ডেস্ক নিউজ:
প্রবল বর্ষণের ফলে রাঙামাটিতে ভূমিধসে নিমেষেই চুরমার করে দিয়েছে পাহাড়ে বসবাসরত মানুষের ঘরবাড়ি। সংকট আর আতঙ্কের শহরের মানুষগুলো এখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টারত। তবুও বৃষ্টির হলেই বেড়ে যায় আতঙ্ক। জেলার ১৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ২৬’শ মানুষ।
সবজি ও মুদিমাল থেকে শুরু করে সব নিত্য পণ্যের দাম নাগালের ভিতর রাখার জন্য শহরে গত তিনদিন ধরে কাজ করছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। বাজার গুলেতে ঘুরে দেখা গিয়েছে অনেকই নাগালে এসেছে নিত্য পণ্যের দাম। তবে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী দূর্যোগকে ব্যবহার করে কৃত্রিম সঙ্কটে তৈরি করেছিলেন বলে অভিযোগ ক্রেতাদের। কমেছে শহরে অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভাড়াও। আগের স্বাভাবিক ভাড়াই নিচ্ছেন চালকরা।
এদিকে মৌসুমি ফল হিসেবে আম, কাঁঠাল, আনারস, কলা রপ্তানি না থাকায় পঁচে যাচ্ছে বলে জানান ফল ব্যবসায়ীরা। একারণে রীতিমত কাজ করতে পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ শ্রমিকদের।
বিচ্ছিন্ন রাঙামাটিতে যোগাযোগের বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে কাপ্তাই-রাঙামাটি রুটে তিনটি লঞ্চ চলাচল করার উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন। ফ্রি-ভাড়া করে দেওয়া হয়েছে পণ্য আমদানিতে। সব মিলে বিচ্ছিন্ন রাঙামাটি এখন ঘুরে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টায়।
মৌসুমি ফল কিনতে এসে উজ্জ্বল তনচংগ্যা জানান, দুর্যোগ পরবর্তী এই সময়ে পাহাড়ে অবস্থা খুবই খারাপ! ফল কিনতে এসে দেখেছি ফলের দাম আগের থেকে সস্তা। দূর পাহাড় থেকে আসা লোকজন ঠিক মত তাদের ফলমূলও বিক্রি করতে পারছেনা।
ফল ব্যবসায়ী ইব্রাহিম জানান, আগে আমরা এখান থেকে ফল কিনে বিক্রির জন্য চট্টগ্রাম কিংবা দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠাতাম। এখন সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হওয়ায় আমাদের ব্যবসায় ঘুণে ধরেছে। মজুদে থাকা ফলও পঁচে গেছে। কোনমতে খেয়েপরে বেঁচে আছি।
রূপায়ন স্টোরের স্বত্বাধিকারী যতীন্দ্রলাল চাকমা জানান, মজুদ মালামাল বিক্রি করছি। শুনেছি কাপ্তাই দিয়ে পণ্য-মালামাল আনা যাবে, তবে সেই খরচ বহন করে ব্যবসায় লাভ হবে কিনা জানি না!
চালের আড়তদার জয় দেব জানান, আমার স্টকে যথেষ্ট চাল আছে। যে চাল আগে ২২০০ টাকা ছিল, তা আমি এখনো তাই বিক্রি করছি।
বাজার করতে এসে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান অরুণ কান্তি চাকমা বলেন, গত সপ্তাহের চেয়ে এখন বাজার দর ঠিক হয়ে এসেছে। ইতিমধ্যে রাঙামাটিতে প্রশাসনের সহায়তায় তেলের দোকান গুলোতে প্রায় ত্রিশ হাজার লিটারের মত তেল সরবরাহ করা হয়েছে।
এদিকে রোববার সকালে জেলা প্রশাসক মানজারুল মান্নান এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বাজারে খাদ্যেরও কোনও সংকট নেই। যোগাযোগ সমস্যা সমাধানে কাপ্তাই চ্যানেলে লঞ্চের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পণ্য পরিবহনে বিনামূল্যে লঞ্চের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বর্তমান রাঙামাটির যে সমস্যা তা সমাধানের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসনের সাথে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশ প্রশাসন সহযোগিতা করে যাচ্ছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ সহকারী প্রকৌশলী আবু মুছা বলেন, পাহাড়ধসে সাপছড়ি এলাকায় ১৫০ ফুট রাস্তা ধসে গেছে। এই ১৫০ ফুট রাস্তা সম্পূর্ণ পুনঃনির্মাণ করতে হবে। তবে হালকা যানবাহন দুই-এক দিনের মধ্যেই চলাচল করতে পারবে। আবহাওয়া ঠিক থাকলে ১০-১৫ দিনের মধ্যে রাস্তা নির্মাণ করা সম্ভব বলে জানান সড়ক ও জনপদ বিভাগের এই প্রকৌশলী।
প্রসঙ্গত, সোমবার সকাল থেকে টানা বর্ষণের পর মঙ্গলবার রাতে চট্টগ্রামসহ পার্বত্য এলাকার পাঁচ জেলায় পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। এতে শনিবার পর্যন্ত রাঙ্গামাটিতে ৫ সেনা কর্মকর্তাসহ মৃতের সংখ্যা ১১৫ জনে দাঁড়িয়েছে।
গত মঙ্গলবার থেকে চট্টগ্রামসহ পার্শ্ববর্তী জেলা খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের সাথে এখনো সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। কাপ্তাই লেকের পানি অতিমাত্রায় বৃদ্ধি হওয়ায় গত শুক্রবার রাত থেকে ১৬টি স্পিলওয়ের ১৮ ইঞ্চি দরজার ৬ ইঞ্চি করে খুলে দেওয়া হয়েছে।