মুসলমানদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে কক্সবাজার বাসীকে জানাই ঈদ মোবারক। এই আনন্দঘন মুহুর্ত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারর্গকে কক্সবাজারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিশ্বস্ত ও প্রাণপ্রিয় বন্ধু আশ্রয়দানকারী মরহুম আহমদ কবির সওদাগরের পরিবারের পক্ষ থেকে ঈদুল ফিতরের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
জনগণের ভালোবাসা নিয়ে বাংলার নেত্রী শেখ হাসিনা আবারো প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন হউন, মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে এই কামনা করছি।

মরহুম কবির আহমদ সওদাগর

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৬৮ইং সনের কক্সবাজার পৌরসভা ও উখিয়া ইনানীতে অনেক স্মৃতির ইতিহাস রহিয়াছে। তৎকালীন পাকিস্তান সরকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দিয়ে বিভিন্নভাবে হয়রানি করেছে এবং পাকিস্তান প্রশাসনের কাছ থেকে রেহাই পাওয়ার মানসে আত্মগোপনে থাকার জন্য ঐসময়ে কক্সবাজার আসেন। তৎকালীন পাকিস্তান আমলে লালদীঘির দক্ষিণ পাড়ে আমার পিতা মরহুম আহমদ কবির সওদাগরের আহমদিয়া রেস্তোঁরা ও দুই তলা কাঠের আহমদিয়া বোডিং ও নিচে আহমদিয়া মার্কেট ছিল। ঐসময়ে কক্সবাজারে আহমদ কবির সওদাগর একজন বিশিষ্ট সুনামধন্য ব্যবসায়ী ছিলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কক্সবাজারে সর্বপ্রথম আমার পিতার আহমদিয়া রেস্তোঁরায় দুপুরের ভাত খাওয়ার জন্য আসেন। ভাত খাওয়ার পর মরহুম আহমদ কবিরের সাথে পরিচিত হন এবং একান্ত আলাপ করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু আহমদ কবির সওদাগরের কাছে থাকা, খাওয়া ও নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার সহায়তার জন্য চান। মরহুম আহমদ কবির সওদাগর জাতির পিতাকে সহযোগিতা করবেন বলে কথা দিয়েছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীন আহমদিয়া বোডিং-এ মেহমান হিসেবে দু’দিন ছিলেন। পরেরদিন বঙ্গবন্ধুর নিরাপত্তা চিন্তা করে কক্সবাজার শহরের মোহাজের পাড়া বৌদ্ধ রাখাইন মন্দিরের প্রধান ধর্মীয় ভান্তে ওছেন ভিমা রাখাইন এর নিকট নিয়ে যান (ওনার নিজ গ্রামের বাড়ি চকরিয়া থানার হারবাং ইউনিয়নে)। ওনি আহমদ কবির সওদাগরের আপন বন্ধু ছিলেন। উক্ত বৌদ্ধ মন্দিরে মরহুম আহমদ কবিরের অনুরোধে ভান্তে ওছেন ভিমা রাখাইন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে দু’দিন রাখেন। ঐসময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু রাত্রি থাকাকালীন প্রচন্ড মাথা যন্ত্রণা ও জ্বর হইলে তখন বঙ্গবন্ধু বৌদ্ধ মন্দিরের একটা ছেলে ওয়াংছালা রাখাইন কে (বয়স- ১৫, যিনি এখনে বেঁচে আছেন, সাং- মাছবাজার, পশ্চিম রাখাইন পাড়া, কক্সবাজার ) তাহার নিজ হাতে একটি ৫ টাকার নোট দেন এবং ঔষধ আনার জন্য একটি স্লিপ লিখে দেন। ওয়াংছালা রাখাইন তৎকালীন বড় বাজার শফিক ফার্মেসী থেকে ২ টাকা ৫০ পয়সার ঔষধ (ডিসপ্রিন ও অন্যান্য ঔষধ) কিনে বঙ্গবন্ধুর হাতে দেন। পরে জাতির পিতা সুস্থ হয়ে উঠেন। পাকিস্তানি পুলিশ যখন বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তারের জন্য চিরুনী অভিযান চালায়, তখন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে মরহুম আহমদ কবির সওদাগর চিন্তায় ভেঙ্গে পড়েন। এক পর্যায়ে ঐসময় ১৯৬৮ইং সালে তেল গ্যাস অনুসন্ধানকারী বিদেশী কোম্পানীর ড্রাইভার (উখিয়া রুমখা বাজার বাড়ি) আব্দুর রহমান ড্রাইভার আহমদিয়া রেস্তোঁরায় ভাত খাওয়ার জন্য আসিলে মরহুম আহমদ কবির সওদাগরের সাথে দেখা হয়। তাহার সাথে আমার পিতার পূর্বের সম্পর্ক ছিল। এক পযায়ে আহমদ কবির সওদাগর ও আব্দুর রহমান ড্রাইভার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নিরাপত্তার জন্য আলাপ করেন। আলাপকালে সিদ্ধান্ত হয়, জাতির পিতাকে উখিয়া ইনানীতে রাখার জন্য। ইনানীতে যাওয়ার জন্য জীপ গাড়ির দরকার হইলে জীপ সাধারণ মানুষের কাছে না থাকার কারণে আহমদ কবির সওদাগর তৎকালীন মহকুমা অফিসারের কাছে যান। অফিসার না থাকার কারণে ব্যর্থ হন। তারপর বন বিভাগীয় ডিপোর গাড়ির জন্য যান। ডিপো সাহেব আহমদ সওদাগরের কাছে গাড়ি ও ড্রাইভার দিয়েছেন। তৎকালীন ডিপোর গাড়ির ড্রাইভার ছিলেন মৃত আবুল বশর ড্রাইভার। আবুল বশর ড্রাইভার, আহমদ কবির সওদাগর, আব্দুর রহমান ড্রাইভার জীপ গাড়ি নিয়ে পুরাতন সার্কিট হাউসের নিচে অবস্থান করে এবং আহমদ কবির সওদাগর মোহাজের পাড়া বৌদ্ধ মন্দির থেকে জাতির পিতাকে নিয়ে ইনানীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। জোয়ারের পানি বেশি থাকার কারণে রেজুখাল পার হতে না পারায় ড্রাইভার আবুল বশর গাড়ী নিয়ে চলে আসে। অতঃপর রেজুখালের ইজারাদার ঘাট্যহালুর নৌকা যোগে আমার পিতা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে খালের ঐ পাড়ে পৌছায়। তারপর দীর্ঘ পথ পায়ে হেটে জাতির পিতা, আহমদ কবির সওদাগর, আবদুর রহমান ড্রাইভার ফইল্যা রোয়াজা চাকমা, হেডম্যান এর বাড়িতে পৌছান। হেডম্যানের হাতে আহমদ কবির সওদাগর জাতির পিতাকে নিরাপদে থাকা, বাঙ্গালি ভাল খাবার খাওয়া ও অন্যান্য চলার জন্য সমস্ত খরচ ফইল্যার রোয়াজা চাকমার হাতে তুলে দেন। তারপর আহমদ কবির ও আব্দুর রহমান ড্রাইভার কক্সবাজার চলে আসেন। এক সপ্তাহ পর বঙ্গন্ধুর জন্য রেডিও, ব্যাটারী, ডায়েরী, কালি, কলম, সিগারেট, সাবান, তেল এবং রান্না করা ইলিশ মাছের ভাতের মোছা আহমদ কবির সওদাগর আব্দুর রহমান ড্রাইভারের মাধ্যমে জাতির পিতার কাছে পার্সেল পাঠান। জাতির পিতা ইনানীতে বেশ কিছুদিন থাকার পরে আব্দুর রহমান ড্রাইভারের মাধ্যমে কক্সবাজার চলে আসেন। আহমদিয়া রেস্তোঁরায় জাতির পিতা, আহমদ কবির ও আব্দুর রহমান ড্রাইভার একসাথে ভাত খান। এক পর্যায়ে জাতির পিতা ও আহমদ কবির সওদাগর পাকিস্তানের রাজনীতির ব্যাপারে আলাপকালে আহমদ কবির বলেন, বঙ্গবন্ধু তুমি এদেশের গরীবের মুখে হাসি ফুটানোর জন্য এবং পাকিস্তান থেকে বাঙ্গালিকে আলাদাভাবে স্বাধীন করার জন্য চেষ্টা করিতেছ। এটা হওয়া অবশ্য দরকার। ভারতের সাথে সম্পর্ক করতে হবে এবং ধনী গরিব মিলে বাঙ্গালি এক হয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে সহজভাবে বাঙ্গালি স্বাধীন হয়ে যাবে। জাতির পিতা বললেন আপনার কথা আমি চিন্তা করে মাথায় রাখব। জাতির পিতা কক্সবাজার ত্যাগ করে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলেন। আগরতলা মামলায় জামিন হয়ে বিভিন্ন জেলার বন্ধুদের সাথে টেলিফোনে আলাপ করলেন। তারপর মুক্তিযুদ্ধের সংগঠন গড়ে তুলেন। দীর্ঘ নয় মাস পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান কক্সবাজার রাষ্ট্রীয় সফরে আসেন। কক্সবাজার হিলটপ সার্কিট হাউসে জাতির পিতা অবস্থান করেন। এসময় আহমদ কবির সওদাগর, বশর ড্রাইভার, আব্দুর রহমান ড্রাইভার, ওছেন ভিমা রাখাইন ভান্তে, উখিয়া ইনানীর ফইল্যা চাকমা-এদেরকে বঙ্গবন্ধু সাক্ষাত করার জন্য খবর দেন। এক পর্যায়ে আহমদ কবির সদাগরকে বঙ্গবন্ধু একটি খালি চেক প্রদান করেন। যাহা আহমদ কবির সওদাগর চেক গ্রহণ করেননি। পরে উক্ত চেকে ৫০০০ টাকা অংক বসিয়ে আব্দুর রহমান ড্রাইভারকে দেন। তারপর বশর ড্রাইভারকে ২ একর জায়গা দান করেন। ফইল্যা চাকমাকে ১০০০০ টাকা নগদ প্রদান করেন। ওছেন ভিমা রাখাইনকে ৫০০০ টাকা প্রদান করেন। জাতির পিতা আজ নেই, কিন্তু কক্সবাজারে তাঁর স্মৃতির ইতিহাস রয়ে গেছে। কিন্তু মরহুম আহমদ কবির সওদাগর জাতির পিতার দুঃসময়ে কক্সবাজারে প্রথম ও শেষ সহায়তা করে গেছেন। বিগত ২৮/১০/১৯৮৫ সালে আমার পিতা মৃত্যুবরন করেন এবং মুত্যুর পূর্বে আমি পিতার পাশে ছিলাম, আমাকে সকল ঘটনা বলে গেছেন। তখন আমার বয়স ১৫ বছর, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট আমার একটাই আবেদন, জাতির পিতার অন্যান্য ইতিহাসের সহিত ১৯৬৮ সনে কক্সবাজারে ঘটে যাওয়া এই স্মৃতিখানা সংযুক্ত করে রাখার আবেদন। যাহা আগামী প্রজন্মের কাছে স্মরনীয় হয়ে থাকবে।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

ইতি
তাঁরই সন্তান মোঃ কুতুব উদ্দিন
সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী বাস্তুহারালীগ কেন্দ্রিয় কমিটি।
যুগ্ম আহ্বায়ক
বাংলাদেশ তাঁতীলীগ, কক্সবাজার জেলা শাখা
স্বত্বাধিকারী, বিরাম রেস্তোঁরা ও অভিরাম ক্যান্টিন বিরানী হাউজ।
মোবাইল : ০১৮৩৭-৯২০৪৭২, ০১৭৫৮১২০৯৭৮, ০১৭৯৪-২১৮৭৭৬, ০১৮৬৩-২৭৫২৯৬
তারিখ : ২৫/০৬/২০১৭ইং