মোঃ আকতার হোছাইন কুতুবী :

কথায় বলে প্রতিভা কখনো চাপা থাকেনা। প্রতিভা থাকলে আজ হোক কাল হোক তা উদ্ভাসিত ও বিকশিত হবেই। দরকার শুধু একটু চেষ্টা আর সাধনা। আসলেও তাই। কথাটি পুরোপুরি দেখতে পাই একজন প্রবাসী শিল্পী ও ক্যালিওগ্রাফার এইচ এম করিম ক্ষেত্রে। যিনি একান্ত প্রচেষ্টা ও অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজেকে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন একজন আন্তর্জাতিক শিল্পী ও ক্যালিওগ্রাফার হিসেবে। যার তুলির নিপুন আঁচড়ে ফুটে উঠেছে ইসলামী ঐতিহ্য, ঐতিহাসিক নিদর্শন ও ইসলামী কালচার। এইচ এম করিম তুলিতে উঠে এসেছে মুসলিম স্থাপত্যকলার অনেক নিদর্শন। ইতিমধ্যে তিনি দু’টি আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে অংশগ্রহন করেছেন। এরই সুবাধে তিনি পেয়েছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতি। যার চিত্রকর্ম দেখে অবিভূত হয়ে যান বিশ্বের মানুষ।

এইচ এম করিম ১৯৮৬ সালে কক্সবাজার জেলায় কুতুবজোম ইউনিয়নের খোন্দকারপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তার পিতা মরহুম করিম দাদ এবং মাতার মায়মুনা খাতুম। মহেশখালী আর্দশ উচ্চ বিদ্যালয় হতে ২০০৭ সালের এসএসসি পরীক্ষার পরপরই চলে আসেন ঢাকায় কমার্শিয়াল আর্টিস কলেজে চাস না পেয়ে ২/৪ মাস যাবত অনেক চেষ্টার বিফলে, পুনরায় চলে আসেন চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ বারেক বিল্ডিং নিচ তলায় জননী আর্ট সেন্টারের কাজে যুগবান করেন। দীর্ঘ এক বছর চাকরি শেষ, নিজে একটা ব্যবসা উদ্দেশ্যে চলে আসেন নিজ গ্রামে। প্রতিষ্টান করেই সংসারের হাল ধরতে একসময় চলে আসেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের পার্শ্ববতি রাষ্ট্র ওমানের রাজধানী মসকেটে। এখানে এসে একটি কোম্পানীর অধিনে ডিজাইনিং ক্যাটারিং সুপারভাইজার হিসেবে যোগদান করেন। চাকুরী করলেও তার মাথায় সবসময় ঘুরপাক খেতে থাকে আর্ট ও ক্যালিওগ্রাফি। মাধ্যমিক স্কুলে পড়া অবস্থায় এইচ এম করিমের মনে শিল্পী ও ক্যালিওগ্রাফার হওয়ার স্বপ্ন ঘনিভূত হতে থাকে। তখনই মাঝেমাঝে তিনি এটা ওটা আঁকিবুকি করতেন, সুদুর প্রসার নিল না। তাই প্রবাসে এসেও সবসময় শিল্পী হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন।

একদিন এইচ এম এইচ এম করিম এর সাথে  ওমানের প্রখ্যাত ক্যালিওগ্রাফার ও মসকেট আরব ইউর্নিভাসিটির অধ্যাপক মোহাম্মদ হামুদ বিনন আল ফেজারি এর সাথে দেখা হয়। যিনি মাসকেট সোলতান বাবা কাবুজ গ্র্যান্ড মসজিদে ক্যালিওগ্রাফি এঁকে বিশ্ববিখ্যাত হয়ে আছেন। সেই আমার চারুকলার ছবি দেখে মূগ্ধ। সারাদিন অফিসে খাটুনির পর এইচ এম করিম বাসায় বসে বসে সময় কাটাতেন না। অন্য দশজনের মতো বাইরে ঘোরাফেরা করে সময় নষ্ট করতেন না। অফিস থেকে এসেই বসে যেতেন রং ও তুলি নিয়ে। আঁকতে থাকেন মনের মাধুরী মিশিয়ে বিভিন্ন ক্যালিওগ্রাফি। আঁকতে থাকেন ওমানের ঐতিহাসিক নিদর্শনসমূহ এবং ইসলামী ঐতিহ্যের চিত্রকর্ম।

বেশ কিছুদিন চেষ্টা সাধনার পর এইচ এম করিম হয়ে ওঠেন একজন দক্ষ আর্টিস এবং ক্যালিওগ্রাফার। বিচরণ করতে থাকেন তার স্বপ্নের রাজ্যে এবং তৈরি করে ফেলেন চোখ ধাঁধানো বেশ কয়েকটি চিত্রকর্ম ও ক্যালিওগ্রাফি। এরই মাঝে ডাক এসে যায় ওমানে জাতীয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে। ২০১৫ সালে আয়োজিত আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে বিশ্বের ১৮টি দেশের মধ্যে তিনি বাংলাদেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন। বয়ে নিয়ে আসেন মাতৃভূমির জন্য সম্মান। আন্তর্জাতিক এই প্রদর্শনীতে স্থান পায় তার ৮টি চিত্রকর্ম ও ক্যালিওগ্রাফি। আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে বাংলাদেশীর চিত্রকর্ম প্রদর্শিত হচ্ছে এই খবর শুনে ভিড় করতে থাকে প্রবাসী বাংলাদেশীরা। সবাই উৎসাহ দিতে থাকেন এইচ এম করিমকে। এ প্রসঙ্গে এইচ এম করিম বলেন, প্রদর্শনিতে প্রতিদিন শতশত স্বদেশী ও বিদেশীদের ভালোবাসায় আমি অবিভূত হয়ে পড়ি যা ভাষায় ব্যক্ত করার মতো নয়।

এইচ এম করিমকে ২০১৬ সালে ‘ মসকেট গালা এডুকেশন কাউন্সিল’ চিত্রকর্ম ও ক্যালিওগ্রাফির জন্য পুরস্কৃত করেন এবং তাকে দেয়া হয় ‘টেলেন্ট অব আর্টিস’ খ্যাতি।গালা এডুকেশন-এর ডিরেক্টর নাবিল আল সেলেমি আরবাব তাকে বিভিন্ন প্রদর্শনীতে অংশগ্রহন করতে সহযোগিতা করেন।

এদিকে আগামী-২০১৬ নিজুয়ায় জাতীয় দিবস উপলক্ষে নিজুয়াস্থ আরব ইনস্টিটিউট একটি আন্তর্জাতিক ক্যালিওগ্রাফি প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে, এই প্রদর্শনীতে এইচ এম করিম ডাক পেয়েছিল। এই প্রদর্শনীতে তার বেশ কয়েকটি চিত্র ও ক্যালিওগ্রাফি প্রদর্শিত হয়ছিল।

এইচ এম করিম তার কর্মের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়ে মাতৃভূমির জন্য সম্মান বয়ে আনলেও বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে কেউ কখনো তার সাথে যোগাযোগ করেননি। মসকেটস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে সহযোগিতা পেলে এইচ এম করিম ওমানসহ মধ্যপাচ্যের অন্যান্য দেশেগুলোতেও আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে অংশগ্রহন করতে পারবেন। আমাদের দেশের জন্যও বয়ে আনবেন আন্তর্জাতিক সম্মান।

ক্যালিওগ্রাফার এইচ এম করিম ভবিষ্যতে দেশে গিয়ে একটি আর্ট স্কুল খোলার ইচ্ছে ব্যক্ত করেন। সেখানে তিনি লেখাপড়া বঞ্চিত, অবহেলিত এবং অসহায় গরীব শিশুদের বিনে পয়সায় আর্ট ও ক্যালিওগ্রাফি শেখানোর ব্যবস্থা করবেন। বিনে পয়সায় তাদেরকে প্রশিক্ষণ দেবেন। সে স্বপ্ন পূরণে তিনি দেশবাসীর দোয়া কামনা করেন।