পূর্বপশ্চিমবিডি:
ছাত্রলীগের সেই নেতারা কোথাও কেউ নেই! যারা দলের দুঃসময়ে আন্দোলন সংগ্রামে অগ্রভাগে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের বড় একটি অংশের ভাগ্যে না ঘটেছে এমপি মনোনয়ন, না জুটেছে আওয়ামী লীগে পদ পদবী। তাদের অনেকেই হতাশ। তাদের সমসাময়িক যারা বিএনপির রাজনীতি করেছেন তারা সেখানে পদপদবীই নয় এমপি মন্ত্রীও হয়েছেন।

১৯৭৮ সাল থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন বাহালুল মজনুন চুন্নু। বর্তমানে আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদে না থাকলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট নির্বাচনে আওয়ামী প্যানেলের নির্বাচনী দেখভালের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু সমাজকল্যাণ পরিষদের চেয়ারম্যান তিনি।

১৯৮১ সাল থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত ছাত্রলীগের সভাপতি হন ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস করা মোস্তফা জামাল চিকৎসকদের সংগঠন বিএমএ’র ৩ বারের নির্বাচিত সেক্রেটারি। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে লালবাগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও দশম নির্বাচনে সাবেক সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের কাছে হেরে যান। বর্তমানে তিনি তিনি চিকিৎসকদের পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

তার সময় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন আ খ ম জাহাঙ্গীর। দলের কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদে নেই তিনি। বর্তমানে ব্যবসায়ী। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পটুয়াখালী থেকে সংসদ সদস্য হওয়ার আগেও একাধিকবার সংসদ সদস্য হয়েছেন।

১৯৮৫ সাল থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতির পদে ছিলেন সুলতান মুহাম্মদ মনসুর আহমেদ। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে তিনিই প্রথম ভিপি নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনে তিনি নিজ এলাকা মৌলভীবাজার-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সর্বশেষ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। বর্তমানে তিনি আওয়ামী লীগের কোনো পদে নেই।

শফী আহমেদ, ৯০ দশকের ছাত্র আন্দোলনের এক উজ্জল নাম। স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করা এই নেতা নিরাবরণ, সাদামাঠা জীবনযাপনেই অভ্যস্ত। তবে সেনাশাসক এরশাদ ও পরবর্তীতে এরশাদ জামানায় তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে উঠেন এবং ৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে উঠে আসেন আওয়ামী লীগের সক্রিয় রাজনীতিতে। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির উপকমিটির সহ-সম্পাদক ছিলেন। বর্তমান কমিটিতে কোনো পদ পাননি। তবে নেত্রকোণার মোহনগঞ্জ, খালিয়াজুরি, মদন থেকে আগামী সংসদ নির্বাচনের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

ছাত্রলীগের সাবেক কার্যকরী সভাপতি শাহে আলমও দলে কোনো পদ পাননি। তিনি আগের কমিটির উপকমিটির সহ-সম্পাদক ছিলেন। নব্বইয়ের গণ-আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক, বরিশাল জেলার বানারীপাড়ার-উজিরপুরের গনমানুষের রাজনীতিক প্রাণ, সৎ, ত্যাগী, নির্ভীক রাজপথের লড়াকু নেতা শাহে আলম এলাকায় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

১৯৯২ থেকে ১৯৯৪ পর্যন্ত এই সংগঠনের সভাপতির ছিলেন মাঈনুদ্দিন হাসান চৌধুরী। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশুনা করা নেতার পৈতৃক নিবাস চট্টগ্রামের সাতকানিয়া। রাজনীতিতে থাকলেও তেমন সরব নন। নেই কোনও গুরুত্বপূর্ণ পদেও। তবে এবার নির্বাচন করা প্রস্তুতি নিচ্ছেন বেশ জোরেশোরেই।

১৯৯৪ থেকে ১৯৯৮ পর্যন্ত ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদকের পদে ছিলেন ইসহাক আলী পান্না। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক ছিলেন তিনি। এ ছাড়া একটি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির চেয়ারম্যানের পদে রয়েছেন তিনি। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করেছেন।

এরপর ১৯৯৮ থেকে ২০০২ পর্যন্ত ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতির পদে ছিলেন বাহাদুর বেপারি। সর্বশেষ কমিটিতে আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক ছিলেন। তিনি পাওয়ার প্ল্যান্ট ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এ ছাড়া একজন টক-শো ব্যক্তিত্ব হিসাবে রয়েছে তার পরিচিতি। তার পৈতৃক নিবাস শরীয়তপুর। বাহাদুর বেপারির সময় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন অজয় কর খোকন। তিনিও আওয়ামী লীগের উপ কমিটির সহ-সম্পাদক ছিলেন। দশম সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন চেয়েও পাননি তিনি। পরে স্বতন্ত্র হয়ে নির্বাচনে দাঁড়ালে নির্বাচন কমিশন তার মনোনয়নপত্র বাতিল করে দেয়। তারা দুজনই একাদশ জাতীয় নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পাওয়ার দৌঁড়ে রয়েছেন।

২০০২ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতির পদে ছিলেন লিয়াকত শিকদার। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক। রাজনীতির পাশাপাশি তিনি একজন ব্যবসায়ী। যুবলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের হাই কমান্ডের সবুজ সংকেত না পাওয়ায় ব্যবসায় মনোযোগী হয়েছেন এবং ছাত্রলীগের অনেক কিছুই দেখাশুনা করার চেষ্টা করেন।

২০০৬ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন মাহমুদ হাসান রিপন। একই সময়ে সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন। তারা দুজনই আওয়ামী লীগের উপকমিটির সহ-সম্পাদক ছিলেন। গাইবান্ধা থেকে মাহমুদ হাসান খান দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন চাইলেও পাননি। একাদশ জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বেশ জোরেশোরেই।

২০১১ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন বদিউজ্জামান সোহাগ। সোহাগের সভাপতি থাকাকালীন সাধারণ সম্পাদকের পদে ছিলেন সিদ্দিকী নাজমুল আলম। তারা দুজন এখনও দলের ভাল পদে আসতে পারেননি। প্রায় দুই বছর ধরে সিদ্দিকী নাজমুল আলম দেশের বাইরে রয়েছেন।