বন্যা পরিস্থিতির মারাত্বক অবনতি
নুরুল কবির বান্দরবান থেকে :
বান্দরবানে প্রবল বর্ষণের ফলে পাহাড় ধসে পৃথক ঘটনায় শিশু-মা-মেয়েসহ অন্তত ৬ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় কমপক্ষে পাঁচজন আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার ভোরে শহরের কালাঘাটা ও লেমুঝিড়ি এবং আগাপাড়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন, শহরের লেমুঝিড়ি জেলে পাড়া এলাকার আবদুল আজিজের স্ত্রী কামরুন্নাহার বেগম (৩৫), তার মেয়ে সুখিয়া বেগম (৮), কালাঘাটা এলাকার রেভা ত্রিপুরা (২২), লেমু ঝিড়ি আগাপাড়া এলাকার একই পরিবারের তিন শিশু- শুভ বড়ুয়া (৮), মিতু বড়ুয়া (৬) ও লতা বড়ুয়া (৫)। ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়রা জানায়, টানা বর্ষণের ফলে মঙ্গলবার ভোরে দিকে শহরের লেমু ঝিড়ি জেলেপাড়া এলাকায় পাহাড়ের মাটি ধসে ঘরের ওপর পড়লে মা কামরুন্নাহার বেগম ও মেয়ে সুখিয়া বেগম মারা যায়। এ সময় কামরুন্নাহারের স্বামী আবদুল আজিজও গুরুতর আহত হন। তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। প্রায় একই সময়ে লেমু ঝিড়ি আগাপাড়া এলাকায় পাহাড় ধসে লাল মোহন বড়ুয়া নামে এক ব্যক্তির ঘরের ওপর পড়লে একই পরিবারের তিন শিশু সন্তান- মিতু, শুভ ও লতার মৃত্যু হয়। এ ছাড়া রাতে প্রবল বর্ষণের সময় পৌর এলাকার কালাঘাটা কবরস্থানের পাশে ঘরের ওপর মাটি চাপা পড়লে রেভা ত্রিপুরা নামে বান্দরবান সরকারি কলেজের ছাত্র নিহত হন। এ সময় আরো চার কলেজ ছাত্র আহত হন। এরা হলেন, বীর বাহাদুর ত্রিপুরা, সূর্য চাকমা ও প্রশেন ত্রিপুরা। পরে তাদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। জানা গেছে, আহতরা সবাই ওই এলাকায় একটি ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতেন। নিহত রেভা ত্রিপুরা রাতে তাদের কাছে বেড়াতে এসেছিলেন। ফায়ার সার্ভিসের সহকারী স্টেশন কর্মকর্তা স্বপন কুমার ঘোষ জানান, খবর পেয়ে দমকল বাহিনীর সদস্যরা উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে। তবে প্রবল বৃষ্টি ও ধসে পড়া মাটির গভীরতা বেশি হওয়ায় মা-মেয়ের লাশ এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। মাটি খুঁড়ে তাদের লাশ বের করার চেষ্টা চলছে।
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে। ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে খোঁজ নেয়া হচ্ছে। এদিকে, প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে জেলার সাংঙ্গু, এবং লামা মাতামুহুরী ও নাইক্ষংছড়ির বাঁকখালী নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পাহাড়ি ঢলে জেলা শহর, লামা ও আলীকদম উপজেলার অধিকাংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব এলাকার দুই সহস্রাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। সড়কের ওপর পাহাড় ধসে পড়ায় এবং পানি জমে যাওয়ায় বান্দরবানের থানছি, রুমা, লামা ও আলীকদম উপজেলার সড়ক যোগযোগ বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া বান্দরবানের সঙ্গে রাঙ্গামাটির সড়ক যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। দুর্গতদের অনেকে পরিবার নিয়ে উঁচু স্থান ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছেন। এদিকে,বন্যায় কবলিত জেলার সদরের মেম্বারপাড়া,বালাঘাটা,ইসলাসপুর,কাশেমপাড়া,ওয়াদাব্রীজ এলাকা গুলো পরিদশন করেন জেলা প্রশাসক,পৌর মেয়র উপজেলার চেয়ারম্যানসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা। প্রসঙ্গত, বান্দরবান পার্বত্য জেলার বিভিন্ন উপজেলায় প্রতিবছর পাহাড় ধসে নিহত ও আহত হবার ঘটনা ঘটে, তাই টানা বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে পাহাড়ের পাদদেশ থেকে স্থানীয়দের সরে যেতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করে জোর প্রচারণা চালানো হয়।