মোঃ রেজাউল করিম, ঈদগাঁও, কক্সবাজার :

ইসলামপুরের দরিদ্র আবদুল মালেক (৬৫) চট্টগ্রামের কুমিরায় পরিকল্পিত হত্যাকান্ডের শিকার বলে সন্দেহ স্বজনদের। ২৩ জুন সকালে স্থানীয় কৈলাশের ঘোনা জামে মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এর আগে উক্ত মসজিদ প্রাঙ্গনে তার নামাজে জানাযায় পাড়ালিয়া ও স্বজনরা অংশ নেন। তার মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে পরিবার, আত্মীয় স্বজন ও প্রতিবেশীদের মধ্যে নানা প্রশ্নের উদ্রেক করেছে। নিহত ব্যক্তি ইসলামপুর ৫নং ওয়ার্ড জুমনগরের মৃত ওয়াজ উদ্দীনের পুত্র। তারই প্রতিবেশী ইসলামী ব্যাংকের সিনিয়র কর্মকর্তা (চট্টগ্রামে কর্মরত) মো. মিজানুর রহমান জানান, বিগত আড়াই বছর যাবত আবদুল মালেক চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুন্ড উপজেলার কুমিরা জে.এস ট্রেডার্সে নৈশ প্রহরী পদে চাকুরী করে আসছিলেন। প্রতিষ্ঠানটি জাহাজ ভাঙ্গার দায়িত্বে নিয়োজিত। এর মালিক চট্টগ্রাম শহরের চট্টেশ^রী রোডের শিল্পপতি শওকত হোছাইন ওরফে ডিসকো শওকত। একই কোম্পানীতে এর ২ বছর আগে থেকে চাকরী করে আসছিল ইসলামপুর ইউনিয়ন জুম নগরের আবদুল জলিলের পুত্র নুরুচ্ছফা ওরফে বজল (২৮)। সে নিহত মালেকের পরিবারে খবর দেয় যে, গুরুতর অসুস্থ হওয়ায় তাকে কুমিরা থেকে বাড়িতে পাঠানো হচ্ছে। তার খবরের ভিত্তিতে মালেকের স্ত্রী ও জামাতা তাকে আনার জন্য চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। পরে আবার তাদের খবর দেয়া হয় যে, মালেক চকরিয়ায় একটি শ্যামলী পরিবহনের গাড়ীতে রয়েছে। উল্লেখিত ২ জন সেখানে গিয়ে দেখতে পান যে, মালেক চশমা পরিহিত। তার কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে তাকে চকরিয়ার সিটি হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন। পরে স্ত্রী ও জামাতা তাকে জুমনগরে নিয়ে এসে জানাযা ও দাফনের ব্যবস্থা করেন। ইতিমধ্যে স্থানীয় লোকজন দেখতে পান যে, লাশ থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছে। এতে তাদের সন্দেহ দানা বাঁধে। এক পর্যায়ে দাফনের পর মালেকের সহকর্মী নুরুচ্ছফাকে জিয়ারত করতে তার কবরে নেয়া হয়। পরে কৌশলে তাকে মালেকের বাড়ীতে এনে উপস্থিত লোকজন ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে একেক বার একেক কথা বলতে থাকে। সে স্বীকার করে যে, শিপ ইয়ার্ডে জাহাজের মাল চুরি নিয়ে তাদের মধ্যে বাড়াবাড়ি হয়। পরিবারের লোকজন ধারণা করছেন, নুরুচ্ছফা ওরফে বজলসহ জনৈক আজিজ ও আরো কয়েকজন উক্ত মাল চুরির সাথে জড়িত। বিষয়টি মালিক ও কর্তৃপক্ষের যাতে কর্ণগোচর না হয় সেজন্য তারা মালেককে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে যাত্রী সেজে তার লাশ বাড়ীতে পৌঁছানোর ভান করে। বজল নিহত মালেক রক্তবমী ও স্ট্রোক করে বলে জানালেও কেউ তা প্রাথমিকভাবে বিশ^াস করেনি। ঘাতকরা কেমিক্যাল দিয়ে প্রথমে তার রক্তক্ষরণ বন্ধ করলেও গোসলের সময় প্রচুর রক্তক্ষরণ হতে দেখা যায়। শেষে স্থানীয় লোকজন তাকে ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালামের হেফাজতে নেয়। সেখান থেকে ঈদগাঁও পুলিশ এক চৌকিদার ও নিহতের স্বজনসহ ঘটনাস্থল সীতাকুন্ডে পাঠানো হয়। ব্যাংক অফিসার মিজান ও প্রতিবেশীদের বক্তব্য, আটক বজলকে রিমান্ডে নিলে ঘটনার প্রকৃত রহস্য বেরিয়ে আসবে। পারিবারিক সূত্র জানায়, নিহতের ৪ মেয়ে ও ২ ছেলে রয়েছে। জে.এস ট্রেডার্সের মালিক ডিসকো শওকত দেশে না থাকায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। ইসলামপুর চেয়ারম্যান আবুল কালামের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি এটি স্বাভাবিক মৃত্যু নয় জানিয়ে বলেন, লাশ থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণই প্রমাণ করে সে হত্যার শিকার। অন্যদিকে ঈদগাঁও পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র ইনচার্জ মো. খায়রুজ্জামানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, মালেক হত্যাকান্ডের শিকার কিনা তা এখনো বলা যাচ্ছে না। তবে যেহেতু তার পরিবারের লোকজন সন্দেহ করছেন সেহেতু অধিকতর তদন্তের জন্য সীতাকুন্ডের ওসির সাথে কথা বলে বজল ও নিহতের এক ছেলেকে সেখানো পাঠানো হয়েছে।