বিশ্বজিত সেন:
বৃষ্টি আসলে হৃদয় জাগে। প্রকৃতি সুষমায় সবুজ কথা মালায় জীবন এগিয়ে যায়। শ্রাবণে জল-পূর্ণিমার প্লাবন ডাকে, কিন্তু শব্দের বেদনা মেঘবাতির সলতে উসকে দিয়ে প্রাণের শক্তি বাঁচিয়ে রাখে। মানুষ এক সময় না ফেরার দেশে চলে যায়। তারপরেও মানুষ ফিরে ফিরে আসে কর্মে, সুনামে, সৃজনী মৃত্যুঞ্জয়ী শব্দে। অভিমান থাকে, দ্রোহ থাকে, ভালোবাসার শব্দমালা কদম ফুলের রেনু মেখে প্রকৃত পক্ষে মানুষই অবিনশ্বর। যার জন্য পৃথিবীর সমস্ত নির্মাণের কৃতি শ্রমিক আমাদের আশেপাশের মানুষ। যাঁরা এক এক জন হুমায়ূন আহমেদ বা অন্য কোন সৃজনশীল দ্যুতিমান ব্যক্তি হিসেবে এই জনারণ্যে সব সময় বেঁচে থাকে।

হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুদিনটা অন্যরকম, যেন কোথায় কারো আপনজন চলে গেছে দরজার ওপারে, মনে হয় কিছুক্ষণ পর আবার ফিরে আসবে। এই চাতক প্রতিক্ষায় সময়টা বয়ে যায়, ফিরে আসেনা মানুষ, আবার জেগে থাকে মানুষ। এইভাবে দিনপঞ্জির পাতায় ফিরে আসে ১৯ জুলাই, হুমায়ূন স্যারের ৫ম মৃত্যুবার্ষিকীর ব্যথিত দিন। সাথে সাথে ঝরে পড়ে শব্দ কফিনে ভালোবাসার শোকাশ্রু।

হুমায়ূন আহমেদ ড. জাফর ইকবাল আহসান হাবীব- এবং তাদের তিন বোন, সবাই মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। বাবা পুলিশ অফিসার ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলেন। আর ফিরে আসেননি! কষ্টের আর লাশের স্মৃতি নিয়ে এই পরিবারের বেড়ে ওঠা। মহান মুক্তিযুদ্ধের পর শহীদ পরিবারের সন্তান হিসেবে ঢাকাতে একটি বাড়ি বরাদ্দ পেয়েছিলেন। কিন্তু একদিন সে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল ঢাকার রাজপথে। মুক্তবুদ্ধির কৃতি লেখক চিন্তাবিদ মরহুম আহমদ ছফা নিজের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেবার ঘোষণা এবং ঢাকার সুধী মহলের তৎপরতায় আবারো গৃহবাসী হন হুমায়ূন পরিবার। তখন থেকেই হুমায়ূন আহমেদ পরিবারের সাথে সাহিত্যিক আহমদ ছফার অন্য ধরনের সম্পর্ক হয়ে যায়।

সময়টা আশির দশকের মাঝামাঝি হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে ঘুরে ঘুরে শাহবাগ মোড়ের চায়ের দোকানের দিকে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ একটি চায়ের দোকান থেকে শব্দ ভেসে ভেসে আসলো, এই কক্সবাজারের বিশ্বজিত, এই দিকে এসো এবং হ্যা হ্যা করে হাসির শব্দ। একটি দোকান পার হতেই আরেকটি কুলিং কর্নারের মতো চায়ের দোকানে সাহিত্যিক আহমদ ছফা বসে চুটিয়ে আড্ডা মেরে চা পান করছেন। তার পাশে হুমায়ূন আহমেদসহ আরো কয়েকজন বসে মৃদু হেসে হেসে ছফা ভাইয়ের প্রাণময় কথা আর রসিকতা উপভোগ করছেন। প্রিয় ছফা ভাইকে আদাব জানাতেই উপস্থিত সবাইকে বললেন বিশ্বজিত আমাদের দৈর্য্যা কুইল্যা মানুষ, অগ্নিযুগের কৃতি বিপ্লবী মানুষের সন্তান এবং লিখিয়ে। সে সময় হুমায়ূন আহমেদ লেখক হিসেবে নাম করে উঠছিলেন, সেজন্য চিনতে জানতে অসুবিধা হয়নি।

পরিচয় হয়ে হুমায়ূন আহমদের পাশে বসলাম। তাঁর সাথে কথা বলার চাইতে সবার দৃষ্টি কিন্তু আহমদ ছফার দিকে। ছফা ভাইয়ের সপ্রাণ দিলখোলা হাসি আর রসিকতার মধ্যে কিন্তু হুমায়ূন আহমেদও যথারীতি প্রবেশ করেছেন। দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি এপার বাংলা ওপার বাংলার সাহিত্য আন্তর্জাতিক পরিসর থেকে শুরু করে একেবারে প্রান্তিক বাংলার খবরাখবর কিছুই বাদ যায়নি। তার ফাঁকে ফাঁকে হুমায়ূন আহমেদ আমার ব্যক্তিগত পরিচিতি, বাবার সংগ্রামী জীবন, মাস্টারদা সূর্য সেন, মুক্তিযুদ্ধের কথা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বহমান সংগ্রামের দীপ্ততার বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ করে যাচ্ছেন। আমিও সোৎসাহে হুমায়ূন ভাই এবং ছফা ভাইয়ের সাথে কথার মধ্যে ঢুকে পড়েছি। অনিঃশেষ কথাবার্তার মধ্যে অপরাহ্ণ গড়িয়ে যেতে আড্ডা ভাঙার সময় হলো। আমিও যাবার জন্য যথারীতি আদাব সালাম জানাতেই হুমায়ূন আহমদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের ল্যান্ড টেলিফোনের নাম্বার দিলেন এবং বললেন টেলিফোন করে যেন রসায়ন বিভাগে সরাসরি চলে আসি। তিনি একই সাথে জানালেন মাস্টারদা সূর্য সেন তাঁদের গৌরব এবং সাহসের অহমিকা। ঐ বংশের সন্তান হিসেবে আমাদের প্রতি তাঁর প্রচ্ছন্ন স্নেহ ভালোবাসা সবসময় থাকবে। প্রথম পরিচয় সূত্রে হুমায়ূন আহমেদকে ভাই হিসেবে সম্বোধন করলেও তাকে সবসময় আমি হুমায়ূন ভাই এবং স্যার বলেই সম্বোধন করে চলতাম। যেটা সবসময় বজায় থেকেছে।

হুমায়ূন আহমেদ বাস্তব এবং কল্পলোকের এক সার্থক অভিযাত্রী। বিজ্ঞান, মধ্যবিত্তের সামাজিক জীবন এবং যন্ত্রণা, প্রকৃতির নান্দনিক সৌন্দর্য, মেঘ বৃষ্টি জোসনা রাতের গান, ভোরের শিশির, সবুজ দুর্বাঘাস, প্রাত্যহিক জীবনে মানুষের পরিবর্তনের কথাগুলো তার নাটক, সাহিত্য বা যেকোন রূপকল্প রচনায় এনেছেন। তবে এসবের মধ্যে হুমায়ূন আহমেদের সবচাইতে স্পষ্ট উচ্চারণ ছিলো ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ। পিতা হারানো, স্বজন হারানোসহ লক্ষ শহীদের ঘুমিয়ে যাওয়া মুখ, মা-বোনের আব্রু হারানোর বেদনা, একটি জাতির রুখে উঠা সংগ্রামী জীবনের বাঙালি মননকে তিনি সবসময় লেখায় উপজীব্য করেছেন। একজন বিজ্ঞানী হয়েও তিনি হিমু মিসির আলী চরিত্রের অতিপ্রাকৃত সংস্কৃতিও তাঁর সাহিত্যের মধ্যে প্রবেশ করিয়েছেন। স্বপ্ন এবং কল্পলোকের রঙরেখার পারদর্শী বহুমাত্রিক সৃজনশীল কর্মকান্ড হুমায়ূন আহমেদের কাঁধে ভর করেছিল। মানুষের মানস লোকে বইসহ অন্যান্য কাজগুলো মনে হয় এসবের মধ্যে সবাই জড়িত হয়ে আছে। একজন কিশোর থেকে শুরু করে বয়োবৃদ্ধ মানুষও মনে করে হুমায়ূন আহমেদের বই, নাটক চলচ্চিত্রের বিভিন্ন চরিত্রের মধ্যে কোননা কোন জায়গায় তার জীবনের সাথে মিল রয়েছে। এ ধরনের কাজ হচ্ছে হুমায়ূন ভাইয়ের অনন্য সৃষ্টিশীল পরিব্যাপ্তি।

হুমায়ূন স্যারের কাজের মধ্যে দেখা যায় মনের গভীরের অন্তজ শব্দের নিত্য প্রতিধ্বনি। ঘরের যে কিশোর বা তরুণটা হুমায়ূন আহমদের বই কিনেছে বা পড়েছে, সেই বইটা ঘরের প্রায় সদস্য কোন না কোনভাবে পড়ে ফেলে। বই পড়ার সৃষ্টিশীল আনন্দের প্রতিধ্বনি বহুধ্বনি হয়ে নিনাদে পরিণত হয়েছে। বাঙালি পাঠকের সংখ্যা লেখক নির্ভর হয়ে বিশাল সংখ্যায় যে উন্নীত হতে পারে সেটা হুমায়ূন আহমেদ প্রমাণ করেছেন। একজন পাঠককে তিনি বহুজন পাঠকের অনুভূতির মধ্যে প্রবেশ করিয়েছেন। এটাই লেখক হুমায়ূন আহমেদের কালের মহৎ শব্দ অভিযাত্রা এবং সফলতা।

হুমায়ূন আজাদ এবং হুমায়ূন আহমেদ এই দুই সাহিত্যিকের ঘনিষ্ঠ সাহচর্য বিভিন্ন সময়ে পেয়েছি। দু’জন দুই ধারার লেখক হলেও মুক্তিযুদ্ধ-মুক্তবুদ্ধি এবং দেশের মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা তাদেরকে সবসময় দায়িত্বশীল করে রেখেছিলো। জাতির সংকটময় সময়ে তারা তাঁদের লেখনীতে যথারীতি জেগে ওঠার জেগে থাকার বিষয়গুলোকে স্পষ্ট করে উচ্চারণ করতেন। দু’জনেরই অসময়ে চলে যাওয়া মানে আমাদের শুধু সাহিত্যের ক্ষতি হলো না, সময়ের সাহসী পরিক্রমায় ঘুরে দাঁড়ানোর উদ্যমী স্বপ্নগুলো ছাড়িয়ে দেওয়ার মানুষের সংখ্যাও কমে গেলো। সাহিত্য পরিক্রমায় তাঁদের শূন্যতার রেশ কাটতে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে বহুদিন… অনেক দিন…।

হুমায়ূন আহমেদের সাথে দ্বিতীয় পরিচয় ঘটেছিলো মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার লে. কর্নেল বীরউত্তম আবু তাহেরের মা আশরাফুন্নেসার মাধ্যমে। হুমায়ূন আহমেদ তার প্রথম চলচ্চিত্রের বই আগুনের পরশমনি উৎসর্গ করেছিলেন মুক্তিযোদ্ধা জননী আশরাফুন্নেসাকে। কর্নেল তাহেরের ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন বিভাগের শিক্ষক এক সময়ের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আনোয়ার হোসেনের সাথে আমার ঘনিষ্ঠ পরিচয় আছে। সে সূত্রে কর্নেল তাহেরের মা ভাই বোন সন্তান কক্সবাজারে আসলে তারা যথারীতি আমাদের বাসায় চলে আসতো। কর্নেল তাহের, ড. আনোয়ার হোসেনসহ তাঁদের সতীর্থরা মাস্টারদা সূর্য সেনের ভাবশিষ্য এবং মুক্তিযোদ্ধা হওয়াতে আমাদের সাথে সম্পর্কটা অনেকটা পারিবারিক হয়ে পড়ে। আবার হুমায়ূন আহমেদের বন্ধু ঢাকা মেডিকেল কলেজের নিউক্লিয়ার মেডিসিনের প্রাক্তন অধ্যাপক ডা. করিমের সাথে আমাদের পরিবারের যোগাযোগ থাকায় হুমায়ূন আহমেদ সেক্ষেত্রেও অতি পরিচিত হয়ে উঠেন।

সম্ভবত ১৯৯৫ সালের দিকে একদিন সন্ধ্যায় দেখি হুমায়ূন আহমেদ তাঁর দলবলসহ আমাদের বাসায় এসে হাজির। তিনি ঢুকেই আমার মাকে প্রণাম করে কুশল বিনিময় করলেন সবার সাথে। বৈঠকখানায় বসে আমরাসহ অন্যান্যদের সাথে চুটিয়ে আড্ডা দেওয়া শুরু হলো। এরই মাঝে বললেন আজকে এখানে খাওয়া-দাওয়া করবো। আমরাও আর দেরী করিনি, বাসায় যেটা ছিলো সেটা দিয়ে ভাতের ব্যবস্থা শুরু করলাম। হুমায়ূন ভাই শুধু বৈঠকখানায় বসে রইলেননা। সারা বাড়ি ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলেন, কখনো রান্নাঘরে, কখনো মোড়া নিয়ে উঠানে বসে এবং ঘুরে ফিরে সবার সাথে কথা বললেন। এক পর্যায়ে তিনি বললেন আজকে আমার পরম আনন্দের দিন, এই বাড়িতে মাস্টারদা সূর্য সেনের সহযোদ্ধা অগ্নিযুগের বিপ্লবী পুরুষ এডভোকেট সুরেশ চন্দ্র সেন বসবাস করতেন। মুক্তিযুদ্ধের দগদগে স্মৃতি এই বাড়িতে আছে, এর চাইতে ভালো দিন আমার কিইবা হতে পারে! তিনি আমার বাবার কাজের সংগ্রামের স্মৃতির কথা আমাদের থেকে শুনলেন। তিনি জানালেন মাস্টারদা সূর্য সেনকে নিয়ে একটি উপন্যাস লেখা, চলচ্চিত্র বা নাটক করার তার ইচ্ছে আছে। সময় সুযোগ ঘটলে সেটা তিনি করবেন। সেদিনের সন্ধ্যাটা ছিলো খুবই আনন্দঘন। আমাদের মা ভাইবোনসহ পরিবারের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে মিশে গিয়েছিলেন হুমায়ূন আহমেদ।

রাত দশটার দিকে ভাত খেয়ে বিদায় নেওয়ার সময় হুমায়ূন স্যারকে বিনীতভাবে জানালাম আমার ছোট বোন গোপা সেনের শিশু মেয়ের নামকরণের জন্য! তিনি আমাদের বাসার সামনে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে চিন্তা করে শিশু ভাগ্নীর নামকরণ করলেন “অহর্র্ণা”। পরবর্তীতে অহর্ণা সেন নামে সে এখন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং-এ পড়ালেখা করে বের হয়ে এসেছে এবং সিঁথিতে সিঁদুর দিয়ে বউ হয়ে গেছে। হুমায়ূন আহমেদের সেদিনের কয়েক ঘণ্টার স্মৃতি এখনো আমাদের কাছে চির জাজ্বল্যমান হয়ে আছে।

হুমায়ূন আহমেদের সাথে স্মৃতির অনেক ভেলা আছে। বাংলা একাডেমীর বই মেলা, বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র, শাহবাগ মোড়, ঢাকা-চট্টগ্রামের বিভিন্ন অনুষ্ঠান, কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতসহ নানান দর্শনীয় এবং কর্মকান্ডের স্থানে হুমায়ূন ভাইয়ের সাথে দেখা হয়েছে কথা হয়েছে। গাজীপুরে, রাজেন্দ্রপুরে বিভিন্ন কাজে যাওয়া হলেও নুহাশ পল্লীতে কোনদিন যাওয়া হয়নি। হুমায়ূন আহমেদের অকাল মৃত্যুতে নুহাশ পল্লী এখন জীবন্ত হয়ে উঠেছে সবার মনে।

হুমায়ূন আহমেদ তাঁর কর্মসৃজনে এক আকর্ষণীয় চরিত্র। ব্যর্থতার চাইতে সাফল্যের বরমাল্য তার মুকুটে বারবার উঠেছে। হুমায়ূন আহমেদ যেখানেই হাত রেখেছেন সেখানেই সোনা ফলিয়েছেন। ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে পিতাকে হারানোর পর পরিবার-পরিজনকে দিয়ে দারিদ্র্যময় জীবনের যাতনাও ভোগ করেছেন বেশিভাবে। নিজের স্বনিষ্ঠ কর্মপন্থা এবং মেধা যোগ্যতায় ভাগ্যের বরপুত্রের আসনে সমাসীন হয়েছিলেন পরবর্তী জীবনে।

নন্দিত নরকে, শঙ্খনীল কারাগার থেকে শুরু করে তিনি তিন শতাধিক বই লিখেছেন। একই সাথে নাটক সিনেমাসহ নানান সৃজনশীল কাজ করেছেন। এসবের প্রায়ই দর্শক নন্দিত জনবন্দিত হয়েছে। দেশে বিদেশে জনপ্রিয়তার পুরস্কার পেয়েছেন ভালোভাবেই। তারপরও একজন আকণ্ঠ সৃজনশীল মানুষ হিসেবে মনের ভেতর কিছু কিছু শূন্যতাও ছিল। মহান মুক্তিযুদ্ধ তাঁর ভেতরের আত্মশক্তি, অনুপ্রেরণাকে ধাবিত করেছে প্রতিদিন। ’৭১ এর প্রতিশ্রুত কথামালার রাষ্ট্রীয় বৈপরীত্য তাঁর ভেতরে রক্তক্ষরণ করেছে সবসময়। তারপরও মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণায় সবসময় বহমান ছিলো হুমায়ুন স্যারের কর্ম ও জীবন। মুক্তিযুদ্ধের বিশাল ক্যানভাসে আগুনের পরশমণি, জ্যোৎস্না ও জননীর গল্প, মুক্তিযুদ্ধ ’৭১-এর সাথে অন্যকিছুর তুলনা না চললেও জীবনের সংবেদনশীল বিষয়সমূহকে তাঁর কাজের মধ্যে ধারণ করাতে তিনি সামনের কাতারে থেকেছেন সবসময়। যার জন্য হুমায়ূন আহমদ বরাবরের মতো জনপ্রিয়তার মধ্যমণি হয়ে সাম্প্রতিক সময়ে জীবনের ইতি ঘটিয়েছেন।

হুমায়ূন আহমেদÑআকাশ কালো করে বৃষ্টি আসে শ্রাবণ ধারার অঝোর বর্ষণে, শরতের শিউলী ফুটবে আনমনে, শীতের বিকেলে সন্ধ্যার রুপরাগ হয়ে ভোরের শিশির ঝরবে শ্যামল মৃত্তিকায়। বসন্তের মহুয়া রাতে পূর্ণিমার আলোর ধবল জ্যোৎস্নায় ভরে যাবে পৃথিবীর অঙ্গন। এসবের মঞ্জরীতে হুমায়ূন আহমেদ কাব্য এবং সৃজনশীল সুষমায় জেগে থাকবেন অনেক দিন অনেক বছর। মৃত্যুহীন বাহু ডোরে বাঁধা এই জীবন কি শেষ হতে পারে! সবকিছুকে ছাড়িয়ে শ্রদ্ধা ভালোবাসায় স্যালিউটস টু ইউ প্রিয় হুমায়ূন স্যার-প্রিয় হুমায়ূন ভাই!

লেখক- সাংবাদিক, গবেষক, পরিবেশবিদ
Email-senbishawjit@yahoo.com