জাগো নিউজ:
২০০৭ সাল থেকে পরবর্তী ১০ বছরে পাহাড়ধসের ঘটনায় ৪২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। সর্বশেষ গত ১১-১৩ জুন নিম্নচাপের প্রভাবে টানা বর্ষণে পার্বত্য তিন জেলা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে পাহাড়ধসের ঘটনায় মারা যান ১৫৬ জন।
আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থা বেশ গুরুতর। পাহাড়ে মৃত্যুর এ মিছিল যেন থামছেই না। পরিতাপের বিষয় হলো, পাহাড়ধস কমিয়ে আনা এবং পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস রোধে কোনো সুপারিশই বাস্তবায়ন করা হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০০৭ সালের ১১ জুন চট্টগ্রামে পাহাড়ধসে ১২৭ জনের প্রাণহানির পর পরিবেশ অধিদফতরের তখনকার পরিচালক মো. জাফর আলমকে প্রধান করে গঠন করা হয় উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি কমিটি। ওই কমিটি পাহাড়ধসের ২৮টি কারণ চিহ্নিত করে তা ঠেকাতে ৩৬ দফা সুপারিশ করেছিল। গত দশ বছরে এর কোনোটিই বাস্তবায়ন হয়নি।
সুপারিশে বলা হয়েছিল, পাহাড়ে জরুরি ভিত্তিতে বনায়নসহ পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে আবাসন গড়ে না তোলা, ঢালু পাহাড়ের প্রান্তে দেয়াল নির্মাণ, পানি ও বালি অপসারণের ব্যবস্থা, পাহাড় কেটে অনিয়ন্ত্রিত বালি উত্তোলন নিষিদ্ধ করা, ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের পাদদেশে বসতি স্থাপন নিষিদ্ধ করা এবং পাহাড় কাটায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এর বাইরে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের পুনর্বাসনসহ গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করা হয়েছিল। কিন্তু কোনটাই বাস্তবায়ন হয়নি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন না করায় বছর বছর মৃত্যুর মিছিল বাড়ছে। ২০০৭ সালের ১১ জুন চট্টগ্রামের সাতটি স্থানে ধসে পড়া পাহাড়ের মাটিচাপায় ১২৭ জনের মৃত্যু হয়। পরের বছর অর্থাৎ ২০০৮ সালের ১৮ আগস্ট চট্টগ্রামের লালখান বাজার মতিঝর্ণা এলাকায় পাহাড়ধসে চার পরিবারের ১২ জনের মৃত্যু হয়।
পরবর্তীতে তিন বছর কোনো পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেনি। ২০১১ সালের ১ জুলাই চট্টগ্রামের টাইগার পাস এলাকার বাটালি হিলের ঢালে পাহাড় ও প্রতিরক্ষা দেয়াল ধসে ১৭ জনের মৃত্যু হয়। ২০১২ সালের ২৬-২৭ জুন চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান ও সিলেটে ৯৪ জনের প্রাণহানি ঘটে। তিন বছর বিরতি দিয়ে ২০১৫ সালের ২৬-২৭ জুন টানা বর্ষণ, ধস আর পাহাড়ি ঢলে কক্সবাজারে ১৯ জনের মৃত্যু হয়। সর্বশেষ ২০১৭ সালের ১১-১৩ জুন টানা বর্ষণ, ধস আর পাহাড়ি ঢলে পার্বত্য তিন জেলা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে মারা যান ১৫৬ জন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়ম ভেঙে পাহাড় কাটা এবং পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসই মৃত্যুর প্রধান কারণ। মূলত প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে হতাহতের ঘটনা ঘটে। এ অবস্থায় পার্বত্য এলাকায় ভূমিধস ঠেকাতে মো. জাফর আলমের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে মহাপরিকল্পনা নিতে সরকারকে তাগাদা দিয়েছেন তারা।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগবিজ্ঞান ব্যবস্থাপনা বিভাগের চেয়ারম্যান ও ভূতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল বলেন, পাহাড়ধসে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেয়ার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষই দায়ী। এক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতাও রয়েছে। পরিকল্পিত উপায়ে সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন হলে হয়ত এত মানুষ পাহাড়ধসে মারা যেত না।
তিনি আরও বলেন, কমিটির সুপারিশে পাহাড় কাটার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু প্রশাসনের নাকের ডগায় পাহাড় কাটা হচ্ছে। এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলেও কর্তৃপক্ষ কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়ায় দুর্ঘটনা ঘটছে বারবার।
মাসুদ কামাল বলেন, এখনও সময় আছে ভবিষ্যতে যাতে আর পাহাড়ধস না হয় সে জন্য যেকোনো মূল্যে পাহাড় কাটা বন্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ছাড়া পাহাড়ে পর্যাপ্ত বনায়ন, পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং পাহাড় থেকে বসতি উচ্ছেদ করতে হবে। এক্ষেত্রে পাহাড়ের ঢালে বসবাসকারী দরিদ্র পরিবারগুলোকে অন্যত্র পুনর্বাসন করতে হবে।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।