পেকুয়া সংবাদদাতা:
পেকুয়ায় অন্ত:স্বত্ত্বা গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ১১ জুলাই ভোররাতে উপজেলার সদর ইউনিয়নের মিয়াপাড়া এলাকায় হরিমন্দির সংলগ্ন স্থানে হত্যাকান্ডের এ ঘটনা ঘটে। তাকে প্রথমে পেকুয়া নুর ডায়গনস্টিক ক্লিনিকে ভর্তি করে। তার অবস্থা অবনতি হলে তাকে চট্রগ্রাম সিএমএইচ এ ভর্তি করে। সেখানে মৃত্যু হয়েছে বলে শশুর বাড়ির লোকজন জানায়। নিহত ওই গৃহবধূর নাম রভারানী শীল(২৫)। তিনি মিয়াপাড়া এলাকার আশিষ কুমার সুশীলের স্ত্রী বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে ওই মহিলার বাবা বনমালী শীল বাদী হয়ে দুপুরে পেকুয়া থানায় রভারানী শীলের স্বামীসহ ৯ জনকে বিবাদী করে লিখিত এজাহার দায়ের করে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ওই মহিলার লাশ সিএমএইচএ রক্ষিত রয়েছে বলে জানা গেছে। পেকুয়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ওই গৃহবধূ ৭ মাসের অন্ত:স্বত্ত্বা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে ওই গৃহবধূর মৃত্যু নিয়ে পরষ্পর বিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। পিত্রালয়ের দাবী স্বামীর সাথে রভারানী শীলের কলহ রয়েছে। বিবাহের পর থেকে দাম্পত্য জীবনে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বনিবনা চলছিল। গত তিন বছর ধরে পিতার বাড়ির সাথে ওই মহিলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় স্বামী। ওই দিন তাকে ঘাতক স্বামী হত্যা করেছে বলে রভারানী শীলের পিতা দাবী করেছে। অপরদিকে রভারানী শীলের শাশুড়, ননদ, জাঁ ও শাশুড়ী জানিয়েছেন, তাদের পুত্রবধূ রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। স্বামীর আর্তচিৎকারে তারা বাড়ির দ্বিতীয় তলায় যান। এ সময় রুমের ভিতরে বাথরুমের দরজার সামনে তাকে পড়ে থাকতে দেখেন। তার মুখে ফেনা আসছিল। দ্রুত আমরা তাকে চিকিৎসার জন্য ডা: মুজিবের ক্লিনিকে ভর্তি করি। সে ষ্ট্রোক করেছে।
স্থানীয়রা জানায়, রভারানী শীলের সাথে গত ৫ বছর আগে সদর ইউনিয়নের মিয়াপাড়া এলাকার হারাধন কুমার সুশীলের ছেলে আশিষ কুমার সুশীলের বিয়ে হয়। রভারানী শীল মহেশখালী উপজেলার বড় মহেশখালী ইউনিয়নের নতুন বাজার পশ্চিম সুশীল পাড়া এলাকার বনমালী শীলের মেয়ে। আশিষ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কর্মরত। গত কয়েক বছর আগে আশিষ জাতিসংঘ শান্তি মিশনে যোগ দিতে আফ্রিকায় ছিলেন।
এ ব্যাপারে রভারানী শীলের পিতা বনমালী শীল জানায়, আমার মেয়েকে ঘাতক স্বামী খুন করেছে। স্বামী কয়েক দিন আগে ছুটিতে বাড়িতে আসে। রাতে আমার মেয়েকে স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন হত্যা করে। তারা হত্যাকান্ডের ঘটনা চাপিয়ে দিয়ে এটিকে স্বাভাবিক মৃত্যু হিসেবে জাহির করছে। মেয়ে বিয়ের পর থেকে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। যৌতুকের জন্য একাধিকবার পিটিয়ে আহত করে। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে একবার সে আমার বাড়িতে পালিয়ে গিয়েছিল। তিন বছর ধরে কোন ধরনের যোগাযোগ নেই। মৃত্যুর দুই দিন আগে আমাকে ফোন করে। মেয়ে বলেছিল, স্বামী ছুটিতে আসবে কোন ধরনের ফোন না করতে আমরা। বলেছিল ফোন করলে মোবাইল চেক করবে। আমরা কথা বলেছি ওই প্রমাণ থাকলে মেয়েকে স্বামী নির্যাতন করবে। মেয়ের এ পরিনতি আমাদেরকে কেউ বলেনি। পাশর্^বর্তী লোকজন আমাদেরকে এ সংবাদ দিয়েছে। গত দুই মাস আগে আমার মেয়েকে ননদ ও শাশুড়ী মারধর করেছিল। রভারানী শীলের শাশুড় হারাধন কুমার সুশীল জানায়, আমার ৫ জন ছেলের বউকে পৃথক করে দিয়েছি। এ বউ আমার খুবই আদরের। তার সাথে আমাদের কোন বিরোধ ছিল না। তবে বিয়ের পরে একবার পিতার বাড়িতে গিয়েছেন বলে তিনি স্বীকার করেছেন। ননদ চৈড়ভাঙ্গা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা
উষারানী সুশীল জানায়, ভাবীর অসুস্থ হয়েছে এই সংবাদ শুনে আমরা দ্রুত নিজ তলা থেকে উপরের তলায় যায়। সেখানে তাকে অজ্ঞান অবস্থায় দেখি। ভাইয়ের সাথে শাশুড় বাড়ির লোকজনের সম্পর্ক অবনতি বলে তিনি জানান।
এ ব্যাপারে জানতে স্বামী আশিষ কুমার সুশীলের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে এ প্রতিবেদককে বলেছেন, সাংবাদিকদের সাথে তার কথা বলার সময় নেই।
পেকুয়া থানার অফিসার্স ইনচার্জ (তদন্ত) মনজুর কাদের মজুমদার জানান, রভারানী শীলের পিতার অভিযোগ পেয়েছি। ময়না তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।