খালেদ হোসেন টাপু, রামু
টানা বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে রামুতে ব্যাপক বন্যা দেখা দিয়েছে। রামুতে বাঁকখালী নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় বুধবার সকাল থেকে বন্যা দেখা দেয়। বন্যায় উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের ২ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী রয়েছে। বন্যাকবলিত অনেকেই নিজ বাড়ি ছেড়ে গৃহপালিত পশু নিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছেন। এছাড়া কয়েকটি ইউনিয়নে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটলেও কিন্তু হতাহতের ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
বুবধার দুপুরে জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসেন, রামু উপজেলা চেয়ারম্যান রিয়াজ উল আলম, ভাইস চেয়ারম্যান আলী হোসেন, নির্বাহী অফিসার মোঃ শাহজাহান আলির নেতৃত্বে একটি বহর গর্জনিয়া-কচ্ছপিয়ার দুর্গত এলাকায় পরিদর্শনে বের হয়ে কাউয়ারখোপ ফরেষ্ট অফিস এলাকা পর্যন্ত গিয়ে বন্যার পানিতে আটকা পড়ে ফিরে আসেন।
বিকেলে রামু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রিয়াজ উল আলম কাউয়ারখোপ, রাজারকুল, ফতেখাঁরকুল, হাইটুপীর বেড়ি বাঁধ ও দক্ষিণ মিঠাছড়ির বিভিন্ন দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি দক্ষিণ মিঠাছড়ির চর পাড়াসহ কয়েক এলাকায় শুকনো খাবার ও নগদ অর্থ বিতরণ করেন। এসময় ভাইস চেয়ারম্যান আলী হোসেন, নির্বাহী অফিসার মোঃ শাহজাহান আলি ও দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ ইউনুচ ভূট্টো উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কের চেইন্দা, রামু মরিচ্যা পুরাতন আরাকান সড়ক, মরিচ্যা পুরাতন আরকান সড়ক, গর্জনিয়া-কচ্ছপিয়া, রামু-নাইক্ষ্যংছড়ি সড়ক, জাদি পাড়া সড়ক, মেরংলোয়া পুরাতন আরাকান সড়ক, রাজারকুল-মিঠাছড়ি সড়ক, শ্রীমুরা সড়ক, ঈদগাঁহ-ঈদগড়, তেচ্ছিপুল-লম্বরীপাড়াসহ প্রায় ৫০টি অভ্যন্তরীণ সড়কে বিভিন্ন পয়েন্টে সড়কের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
ডুবে রয়েছে বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা, কবরস্থান, মন্দির, গির্জাসহ রামুর ফকিরা বাজার, বিভিন্ন হাট বাজার, রাস্তাঘাট, ঘর-বাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মৎস্য খামার, পুকুর ও চিংড়ি ঘের।
বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে ফতেখাঁরকুল, চাকমারকুল, রাজারকুল, কাউয়ারখোপ, গর্জনিয়া, কচ্ছপিয়া, রাজারকুল, দক্ষিণ মিঠাছড়ি, জোয়ারিয়ানালা, খুনিয়া পালং, রশিদ নগর ইউনিয়নের ২ শতাধিক গ্রাম।
এছাড়া ঢাক ভাঙ্গা, মহিষকুম, মাঝির কাটা, পশ্চিম পাড়া, ক্যাজর বিল, ফাক্রি কাটা, তিতার পাড়া, দোছড়ি, মনিরঝিল, হাইটুপী, ফুলনির চর, সিকদার পাড়া, দেয়াং পাড়া, চর পাড়া, ফজল আম্বিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে বেড়ি বাঁধ, হাইটুপী জাড়ি পাড়া সড়কসহ বেশ কিছু এলাকা তলিয়ে গেছে। এদিকে খুনিয়া পালং পেঁচারদ্বীপ, ঈদগড় ও কাউয়ারখোপ উখিয়ার ঘোনা এলাকায় বন্যার পাশাপাশি পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে।
গর্জনিয়া যুবলীগ সভাপতি হাফেজ আহমদ জানান, গর্জনিয়া, কচ্ছপিয়ার ৯০ শতাংশ এলাকা ইতোমধ্যে পানিতে তলিয়ে গেছে। বাঁকখালী নদীর সেতুর সংযোগ সড়ক ডুবে মানুষের চলাচল বন্ধ রয়েছে।
রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাহজাহান আলি জানান, অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ডুবে যাওয়া গ্রামগুলোর মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বন্যা মোকাবেলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে বন্যা মোকাবেলায় বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রশাসনের লোকজন সর্বাক্ষণিক নজর রাখছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রামু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রিয়াজ উল আলম জানান জানান, কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের প্রায় ২ লক্ষ মানুষ পানি বন্দি অবস্থায় রয়েছে। ১১টি ইউনিয়নের ২ গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। তিনি আরো জানান, বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্র খুলে দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে গৃহপালিত পশু নিয়ে বন্যাকবলিত মানুষ বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছেন। তিনি বিভিন্ন দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করে শুকনো খাবার ও নগদ অর্থ বিতরণ করেন। তিনি আরো জানান, ‘রামু বাঁকখালী নদী নাব্যতা হারিযে ফেলেছে। দীর্ঘদিন ধরে কোনও ধরনের ড্রেজিং না থাকায় উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল লোকালয়ে ঢুকে ভয়াবহ বন্যার রূপ নিয়েছে। নদীর বাঁধ ভেঙে বিলীন হয়ে গেছে শত শত ঘরবাড়ি। ভেঙে যাচ্ছে গ্রামীন জনপদ। এ কারণে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে রামু উপজেলার ২ লাখ মানুষ।
বিপদ কাটছেনা, বাড়ী ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে রামুর নিম্নাঞ্চলের মানুষ
পড়া যাবে: [rt_reading_time] মিনিটে
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।