বিদেশ ডেস্ক:

মালয়েশিয়ায় অবৈধ বিদেশি শ্রমিকদের ধরতে কর্তৃপক্ষের অভিযান অব্যাহত আছে। গতকাল সোমবার সকাল পর্যন্ত দেড় হাজারের বেশি বিদেশি শ্রমিককে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭৫২ জন বাংলাদেশি রয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির অভিবাসন কর্তৃপক্ষ।

মালয়েশিয়ায় শ্রম অধিকার নিয়ে কাজ করেন বাংলাদেশি নাগরিক মো. হারুন অর রশিদ। গতকাল তিনি মালয়েশিয়া থেকে টেলিফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ৩০ জুন রাতের পর অভিযান শুরু হয়েছে। তিন দিন সারা দেশের অলিগলি, প্রতিটি শহর ও গ্রামে একযোগে অভিযান চালাচ্ছে সরকার।

হারুন অর রশিদ আরও বলেন, অবৈধ নাগরিকদের সাময়িকভাবে বৈধ হওয়ার জন্য ৩০ জুন পর্যন্ত সময় দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু অনেক বাংলাদেশি শ্রমিক সেই সুযোগটি গ্রহণ করেননি। ফলে তাঁদের জন্য সমস্যা হয়েছে। বৈধ হওয়ার সুযোগ না নেওয়ার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, এর পেছনে শ্রমিকেরা যেসব স্থানে চাকরি করছেন, সেখানকার মালিকেরা অনেকাংশ দায়ী। এর পাশাপাশি দালালেরা হয়তো অবৈধ এসব শ্রমিককে বৈধ করার কাজটি যথাযথভাবে করেনি। তা ছাড়া শ্রমিকেরা হয়তো বিষয়টি বুঝতে পারেননি তাঁদের জন্য কী পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে।

মালয়েশিয়ার নিউ স্ট্রেইটস টাইমস পত্রিকার খবরে জানানো হয়, গতকাল সকাল পর্যন্ত ১ হাজার ৫০৯ জন অবৈধ বিদেশি শ্রমিক ও ২৮ জন চাকরিদাতাকে আটক করে দেশটির অভিবাসন কর্তৃপক্ষ। অভিবাসন বিভাগের মহাপরিচালক মুস্তাফার আলী এক বিবৃতিতে বলেন, আটক ব্যক্তিদের মধ্যে বাংলাদেশির সংখ্যা ৭৫২ জন। এ ছাড়া ইন্দোনেশিয়ার ১৯৫ জন, মিয়ানমারের ১১৭ জন, ফিলিপাইনের ৫০ জন এবং থাইল্যান্ডের ৪৫ জন নাগরিকও আটক হয়েছেন। আটক বাকি ৩৫০ জন অন্যান্য দেশের নাগরিক। তিনি জানান, অভিযানের দুই দিনে ৫ হাজার ২৭৮ জনের কাগজপত্র যাচাই করা হয়েছে।

এ অভিযানে আটক ব্যক্তিদের মধ্যে ১ হাজার ৩১৪ জন পুরুষ, ১৯২ জন নারী ও তিন শিশু রয়েছে বলেও জানান মুস্তাফার আলী। গত দুদিনে দেশজুড়ে ১৮১টি জায়গায় অভিযান চালানো হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এর আগে কালো তালিকাভুক্ত করা বা নিজেদের দেশে ফেরত পাঠানো ব্যক্তিরা অবৈধ পথে মালয়েশিয়ায় ঢুকে এনফোর্সমেন্ট কার্ড বা ই-কার্ডের জন্য নিবন্ধনের চেষ্টা করেছেন বলেও তাঁর বিভাগ শনাক্ত করেছে। আঙুলের ছাপ পরীক্ষা করতে গিয়ে বিষয়টি ধরা পড়েছে। এসব ঘটনায় ৩৮ জন বিদেশি শ্রমিককে আটক করা হয়েছে।

ই-কার্ড কর্মসূচির মেয়াদ আর বাড়ানো হবে না জানিয়ে মুস্তাফার আলী বলেন, অভিবাসন আইন অনুযায়ী বৈধ কাগজপত্র না থাকায় আটক হওয়া শ্রমিকেরা জনপ্রতি ১০ হাজার রিঙ্গিত জরিমানা ও সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন। আর আটক চাকরিদাতাদের বিরুদ্ধে ২০০৭ সালের মানব পাচার ও ২০০৭ সালে প্রণীত শ্রম পাচার আইনে মামলা হতে পারে।

এর আগে অভিযানের প্রথম দিন গত শনিবার মুস্তাফার আলী এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, নানা কারণে অনেক বিদেশি শ্রমিক ই-কার্ডের জন্য আবেদন করেননি। এর মধ্যে অনেকে আবেদনের মেয়াদ শেষ হওয়ার সময়সীমা সম্পর্কে জানতেন না। আবার অনেকের চাকরিদাতা বলেছেন, আবেদনের সময়সীমা বাড়ানো হবে। মুস্তাফার বলেন, আবেদনের জন্য পর্যাপ্ত সময় দেওয়া হয়েছে। নতুন করে আর সময়সীমা বাড়ানো হবে না।

মালয়েশিয়ার অভিবাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, দেশটিতে প্রায় ৬ লাখ অবৈধ বিদেশি শ্রমিক অবস্থান করছেন। এ পর্যন্ত আবেদন করেছেন ১ লাখ ৬১ হাজার ৫৬ জন, অর্থাৎ মাত্র ২৩ শতাংশ।

এদিকে সিঙ্গাপুরের ইংরেজি ভাষার সংবাদপত্র স্ট্রেইটস টাইমস-এর এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, মালয়েশিয়ায় দেশজুড়ে ওই অভিযানের কারণে আতঙ্কে অনেক শ্রমিক আত্মগোপনে চলে গেছেন। তাঁদের মধ্যে অনেক বৈধ শ্রমিকও রয়েছেন। চাকরিদাতারা এখন আশঙ্কা করছেন, আত্মগোপনে যাওয়া এসব শ্রমিক হয়তো অভিযান চলা অবস্থায় আর কাজে ফিরবেন না। এতে সবচেয়ে বেকায়দায় পড়েছে মালয়েশিয়ার নির্মাণশিল্প। এ ছাড়া ছোট ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলোও সংকটে পড়েছে।

এই বিপুলসংখ্যক বিদেশি শ্রমিক নিবন্ধিত না হওয়ার কারণ হিসেবে মাস্টার বিল্ডার্স অ্যাসোসিয়েশন মালয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট ফো চেক লি বলেন, অনেক শ্রমিকই এজেন্সির মাধ্যমে আসেন। ফলে তাঁদের নিবন্ধন করানো কঠিন। কারণ, তাঁদের সরবরাহ করা এজেন্সির অনেকগুলোই নির্মাণশিল্প উন্নয়ন বোর্ডের (সিআইডিবি) অধীনে নিবন্ধনকৃত নয়।

তবে মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিভাগের মহাপরিচালক মোস্তফার আলী এক খুদে বার্তায় দেশটির ইংরেজি ভাষার সংবাদপত্র দ্য স্টারকে বলেন, বৈধ শ্রমিকদের ভয়ের কোনো কারণ নেই।