রনজিত কুমার বড়–য়া৷
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।