– আলমগীর মাহমুদ
আলম চৌধুরী। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক।পরিচিতির পরিসরে অধ্যাপক পদবী না বলেও,আলম চৌধুরী বললেই সবাই একনামে চেনেন।
উনি এমন একজন, যাকে বাড়তি কোন মাল মসল্লা মিশিয়ে কারো রসনায় যোগাতে হয় না বাড়তি ফুয়াদ। নিজেই প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যে বৈশিষ্ট্যমন্ডিত।এনালগ জমানায় নিখাদ ভালবাসার ধারকবাহক।ডিজিটাল জমানার ভালবাসার মানুষ হবার নেই কোন বাড়তি চাহিদাও।
জন্মশহর কক্সবাজারের রামু উপজেলার প্রাচীন জনপদ দারিয়ার দীঘি, খুনিয়া পালং। উখিয়া উপজেলার ফলিয়াপাড়া, নানা বাড়িতেই শৈশব,কৈশোর।ত্হশীলদার জাহেদ,চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর, বেড়ে উঠার সাথী,বাল্যবন্ধু।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে সর্বোচ্চ নং পেয়ে ফাষ্টক্লাস অর্জনের রেকর্ড উনার দখলে ছিল।আমার সাথে সখ্যতা কানায় কানায়।কবি সিরাজের সাথে আরো একধাপ উপরে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে খিছুড়ি আলাপে ছিলাম মত্ত ।সেই আলাপে আলম চৌধুরীর জীবন সত্যের বয়ানই আমার উপস্থাপনায়।
ছাত্রজীবনে, চৌধুরী সাহেবের বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠীদের এক বন্ধু ছিল তুখোড় মেধাবী। ক্লাসের সবাই জটিল বিষয়ের পাঠ, ওর কাছেই নিত বুঝে ।সবাইকে সে বিষয় বিশেষজ্ঞের মতো দিতো তালিম ।
পরীক্ষার পর রেজাল বেরুলে, তালিকায় থার্ডক্লাস এর ঘরেই থাকত ওর নাম। একজনই আছে এই ফর্দে, আর সবাই সেকেন্ড,ফাষ্টক্লাস ঘরে।সবাই অবাক হয়ে ভাবত, আমাদের সবাইর চেয়ে যে বেশী জানার মানুষ তার কেমনে হয়, এই রেজাল?
বন্ধুরা কেউ মানতেই পারত না।মধ্যে মধ্যে অনেকের ভাবনায়,’ভূল হল নাতো!
মেধাবীজন, অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পরিসংখ্যান বিষয়টা সব বন্ধুদের বেইছে বেইছে, তালিমে তালিমে, পোষিয়ে দিত।আলম চৌধুরী ও অন্য বন্ধুদের সাথে উনার পরিসংখ্যানের তালিমখানায় একজন ছিলেন।
বরাবরের মত এবারও পরীক্ষার রেজাল বেরুয়,এবারও সে থার্ডক্লাশ এর ঘরে। আলম চৌধুরী ফাষ্টক্লাস ,আরো অবাক করা বিষয়, যে সব বন্ধুরা পড়েছে, সবাইর নীচের মার্কটাই উনার।সবাই তাজ্জব বনে।এ কেমন কান্ড?
আলোচনায় ঝড় উঠে,সাথে আঁকা বাঁকা চিন্তাও বন্ধুদের মনে।সবাই মিলে একদিন কৌতুহল মেঠাতে উনার রোমে হাজির।অনেক কথা,প্রশ্ন।
উনি কিছুই বলছেন না।শেষমেশ বন্ধুরা যখন নাছোড়বান্দা, বলতে বাধ্য হয়ে । সবাই বস,আমি বলি….
একদিন আমি চ,বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পথে নাজিরহাটের বাসের প্যাসেঞ্জার ছিলাম।সিটেই ছিলাম বসা।গাড়ী চৌধুরী হাট পৌঁছে প্যাসেঞ্জার নামাচ্ছিল,এইফঁাকে আমি নীচে নেমে একটা চিপস নিয়ে গাড়ীতে উঠতে,উঠতেই দেখি আমার সিটে
একজন বয়স্কলোক বসে আছে।
দাড়ি,কোর্তা পরা,মাথায় টুপি,পরনে লুঙ্গি,আমি উঠেই চাটগাঁইয়া ভাষায় ধমকের সুরে, বেয়াড়া ভাষায়,কৈফিয়ত তলবে জানতে চাইলাম,’সিট দেইলে জোয়ানক্কি রাইত ন পারদেনে,ব অই গিয়গৈদে।’১
লোকটির কোন সাড়া শব্দ নেই, এক পলকেই আমার দিকে আছে তাকিয়ে.. ।ভাবলাম এই লোকতো সীট না ছাড়ার কৌশল নিয়েছে,তাকেতো তুলতেই হবে,আমিও নিলাম সীট ছাড়ানোর কৌশল,শেষ বাক্য… সীট ছাড়বা? না আমাকে ছাড়িয়ে নিতে হবে? কোনটা?
আমার অবস্থা দেখে লোকটি বড় করে ‘এই কন্ট্রাক্টার গাড়ী থিয়া গরা,আঁরে নামাইদে,আঁই তর গারিত গরি আর ন জাইয়ুম,২
গাড়ী ব্রেককরে। লোকটি সিট থেকে তাড়াহুড়ো করে নামতে নামতে, বলে বলে,যায়…
“অউড়া বইবার লায় যেন গরর, এবার বয়,ভালা গরি বয়,আজ্জু পুরাই বয়,আঁরা জীবন বঅই থাকিবিদে,ন থিয়াইবি,ন থিয়াইবি,ন থিয়াইবি”।৩
এই ঘটনার পর থেকে,পরীক্ষার হলে বসলে আমার হাতটা সীলের ভারীর আবহে আর পারি না লিখতে, যতদূর লিখি তাও অনেক কষ্টে।
জানা প্রশ্ন লিখার সময় পাই না।৪৫/৫০উত্তর লিখার আগেই সময় শেষ, হাতের ভারী ঝিম,ঝিম একটা যন্ত্রনায় অস্থির করে,পরীক্ষার হল থেকে বেরুবার সাথে সাথে সব স্বাভাবিক…
দুখ,সুখে মিলায়ে সবাইরে কয়,”আমার মত কেউ কোনদিন ভূল
করিস না,
ভুল করলে বুঝবি,
তোরাও..
কি যে যন্ত্রনা।
পাদটীকা:—
১/সিট দেখে যৌবনের ঠেলা রাখতে না পেরেই বসে গেছেন, না?
২/এই হেল্পপার গাড়ী দাঁড় করা,আমারে নামিয়ে দে,আমি তোর গাড়ীতে আর যাব না।
৩/অউড়া–চাটগাঁইয়া সন্মোধন, বসার জন্য যেরকম করতেছিস,এবার বস,ভাল করে বস,খায়েশ পুরা করে বস,সারাজীবন বসেই থাকবি,দাঁড়াবি না,দাঁড়াবি না,দাঁড়াবি না।
লেখক:-উখিয়া কলেজের সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষক।
alamgir83cox@gmail.com
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।