ডেস্ক নিউজ:
 গায়ে ছেড়া জামা, পায়ে নেই কোনো সেন্ডেল বা জুতা। সাবান দিয়ে কবে গোসল করেছিলো তা হয়তো তাদের মনে নেই। মনেইবা থাকবে কেমন করে? বয়সতো তাদের কারো ৫-৬ বছর, আবার কারো ৭-১০ বছর। আর এই বয়সে বাবা-মা ছাড়া শিশুদের যত্নইবা কে নিবে? তাদের বেড়ে উঠা কক্সবাজারের রাস্তায়। পর্যটকদের ফেলে দেওয়া পচা বাসি খাবার খেয়ে তারা ঘুমায় ফুটপাতে। অভিজাত রেস্তোরাতো আকাশ কুসুম কল্পনা, গলির ভেতরের চায়ের দোকানের
রুটি কিনেও তাদের কেউ খাওয়াই না।

কক্সবাজারে এমনি ২০ জন ছিন্নমূল পথ শিশুকে একত্রিত করে সোমবার রাতে সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টের অভিজাত ‘কড়াই’ রেস্তোরায় খাওয়াতে নিয়ে বাধার সম্মুখীন হতে হয় শাওন আরমান নামের এক এমপি পুত্রের। পথ শিশুরা নোংরা, ছেড়া জামা-কাপড়ে রেস্তোরায় দুকতে পারবে না বলে জানিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ। এই শিশুরা কড়াই রেস্তোরায় ঢুকলে রেস্তোরার ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। অন্যান্য অতিথিরা এই নোংরা শিশুদের কারণে বিরক্ত হবে। তাই পথ শিশুদের দুকতে নিষেধ।

ঈদে পাওয়া সালামির টাকা জমিয়ে ২০ জন অনাথ শিশুদের সোমবার রাতে শহরের অভিজাত কড়াই রেস্তোরায় খাওয়াতে যান কক্সবাজার- ৪ আসনের সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির পুত্র শাওন আরমান। কক্সবাজারের সুগন্ধা পয়েন্টের কড়াই রেস্তোরায় ২০ জন পথ শিশুকে নিয়ে ঢুকার পথে তাদের বাধা দিয়ে গেইটে আটকিয়ে দেয়া হয়। অনাথ পথ শিশুকে রেস্তোরায় ঢুকা নিয়ে এমপি পুত্র শাওনের সাথে কর্তৃপক্ষের দীর্ঘক্ষণ কথা-কাটাকাটি হয়। পরে রেস্তোরা বুকিং নিতে হবে শর্তে পথ শিশুদের নিয়ে শাওনকে রেস্তোরায় দুকতে দেওয়া হয়। অভিজাত রেস্তোরায় দুকতে পেরে সব হারানো শিশুদের চোখে মুখে খুশির বন্যা বয়ে যায়। এমপি পুত্রের দেয়া নৈশভোজ খেয়ে ও অভিজাত রেস্তোরায় বাদ্যের তালে তালে নেচে নেচে তারা আনন্দ উল্লাস করে।

কড়াই রেস্তোরা কর্তৃপক্ষের অনাথের প্রতি চরম সামাজিক বৈষম্যের ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লে সবখানে চরম সমালোচিত হয়।

এ ঘটনায় উখিয়া-টেকনাফের সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির পুত্র শাওন আরমান রাত ১০টার দিকে তার আইডিতে স্ট্যাটাসে এসব কথা বলেন।

স্ট্যাটাসটা হুবহু তুলে ধরা হল

‘আজকে রাত ৯টার দিকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে থাকা বেশ কয়েকজন পথ শিশুকে রাতের খাবার খাওয়ানোর জন্য কক্সবাজার সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টের রেস্টুরেন্ট কড়াইতে ঢুকতে গেলেই তারা বলে এসব শিশুরা নাকি এই দামি রেস্টুরেন্টে খেতে পারবে না। অনেক অনুরোধের পরে পুরো রেস্টুরেন্টের অর্ধেক ১ ঘণ্টার জন্য বুকিং করে সুবিধাবঞ্চিত এসব শিশুকে রাতের খাবার খাওয়ানোর সুযোগ দেয়।

দামি রেস্টুরেন্ট বলে কি অসহায় শিশুদের প্রতি এই অবিচার। অভিজাত রেস্টুরেন্ট বলে কি এসব শিশুদের খাওয়ার অধিকার নেই? ধিক্কার জানাই এসব তথাকথিত অভিজাত রেস্টুরেন্ট মালিকদের। যদি সুবিধাবঞ্চিত এসব শিশুদের পাশে না দাড়াতে পারি তাহলে কি হবে মানবতার কথা বলে।’

এই ব্যাপারে কড়াই রেস্তোরার মালিক নুরুল আবছারের সাথে কথা বলতে চাইলে, তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করবে না বলে জানিয়ে দেন।