বিশেষ প্রতিবেদক :
টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের নয়া বাজার এলাকায় প্রকাশ্যে অস্ত্রসহ বিচরণ করার অভিযোগ উঠেছে রাকিব আহমদ মেম্বারের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়; এসময় তার লোকজনও ছিলো। এতে আতঙ্কে রয়েছে এলাকাবাসী।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, ২০০৬ সালে চাকরির উদ্দেশ্যে রাজধানী ঢাকায় পাড়ি দেন রাকিব আহমদ। সেখানে এক আত্মীয়ের সহযোগীতায় একটি বেসরকারী হাসপাতলে স্বল্প বেতনে চাকরি করেন। কিন্তু রাতারাতি নিজের অর্থনৈতিক অবস্থা পরিবর্তনের জন্য জড়িয়ে পড়েন ইয়াবা ব্যবসায়। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে বেশি দিন থাকতে পারেনি রাকিব। ২০০৮ সালে র‌্যাব-১ এর হাতে ইয়াবাসহ প্রথম ধরা পড়ে রাকিব আহমদ। এঘটনায় ঢাকার পল্টন থানা রাকিব আহমদের বিরুদ্ধে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা হয়। যার মামলা নং- ৬১ ও জি.আর নং- ৭৪২। এর পর থেকে শুরু হয় রাকিব আহমদের প্রকাশ্যে ইয়াবা ব্যবসা। দেশে বিভিন্ন স্থানে ইয়াবাসহ ধরা পড়তে থাকে তার পরিবারের সদস্যসহ নিকট আত্মীয়-স্বজন। রাতারাতি হয়ে যায় কোটি টাকার মালিক।
অভিযোগ মতে, ইয়াবা ব্যবসার টাকার জোরে তৈরী করেছে নিজস্ব পেটুয়া বাহিনী। এই বাহিনীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজী, ইয়াবা সক্রান্ত সমস্যার সমধান ও জমি দখলসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালাচ্ছে এই বাহিনী। তুচ্ছ ঘটনায়ও রাকিব আহমদ ও তার লোকজন অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেয় বলে জানায় এলাকাবাসী। এর অংশ হিসেবে গত ২ জুন বিকাল ৪ টার দিকে গাড়ি পার্কিংয়ের একটি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাকিব আহমদ ও তার লোকজন নয়া বাজার এলাকার আবুল হোসেনের উপর অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এতে ৫-৬ রাউন্ড গুলি চালায় হামলাকারীরা। এসময় রাকিব আহমদের হাতে একটি বিদেশি ভারী অস্ত্র দেখা যায় বলে জানান স্থানীয়রা। এ ঘটনায় আবুল হোসেন বাদী হয়ে রাকিব মেম্বারকে ১নং আসামী করে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। যার নং-২৩৪/১৭।
এ বিষয়ে আবুল হোসেন বলেন, গাড়ি পার্কিংয়ের বিষয়ে রাকিব আহমদের ভাই শফিক আহমদের সাথে আমার ছেলে কথা কাটাকাটি হয়। পরে শফিক আহমদ রাড়িতে গিয়ে রাকিব আহমদ ও তার বাহিনীর সদস্যদের সংগঠিত করে প্রায় ১০-১২টি অস্ত্র নিয়ে আমাদের উপর হামলা চালায়। ঘটনাস্থল থেকে আমারা কোন রকমে পালিয়ে আসলেও পার্কিং ট্রাক গাড়িটি ব্যাপক ভাংচুর করে এবং ৫-৬ রাউন্ড গুলি বর্ষণ করে হামলাকারীরা। প্রশাসনের কাছে আমার অনুরোধ ঘটনার সুষ্ট তদন্ত করে ঘটনায় ব্যবহৃত সকল অস্ত্র উদ্ধার করে অপরাধীদের আইনের আওতায় না হোক।
একই ধরনের ঘটনা ঘটে নয়া বাজার পশ্চিম সাতঘরিয়া পাড়া এলাকা তুর আলী নামে এক বৃদ্ধের সাথে। প্রায় গত এক বছর আগে ঘটনা। চায়ের দোকানের রাকিবের ভাই শফিকের সাথে একই ভাবে কথা কাটাকাটি হয় তুর আলী নামে ওই বৃদ্ধ ব্যক্তির। কথা কাটাকাটির ঘটনার জের ধরে রাকিব আহমদ ও তার ভাইরা অস্ত্র-স্বস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় তুর আলী ও তার আত্ময়ী-স্বজনদের উপর। পরে তুর আলী বাদী হয়ে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছিল।
তাছাড়া রাকিব আহমদ ও তার বাহিনীর অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে এলাকার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে আদায় করছে মোটা অংকের টাকা। চাঁদার টাকা না দিলে মামলা দিয়ে বা অন্য কোন পন্থায় হয়রানি করে ব্যবসায়ীদের। নয়া বাজার এলাকার রফিক আহমদ নামে এক একজন মুদি দোকানদার থেকে রাকিব আহমদ ৫ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবী করেন। চাঁদা না দেওয়ায় রাকিব আহমদ ওই ব্যাবসায়ী রফিক আহমদকে ইয়াবা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে বলে অভিযোগ তার পরিবারের।
রফিক আহমদের পরিবারের দাবী, রাকিব আহমদ তাদের নির্দোষ ছেলেকে ষড়যন্ত করে পুলিশকে ধরিয়ে দেয়। দোকানের মালামাল বিক্রয় করার সময় কয়েক জন লোক তাকে ধরিয়ে নিয়ে যায় তা উপস্থিত শত শত লোক দেখে। কেউ দেখে নাই আমার ছেলের কাছ থেকে ইয়াবা উদ্ধার করেছে। পরে খোঁজাখুঁজির পর জানতে পারি তাকে হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে আমার ছেলেকে ইয়াবা মামলায় চালান দেওয়া হয়। আমি প্রশাসনের কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছি আপনারা ঘটনাস্থলে এসে সুষ্ট তদন্ত করুন।
জানতে টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাইন উদ্দিন খান বলেন, এই রকম কোন ঘটনা কথা আমার জানা নেই। কেউ অভিযোগ নিয়েও আমার কাছে আসেনি।‘