নাঈম ছিদ্দিকী আবির :

২০১৪সালের মার্চ মাস। উচ্চ শিক্ষার সোপানে পা দেওয়ার অন্তিম মূহূর্ত। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করবো এটা ভেবে নিজের মধ্যে বিশেষ কৌতুহল কাজ করছে। বরাবরের মত আমি খূব একটা ভাল ছাত্র বলে আজ ও নিজেকে দাবি করবো না, জিপিএ বলেন আর সিজিপি বলেন  বরাবরের মত অনেক কম আমার ,যার ফলশ্রুতিতে আমার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার ঠাই হয়নি। বাবার ইচ্ছা বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচ এস সি পাশ করার পর ডাক্তার বানাবে আমাকে, তাই তিনি উঠেপড়ে লেগেছেন, সিজিপিএ তুলনামুলক কম হওয়ায় সরকারী মেডিকেল পরিক্ষায় বসার সৌভাগ্য আমার হয়নি। বাবা প্রাইভেটে পড়াবেন বলে সিন্ধান্ত ও নিয়ে ফেলেন, সে অনুযায়ী সব ব্যবস্থা চলছিল। তথ্য প্রযুক্তির প্রতি নেশা আমার ছোট বেলা থেকেই, প্রথম নকিয়া ৫৫১১ সিরিজের মোবাইল এ সব ফাংশন নিমিষে মাথায় রেখে কাজ মত অদ্ভুদ ক্ষমতা আমার মধ্যে তৈরি হয়েছিল,নতুন কেউ মোবাইল কিনলে তাকে রিকুয়েষ্ট করে একটু ঘেটে দেখা এগুলা আমার নিত্য দিনের অভ্যাস ছিল, এছাড়া খেলনা গাড়ীকে ভেঙে তার ভিতর থেকে মোটর,তার এসব বের করে লাইট জ্বালানো ফ্যান ঘুরানো এসব নিয়ে যে কত বকা খেয়েছি বাসায় আমার ঠিক মনে নেই।আসলে এসব চিন্তাভাবনার পিছনে কার ভুমিকা আমি তখন ও বুঝতে পারিনি। আস্তে আস্তে এসব অদ্ভুদ চিন্তা ভাবনা আর পাগলামীর ভুত গুলো পড়াশোনার চাপে অতল গহবরে হারিয়ে যায়। দেশে তখন ১/১১ এর ভয়াবহ পরিস্তিতি,ভর্তি প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার পরে ও মা বাবার একমাত্র সন্তান হিসেবে ঢাকা চট্রগ্রামের বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাকে পড়ানো হয়নি শুধূ নিরাপত্তার কথা ভেবে। কক্সবাজারের নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে এমন সংবাদ আর আমার কাজিন সুজন ভাইয়া,আর মামাদের আবদার যে আমি যেহেতু তথ্যপ্রযুক্তির প্রতি বেশি ঝুকেঁ পড়েছি তাই আমাকে আইটি বিষয়ক কোন বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করালে লাইফে শাইন করতে পারবো, ওনারা একথা  বলাতে প্রথমে বাবা রাজি হয়নি পরে রাজি হয় অবশ্য এর পিছনে আমার ও হাত ছিল, ছোট বেলায় নিজের মনে মনে ইঞ্জিনিয়ার বানানো স্বপ্ন আমার মধ্য ছিল তাই আমি ও আর সেই সুযোগ হাত ছাড়া করিনি।

আমার ব্লগ মোবাইল অ্যাপ এ পড়তে গুগল প্লে থেকে অ্যাপটি ডাউনলোড করুন

অবশেষে ভর্তি হই বাসার নিকটবর্তি শহর কক্সবাজারের কলাতলী এলাকায় গড়ে উঠাুকভ দেশের দক্ষিন পশ্চিমাঞ্চলের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে, সিএসই (কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং) বিষয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রথমদিকে আমি ভাবতাম কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং মানে শুধূ কম্পিউটার নিয়ে কাজ করা, পাশ করে কম্পিউটার ঠিক করতে পারা এসব আর কি। কিন্তু পরবর্তিতে বুঝতে পারি আসলে এই বিষয়ের গভীরতা কতটুকু। ভর্তি হওয়ার প্রথম সেমিষ্টার কোন রকমে শেষ করার পর শুরু প্রোগ্রামিং এর মত নতুন বিষ যুক্ত অধ্যায়, প্যারা লাগতো মাথায় কিছুই ঢুকে না। শিক্ষক ছিল মাত্র ২ জন, শ্রদ্কেয় নুসরাত জাহান ম্যাম আর শ্রদ্বেয় মেহেদী হাসান স্যার। শ্রদ্কাভরে স্বরণ করছি ওনাদের। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই ডিপার্টমেন্ট কে একটা ভাল অবস্থানে আনার পিছনে ওনাদের অবদান অনস্বীকার্য, ডিপার্টমেন্ট যাত্রা শুরু করে ওনাদের হাত ধরেই। আমি ২য় ব্যাচ এ ভর্তি হই, ক্লাসে মাত্র ৫জন শিক্ষার্থী। সি প্রোগ্রামিং শিখার সময় জানতে পারি সফটওয়্যার বানানোর জন্য বিশেষ কৌশল  সিএসসি পড়ে রপ্ত করা যায় যার নাম হল প্রোগ্রামিং। বেশ ভয় পেতাম, কারন আমি বুঝতাম না কিছূই, ক্লাসে বকা তো লেগেই আছে প্রতিদিন প্রতিজ্ঞা আজ বাসায় গিয়ে ফাটিয়ে দিবো কিন্তু বাসায় গিয়ে আর প্রোগ্রামিং শেখা হয়না। সি, সি++, সিশার্প,এসপিডট.নেট এর মত অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ৩/৪ সেমিষ্টার এ পড়েছি, অনেক স্মৃতি আছে বাকিটা ইতিহাস, এখানে একটা উল্লেখ না করলেই নয়, ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী সাইফুল্লাহ ভাল প্রোগ্রামিং পারদর্শিতা তার, সি++(অবজেক্ট অরিয়েনটেড প্রোগ্রামিং) এর ল্যাব পরিক্ষায় সে আমাকে প্রক্সি দিয়ে আমার প্রোগ্রাম সল্ভ করে আমার পরীক্ষায় নিশ্চিত ফেল হওয়ার হাত থেকে বাঁচিয়েছিল, সে এখন আমার টিম এ কাজ করে। এই সাবজেক্ট এর ভাইভাতে আমাকে জিঞ্জেস করা হয়েছিল “কনষ্ট্রাক্টর কি?” আমি কোন রকমে কি না কি বলে যে সেদিন ভাইবা তে পাশ করি আল্লাহ জানে। এই ছিল আমার প্রোগ্রামিং এ দশা।

আমার কিছু অ্যাপ এ স্ক্রীনশর্ট

৫ম সেমেষ্টার এ সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট ছিল আমাদের, আমাদের হাসান স্যার এর কোর্স কো-অরডিনেটর ছিলো। তখন আমি অফলাইনে ডেস্কটপ বেইসড একটা অ্যাপ্লিকেশনে কাজ করি, আমার প্রজেক্ট ছিল “সুপারশপ মেনেজমেন্ট সিস্টেম”। ডাটাবেইজ সিস্টেম আর এই সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট ২সেমিষ্টার মিলিয়ে বেশ কিছূ মডিউল দাড়ঁ করাতে পেরেছিলাম, সেমিষ্টার শেষ হওয়াতে আর বেশি দুর এই বড় প্রজেক্ট নিয়ে আগাতে পারিনি। মুলত এই প্রজেক্ট এ কাজ করতে গিয়ে আমাকে কোড লিখতে হয়েছে, আর কোড করে কোন আউটপুট সঠিকভাবে পাওয়ার মজাটা আমি বুঝতে পারি মজা লাগতো,তখন থেকে আস্তে আস্তে মুলত প্রোগ্রামিং জিনিসটা আমার মধ্যে জায়গা নেয়। হাসান স্যার যে সেমিষ্টার এ চলে যাবেন সেই সেমিস্টার এর এই প্রজেক্ট এর শেষ মডিউল ইনভয়েস আর রিপোর্ট জেনরেট করা এই মডিউল এ আমি স্যারকে দেখাতে ব্যর্থ হয়, তবে আমি বেশ ভাল ডিজাইন করতে পারতাম সফটওয়্যার লেআউট, স্যার আমার প্রসংশা করতো আর বলতে শুধূ ডিজাইন দিয়ে হবে না, প্রোগ্রামিং ও জানতে হবে। তারপর নিজে নিজে সিন্ধান্ত নি , যে আমি ডেস্কটপ এ না মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন নিয়ে এ কাজ করবো। যাওয়ার আগ মুহুর্তে স্যার আমার ল্যাপটপ এ অ্যানড্রয়েড এর সফটওয়্যার ইনষ্টল করাতে দেখে আমাকে বলে ছিল, শিখলে এই কাজ ভাল করে শিখ, অনলাইনে অনেক রিসোর্স আছে। তখন থেকে আমি এনড্রয়েড এর পিছনে উঠে পড়ে লাগি। বিশ্ববিদ্যালয়ের আমার সকল শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ, যারা সবসময় আমাকে অনুপ্ররনা যুগিয়েছেন।

জাতীয় পত্রিকায় কক্সটিউনস ল্যাব নিয়ে নিউজ

প্রথমে স্বরণ করি সেই সব মানুষদের যাদের অণুপ্রেরণা আর সহযোগীতা না পেলে আমি এতদুর আসতে পারতাম না। প্রথমে শ্রদ্বেয় মেহেদী হাসান স্যার আমার প্রোগ্রামিং এর হাতে খড়ি ওনার হাত ধরেই, শ্রদ্বেয় মোশাররফ রুবেল ভাইয়ার (জাভা আর ইউটিউব এনড্রয়েড টিউটোরিয়াল), শ্রদ্বেয় জাকির হোসাইন ভাইয়ার ব্লগ (জাকিরের টেক ডায়েরি), শ্রদ্বেয় হাসান আবদুল্লাহ ভাইয়ার ব্লগ(হাসানের রাফখাতা), সানি সুলতান ভাইয়ার(প্রোগ্রামিং স্কুল ইউটিউব টিউটোরিয়াল)। অনেক জ্বালিয়েছি আমি ওনাদের এমনকি এখনো জ্বালায়। আমার মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট এর ক্ষেত্রে সব চেয়ে বড় ভুমিকা রাখছে কমিউনিটির ভাইব্রাদ্রার্সরা, বাংলাদেশের রুবেল,জাকির, হাসান আবদুল্লাহ, সানি সুলতান ভাই সহ বড় বড় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার আর এই  ফিল্ড এ বস দের সাথে আমার নিয়মিত যোগাযোগ, ভাল সম্পর্ক। তারা আমাকে প্রতিনিয়ত সাহায্য করেই যাচ্ছে। আমার ব্যার্থতার গল্প এখানেই শেষ নয়, প্রথমে অ্যানড্রয়েড এ কাজ করার জন্য কম্পাইলার(অ্যানড্রয়েড স্টুডিও) আমি পুরু এক সেমিষ্টার চেষ্টা করে ও আমার ল্যাপটপ এ ইনষ্টল করতে ব্যার্থ হই। তার পর আস্তে আস্তে আমার চেষ্টা চলতে থাকে। আমি কখনো হাল ছাড়িনি। অ্যাপ রান করতে পারিনি অনেক দিন শূধু ইমোলেটর কাজ না করার কারনে। Core2due + 2GB Ram কনফিগারেশন ল্যাপটপ এ আমি প্রথম অ্যানড্রয়েড অ্যাপ রান করি আমার রিয়েল মোবাইল ডিভাইসে শূধূ একটি লিখা Hello World লিখে । প্রথম অ্যাপ আমার ফোন এ চলতে দেখে আমার তো আনন্দের শেষ নেই। চলতে থাকে আমার চেষ্টা, এমন কিছু কিছূ টপিক আছে যেগুলো শিখতে গিয়ে শুধু না পারার কারনে আমি কেঁদেছি। রাত দিন বাসার কোণে ল্যাপটপ নিয়ে পড়ে ছিলাম, এইকাজ শিখতে গিয়ে আমি কত রাত ঘুমাইনি আমার জানা নেই। গত ঈদে/কোরবানীর ঈদ এ আমি কোন আত্নীয়ের বাসায় যায়নি এমনকি কৌশল বিনিময় করতে পারিনি শুধু মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন আর প্রোগ্রামিং এ নেশায় পড়ে। নাওয়া খাওয়া ও করিনি অনেক সময়, আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে তেমন বিশেষ কোন বন্ধু নেই, নেই একঝাঁক সহপাঠি, গত একবছর আমি ঘোরাফেরা আড্ডা এসব নিয়ে আমি নিজেকে ব্যাস্ত রাখিনি, সময় নষ্ট করিনি, যা সময় ব্যায় করেছি সব নিজের জন্য কিছু শিখতে। এই একটি বছর আমার জীবণকে বদলে দেয়, জীবণের মোড় বদলে যায়,শুরু হয় আমার নতুন জীবনের অগ্রযাত্রা। হতাশা দূর হতে শুরু করে। প্রোগ্রামিং কে ভয় পাওয়া আমি এখন প্রোগ্রামিং না করলে ভাল থাকি না।

কক্সবাজারের প্রথম আইটি ও ফ্রিল্যান্সিং ফার্ম, কক্সবাজার টেক এ “ফ্রিল্যান্সিং ও এনড্রয়েড অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট ক্যারিয়ার” বিষয়ক সেমিনার নিচ্ছিলাম।

লক্ষ্য ছিল আমাকে সফটওয়্যার নিয়ে বড় কিছু হতে হবে। নিজেকে সফটওয়্যার প্রোগ্রামার/ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার  হিসেবে দাবি করবো। গত দেড় বছর ধরে আমি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন নিয়ে কাজ করছি। অনেক কিছূ রপ্ত করেছি, অনলাইন ও অফলাইন দুধাপে অ্যাপ তৈরি করেছি, কাজ শিখছি,শিখে যাচ্ছি। তারপর ও আমার মনে হচ্ছে আমি এখন ও কিছুই শিখিনি। কক্সবাজার শহরে আমি প্রথম অ্যাপ নিয়ে কাজ করতে, শিখতে গিয়ে কারো কাছ থেকে বিন্দু মাত্র সাহায্য পাইনি ।যা শিখেছি সব ঢাকার ভাইয়াদের আর গুগল এ অবদান সাথে আমার অদম্য চেষ্টা। আমার দিন দিন নতুন কিছূ শেখার স্পৃহা বাড়ছে। সত্যি কথা বলতে আমার এখন প্রতিদিন কিছূ না কিছূ না শিখলে পুরো দিনটাই মাটি লাগে। প্রতিদিন কিছূ না কিছু শিখছি নিজের জন্য, নিজের স্মার্ট ক্যারিয়ার করার জন্য। আমি প্রথমে, প্রোগ্রামিং কে কাজে লাগিয়ে ফ্লাশলাইট, কম্পাস,এইজ ক্যালকুলেটর. প্রাথমিক চিকিৎসা,নাম্বার সিস্টেম কনভার্টার  , মাহে রমজানসহ  কিছু অধিক ব্যবহার্য মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করি। গুগল প্লে তে ডেভেলপার একাউন্ট না থাকায় আমার এই অ্যাপগুলো বাংলাদেশের একমাত্র সফটওয়্যার মার্কেট “অ্যাপবাজার এ ” অবমুক্ত করি। এছাড়া আমি, কক্সবাজারের প্রথম নিউজ পোর্টাল কক্সবাজার নিউজ ডট কম এর জন্য অফিসিয়াল অ্যাপ তৈরি করি। পরবর্তিতে আমার এই অ্যাপগুলো বাংলাদেশের একমাত্র সফটওয়্যার মার্কেট “অ্যাপবাজার এ ” সেরা অ্যাপ হিসেবে টপ ৫০শে রেংকিং করে। এরপর কক্সবাজারের লোকাল মিডিয়ার নজরে পড়ি আমি, আমাকে নিয়ে প্রতিদিন অনলাইন আর পেপারে অনেক নিউজ আর ফিচার তৈরি করে তারা। আমার আগ্রহ আরো বাড়তে থাকে। এরপর সিএসই’র ৩য় ব্যাচ এর ৪জন শিক্ষার্থী নিয়ে আমি কক্সটিউনস ল্যাব নামে একটি স্টার্টআপ টিম তৈরি করি। তারা হল, ছোটভাই সাইফুল্লাহ, ফয়সাল, মান্নান আর মামুন, আমার এই অগ্রযাত্রায় এই মানুষগুলোর সহযোগীতা ও  অবদান অনস্বীকার্য।

কক্সবাজারের লোকাল পত্রিকায় কক্সটিউনস ল্যাব নিয়ে নিউজ

তাদের নিয়ে টিম ওয়ার্ক করে কক্সবাজারবাসীর জন্য কক্সবাজারের বাস সেবা ও বুকিং নিয়ে তৈরি করি “কক্সবাজারের বাস” নামক অ্যানড্রয়েড অ্যাপ। এই প্রজেক্ট এ প্রায় ১ মাস বাসকাউন্টার এ গিয়ে গিয়ে ডাটা কালেক্ট করে কাজ করেছি আমরা, গুগল প্লে তে আমাদের স্টার্টআপ কক্সটিউনস নিয়ে একাউন্ট করি ও প্রথম গুগল প্লে তে এই অ্যাপ রিলিজ করি।  ফলশ্রুতিতে, কক্সবাজারের বাস অ্যাপ নিয়ে লোকালসহ জাতীয় মিডিয়াগুলোতে আমাদের কে নিয়ে নিউজ হয়, বিভিন্ন ফিচার বের হয়। এটা ভাবতে অবাক লাগে মাঝে মাঝে যে আমি কক্সবাজারের প্রথম কোন ব্যাক্তি যে সফটওয়্যার তৈরি করেছি এবং আমি ই প্রথম যে কক্সবাজার ইন্টান্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সিএসই ডিপার্টমেন্ট হয়ে প্রথম মোবাইল অ্যাপ তৈরি করার গৌরব অর্জন করেছি। এরপর ২০১৭এর শুরুর দিকে কক্সবাজারের একমাত্র আইটি ও ফ্রিল্যান্সিং ফার্ম কক্সবাজার টেক এর প্রফেশনাল সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট টিম হিসেবে আমি আমার টিম কক্সটিউনস ল্যাব নিয়ে যোগদান করি। আমি বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানে টিম লিডার ও লিড সফটওয়্যার হিসেবে কাজ করছি, সাথে একজন মোবাইল অ্যাপ ট্রেইনার হিসেবে কাজ করছি। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট ক্যারিয়ার নিয়ে বেশ কিছু সেমিনার ও নিয়েছি আমি। বেশ কিছু কলেজ, ও শিক্ষাপ্রতিষ্টানে সেমিনার বিষয়ে প্রক্রিয়া চলছে। আমার অর্জিত ক্ষুদ্র জ্ঞান গুলোতে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে আমি লিখালিখি অর্থাৎ ব্লগিং শুরু করি ২০১৭এর শুরুরদিকে অনুপ্রেরণা পেয়েছি শ্রদ্বেয় জাকির হোসাইন ভাইয়ার ব্লগ (জাকিরের টেক ডায়েরি) দেখে। প্রতিদিন কাজ করতে করতে আমার প্রোগ্রামিং শেখা। প্রথম দিকে রিসোর্স এর অভাব ছিল অনেক। কাজের অগ্রগতি আরো বৃদ্বি পেত যদি আশেপাশে এমন কাউকে পেতাম যে আমাকে হেল্প করতে পারে হাতে কলমে । যতটুকু হেল্প পেয়েছি সব কিছূ রিমোটলি। এই বছরের মার্চ এর দিকে শত ব্যস্ততার মাঝে আমার অনুরোধে ঢাকার ডুয়েট এর সিএসইর ছাত্র ও মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপার শাওন ভাই ২ দিনের জন্য কক্সবাজার আসেন, কেবল ওনার কাছ থেকে আমার হাতে কলমে অ্যানড্রয়েড এর সার্ভার বেইসড কিছু কাজ শেখার সুযোগ হয়েছে। এভাবে চলছে আমার পথচলা।

কক্সবাজার টেক ও আমার টিম কক্সটিউনস ল্যাব

বর্তমানে আমার তৈরি করা প্রায় বেশ কিছূ মোবাইল অ্যাপ গুগল প্লে তে। সর্বশেষে বর্তমানে কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির জন্য অটোমেটেড মোবাইল অ্যাপ “সিবিআইইউ স্মার্টঅ্যাপ” নিয়ে নিয়ে কাজ করছি। এই মোবাইল অ্যাপ দিয়ে আমি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের ইতিটানবো বলে আশা রাখছি। এত কষ্ট করে, চড়ায়উতরায় পেরিয়ে আজ আমি অনেক খুশি ও গর্ববোধ করি কারন আমি ব্যার্থতাকে পিছনে ফেলে সামনে দিকে এগিয়ে গিয়েছি, অনেক বাধা এসেছে আমার সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট এ আসার পেছনে, অনেক এ হাসি ঠাট্টা করেছে, বলেছে কক্সবাজার এ থেকে সিএসই পড়ে করলেও আর কি করতে পারবি, মাঝে মাঝে অনেক হতাশ হতাম আমি কি আমার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবো তো। অনেকে প্রকাশ্যে না হলে ও গোপনে বিরোধীতা করেছে। আসলে কেউ এগিয়ে যাক এটা তারা কেউ চাইনা। আমার এই ব্যার্থতা থেকে সফলতার পিছনে গল্প গুলো মূল থিম এতদিন পর খুজেঁ পেয়েছি, সবচেয়ে বড় যে ব্যাপার সেটি হল আমি নিজে মোটিভেটেড ছিলাম। কখনো সিজিপিএ নিয়ে ভাবিনি, শুধু চেষ্টা করে গেছি নিজের জন্য কিছু শেখার, পরিক্ষার পাশের জন্য না, যারা সারাবছর পড়াশোনা করেছে তাদের সেই পড়াশোনা আমি পরীক্ষার  ২দিন আগে পড়ে তাদের মত মার্কস পেয়ে পরীক্ষায় উত্তির্ণ হয়। প্রাতিষ্টানিক শিক্ষা থেকে যা পড়েছি বা পড়ছি সব নিজের কনচেপ্ট ডেভেলপ করার জন্য। নিজের স্কিল ডেভেলপ ও ক্যারিয়ার নিয়ে আমি খুবই সিরিয়াস সব সময়। পারিপার্শিক অবস্থা আর নিত্যনতুন আপডেট টেকনোলজীর সাথে আমি সর্বদা আপডেট থাকতে ভালবাসি, নতুন কোন প্রযুক্তি এলেই সেটা নিয়ে পড়াশোনা করি আমি আর সাথে সাথে ইমপ্লিমেন্ট করার চেষ্টা করি। ঘন্টার পর ঘন্টা আমার টেবিল এ বসে কাজ করার অভ্যাস হয়ে গেছে এখন, প্রথম দিকে খুব বিরক্ত লাগতো আমার। একটা বিশ্ববিদ্যালয়, একটা বই কখনো নিজের ক্যারিয়ার গড়তে পারেনা, নিজের ভবিষৎ নিজেকেই তৈরি করে নিতে হয়, আমরা সবাই প্রতিযোগীতার মাঠের প্রতিযোগী সুতরাং একটু ছাড় দিলেই পরাজিত হওয়া ছাড়া, পিছিয়ে পড়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই। বিশেষ করে আইটি স্টুডেন্টদের বেশি স্কীল ডেভেলপ করতে হয়। বর্তমানে সফটওয়্যার কোম্পানিগুলোতে শুধূ যোগ্য ও স্কীল পার্সনদের বেশি অগ্রাধিকার। যে যার যার বিষয়ে যত দক্ষ সে সফটওয়্যার কোম্পানিগুলোতে সফল হতে পারবে। চেস্টা করছি ভাল কিছূ করার। সাধারন মানুষ গুলোর মাঝে থেকে অসধারন কিছু করবো, ভাল কিছূ করবো এই আশা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি, সকলের সহযোগীতা ও দোয়া কামনা করছি। আমার এত লম্বা লিখাটুকু কষ্ট করে পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।