তানভিরুল মিরাজ রিপন
১)
পেশা যখন চার দেওয়ালের ভেতর বন্দী করা নয়,একজন বক্তা হিশেবে আমার অসংখ্য স্থানে যেতে হয়।যেমন অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর অবধি আমি ৮০ টির বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়েছি।সেই সুবাধে অসংখ্য মানুষের সাথে কথা বলতে হয়।তাদের সাথে মিশে গিয়ে তাদের ভেতরের আকাঙ্ক্ষা শুনি।আমি সবসময় বলি এবং বিশ্বাস সহ অনুধাবন করি “একজন মানুষের দেহ নয়,পোশাক নয়,স্বপ্ন এবং খুব ইচ্ছা এবং পরিশ্রম বলে দিবে কতটুকুন উচুতে মানুষটি যাবে।”একটি মানুষের কাছের কেউ হতে চাইলে সে মানুষটির ভেতরের ইচ্ছা,স্বপ্ন শুনতে হবে।কি হতে চায়?কি হবে?এটির মাধ্যমে নিজে কতটুকুন উপকৃত হবে?এটিকি সে তার পছন্দমত বেচে নিয়েছে?সে এই পেশা দিয়ে দেশকে কি উপহার দিবে?দেশের প্রতিজন জনগনই একটি দেশের নির্মাতা।অর্থনৈতিক যোগানদাতা, অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে সবাই “কর/ভ্যাট” প্রদান করে থাকে।আমরা প্রতিজনই কোন সন্দেহ ছাড়ায় এই রাষ্ট্রের নির্মাতা।
২)
এই পৃথিবী আলোকিত হয়েছে সব অসামাজিক বিপ্লবের মাধ্যমে।যেসব ঘটনা পৃথিবী আলোকিত হওয়ার জন্য দৃষ্টান্ত হয়েছে সবকটি অসামাজিক হিশেবে চিহ্নিত হয়েছে।
“হযরত মহম্মদ সাঃ এর কথা বলা যায়,উঁনি যদি তৎকালীন সমাজের বিরোধিতা না করতেন তাহলে সেসময়ের আরব সমাজের বর্বরতা কখনো কমে আসতো না,অথবা কন্য সন্তান হত্যা করে ফেলার রীতিটা থেকে যেতো,তখন তিঁনি ঐ সময়ের সমাজের বিরোধিতা করেছেন বলে শক্ত হাতে,এবং বদলানোর কঠিনতর চেষ্টা করেছেন বলেই সেটি বদলাতে পেরেছেন।”যদি বিজ্ঞানি গ্যালিলিও কখনে আবিষ্কার না করতেন”পৃথিবীই সূর্যের চারদিকে ঘুরে”বলে বিবৃতি না দিতেন তাহলে আজো কেউ সাহস করতো না আমরা এখনো সেই ভুলে থেকে যেতাম।রাজা রামমোহন রায় যদি সতীদাহপ্রথা রহিত করার জন্য সমাজ বিরোধীতা না করতেন তাহলে আজো নারীদের সতীত্বের পরীক্ষা দিতে হতো।বেগম রোকেয়া যদি বাংলার রক্ষনশীল সমাজের বিরোধীতা না করতেন তাহলে আজো নারীদের হয়তো শিক্ষিত হওয়া বারন থাকতো।
৩)
যে সমাজের লোকেরা একজন ক্ষুধার্ত নারীকে শরীরের বদলে ভাত দেয়, সেই সমাজে পতিতাবৃত্তি কোনভাবে পাপ নয়,কারন তাকেওতো বাঁচতে হবে।যে সমাজের লোক একটি। পাঁচ বছরের শিশুকে যৌনতার তৃপ্তি কমাতে গোপনাঙ্গ ব্লেইড দিয়ে কেটে বীর্যপাত করে যৌনতার স্বাদ নিতে পারে। যে সমাজের লোকেরা গরীবের লাশ দেখলে বলে “দেশে কি লাশের অভাব পড়ছে?কম টাকা দিয়ে লাশ এ্যাম্বুলেন্সে করে পৌছিয়ে দিতে হবে?যে সমাজের লোক একজন নারীকে পালাক্রমে ধর্ষন করে,মা মেয়েকে একসাথে ধর্ষন করতে পারে।সেই সমাজই আমাকে, আপনাকে,আমাদের সকলকে আজীবন সৎ ও মানবিক মানুষ হবার শিক্ষা দিয়ে আসছে।সেই একই সমাজের লোকেরা আপনার ব্যর্থতা ক্ষুধার্থ কুকুর হয়ে রুটি ছিড়ে খাওয়ার মতোন ব্যবচ্ছেদ করে।সেই সমাজের লোকেরা আপনাকে বড় বড় স্বপ্নও দেখাবে ওরাও দেখবেও।
একটা বিশ্ববিদ্যালয় বা মেডিকেল আপনাকে কি দেবে?একটা সার্টিফিকেট, খুব জোর জীবন যুদ্ধের কিছু মন্ত্র তন্ত্র।কিন্তু,কখনো একটা জীবন দিবেনা।জীবন কেউ কাউকে দিতে পারে না,দেইও না।আমি স্বয়ং দেখেছি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এর সেরা ছাত্রটি বেকারত্বের কারনে হাত পেতে পেতে টাকা জোগাড় করে জীবন চালাচ্ছে।কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বা মেডিকেল আমার ভবিষ্যৎ দেবে না।দেবে কয়েকটা সার্টিফিকেট।
৪)
জীবনে কে বলেছে বারবার সুযোগ আসে না?প্রতিটি নিঃশ্বাসই সুযোগ,প্রতিটি দিনই সুযোগ।বেচে থাকাটায় সবচেয়ে বড় সুযোগ।আমার বেচে থাকতে কেনো মৃত্যুর স্বপ্ন দেখতে হবে?আমি আমাকে বাঁচাবো,দৈহিক মৃত্যু, সূর্য উঠা,সূর্য ডুবে যাওয়া এসব পৃথিবীর চিরন্তন নিয়ম এসব থাকবেই।আমার চাওয়া দেশের নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়া বা ওখানের শিক্ষার্থীদের একজন হওয়া।এটি চাওয়া মাত্র,চাওয়ারা কখনো জীবনের নিঃশ্বাস,বাচার তাগিদ,বা বাঁচার অবলম্বন হতে পারে না।আমি এ+ পেলাম না,তাই বুয়েট, ঢাবি,চুয়েট,চবি,মেডেকেল বা অন্যান্য নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় এর ভর্তি হতে পারলাম না।এর জন্য এই সমাজের অন্ধরা আমাকে মূল্য দেবেনা,এই সমাজ ব্যর্থদের হজম করে না,সফলদের আত্মীয় হতে চাই সবাই।কিন্তু প্রতিটি বছর এতো এতো ছাত্র ছাত্রী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এ প্রবেশ করে,তারা কি সবাই সফল?
৫)
যে সমাজ বুটজুতোর তলায় শিশু পিষে,সেই সমাজ আমাকে লাঞ্চিত করবে।তাদের কাছে সুন্দর কিছু আশা করা যাবে?আর।আমি সবসময় ব্যক্তিগত চেয়েছি আমার স্বপ্নকে প্রাধান্য দিতে,কারন আমার বিশ্বাস হয় আমি আমার স্বপ্নের পথে সফল হবো।সফল যেকোন পথে হওয়া যায়।এক স্কুলে বক্তৃতাকালে প্রশ্ন পর্বে, ছোটজন প্রশ্ন করলো-আপনাকে যদি দেশের সর্বোচ্চ একটি পদের জন্য স্বীকৃতি দিলো কিন্তু আপনি কি তা নিতে অস্বীকার করবেন?উত্তর করেছি আমি, গ্র্যাজুয়েশন কোন বিষয়ই নয়,আমার সনদ বা স্বীকৃতিও কোন বিষয় নয়।আমি কতটুকু নিজের জীবনকে আলাদা ভাবে প্রভাবিত করে সবার দৃষ্টি বদলাতে পারলাম?জীবন একটাই এবং সেটা সম্পূর্ন উপভোগ করতে হবে।”হেরে যাওয়ার পরও ইচ্ছারা মরে যায় না,ইচ্ছেরা মৃত্যুর সময় পর্যন্তও যেনো হতাশ না করে সেটিই মূলত খেয়াল করার বিষয়।”
“এ+ বা ভাল ফলাফল অথবা,পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আপনার চাওয়া হতে পারে চাওয়ারা অসংখ্য পাওনার ভিঁড়ে তলিয়ে যায়।
ভিন্ন কিছুই দৃষ্টান্ত হয়,স্বাভাবিক জলে গা ভাসিয়ে কি হয়েছে সমাজের, দেশের?
পৃথিবীতে আজ যা ঘটছে তা স্বাভাবিক আগামীকাল যা ঘটবে তা নতুন।নতুনকে উপভোগ করে বেচে থাকা দরকার আমাদের।
পৃথিবীতে এমনকিছু না ঘটবে বলে কোথাও বলা,ও লেখা নেই।গোটা দুনিয়ার একশো নম্বর বা তার নিচের একটি প্রতিষ্ঠান আপনাকে অযোগ্য ঘোষনা করেছে, এবং সেখানে পড়ার অনুমতি দেয়নি,সে আপনিই দুনিয়ার এক নম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন এ দাড়িয়ে আলোর পথের খুজ দিচ্ছেন।বিষয়টা অসম্ভব নয় একেবারেই নয়।
আশারা মরে যায় না,ইচ্ছারাও না।এসব জীবনের নিঃশ্বাসও বটে,বদলে যেকোন সময় যাওয়া যায়,সে আঠেরোতে হোক অথবা একশো কুড়িতে হোক।
বেচে আছি এটিই জীবনের সবচেয়ে বড় এবং প্রাচীন সুযোগ।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।