বিশেষ প্রতিবেদক:
অনেক সরকারি-বেসরকারি বিশেষায়িত হাসপাতাগুলোতে এখনো মা ও শিশু চিকিৎসায় পরিপূর্ণ হয়ে উঠেনি। বিশেষ করে জেলা সদর ও মফস্বলে মা ও শিশু চিকিৎসার এখনো নাজুক। চিকিৎসক থাকলে সেবা থাকে না; সেবা থাকলে সঠিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার অভাব বড়ই। এতে করে অনেক মা ও শিশু ভালো ও উন্নত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত থেকে যায়। কক্সবাজারের মা ও শিশুদের সব ধরণের ভালো ও উন্নত চিকিৎসা এবং সেবা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে হোপ হসপিটাল। এই হাসপাতালটি দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে মা ও শিশুর স্বাস্থ্য নিয়ে বিশেষভাবে কাজ করে আসছে। এতে কক্সবাজারের একটি বিশাল জনগোষ্ঠীর আস্থায় পরিণত হয়েছে হাসাপাতালটি।
হাসপাতাল সূত্র জানা গেছে, মূলত মা ও শিশু স্বাস্থ্য নিয়ে হাসপাতালটি যাত্রা শুরু। ১৯৯৯ সালে মা ও শিশু সেবা নিয়ে ‘কক্সবাজার মা ও শিশু হাসপাতাল’ নামে হাসপাতালটি কক্সবাজারে মা ও শিশুর চিকিসায় এক নব দিগন্তের সূচনা করেছিলেন। তবে সময়ের সাথে চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় এই হাসপাতালে সব ধরণের চিকিৎসা শতভাগ চালু করা হয়। তারপরও মা ও শিশু স্বাস্থ্যসেবাকে বিশেষ ভাবে রাখা হয়েছে। অন্যান্য রোগীর চিকিৎসার পাশাপাশি মা ও শিশু চিকিৎসাকে অত্যন্তের গুরুত্বের সাথে রাখা হয়েছে।
হোপ ফাইন্ডেশনের কো-অর্ডিনেটর রাকিবুল হক জানান, বিভিন্ন প্রকল্পে সেবা গ্রহনকারী মহিলারা হোপ মেটার্নিটি সেন্টার থেকে সেবা নিচ্ছে। গত ১ এপ্রিল থেকে নিরাপদ মাতৃত্ব প্রকল্প-৩ চালু হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় ১৫০০ জন মা বিনামূল্যে/স্বল্পমুল্যে প্রসূতিকালীন সকল সেবা, পরীক্ষা ও ঔষধ পাবেন এবং প্রথম ২০০ জন মা ফ্রি ডেলিভারীর সুযোগ পাবেন।
হাসপাতালের প্রধান চিকিৎসক লে. কর্ণেল নূর হোসেন জানান, গর্ভধারণ থেকে শুরু করে সন্তান হওয়ার পর পর্যন্ত মহিলাদের জন্য পুরো চিকিৎসাসেবা রয়েছে। সেবার জায়গায় থেকে চিন্তা করে গর্ভবতীদের জন্য একটি কোর্চ রয়েছে। এই কোর্চের মাধ্যমে একজন গর্ভবতীকে পর্যায়ক্রমে সব সেবা প্রদান করা হয়। এই সেবা প্রাপ্তিতে গর্ভবতীদের আর্থিক ও শারীরিক সুবিধার জন্য ‘গর্ভবতী পরিচর্যা কার্ড (এসএমপি-৩) একটি কার্ড দেয়া হয়। মাত্র ৭০০ টাকা দিয়ে এই কার্ডটি ক্রয় করতে হয়। এই ৭০০ টাকা খরচ করে একজন মহিলা গর্ভধারণ থেকে শুরু করে প্রসব পরবর্তী পুরো চিকিৎসা পেয়ে থাকেন।
এই কোর্চের আওতায় রয়েছে- ১. গর্ভবতী হওয়ার পর থেকে ডেলিভারি হওয়ার পর ২৮ দিন পর্যন্ত ডাক্তারের ভিজিট সম্পূর্ণ ফ্রি। যতবার প্রয়োজন হয় বা দেখানো হয়। ২. ডেলিভারির আগে গর্ভবতী অবস্থায় চারটি চেকআপ (এএনসি) সম্পূর্ণ ফ্রি। চারবার চেকআপের সময় ফ্রিতে হিমোগ্লোবিন পরীক্ষা, রক্তের গ্রুপ চেকিং, ডায়াবেটিকস পরীক্ষা, জন্ডিস পরীক্ষা ও প্রশাবে জীবাণু পরীক্ষা করা হয়। ৩. গর্ভবতী অবস্থায় আয়রণ ও ক্যালসিয়াম (চারবার) ফ্রি, চারটি আল্ট্রাসনোগ্রাম ফ্রি। ৪. ডেলিভারি পর দু’টি চেকআপ (পিএনসি) সম্পূর্ণ ফ্রিতে এবং সাথে দু’বার ওষুধ ফ্রি দেয়া হয়। ৫. যারা চারটি চেকআপ সময় মতো করবেন তাদের প্রথম ২০০ জনের নরমাল অথবা সিজার ডেলিভারি ফ্রি করা হয়। তবে পূর্বের ডেলিভারি সিজার হলে তার ডেলিভারি ফ্রি হবে না। ১৫০০ জন পর্যন্ত রেজিষ্ট্রিকৃত সকল গর্ভবতীরা ফ্রি চেকআপ, ফ্রি ওষুধ পাবেন, ফ্রি আল্ট্রাসনোগ্রাম এর সুযোগ পাবেন। ‘গর্ভবতী পরিচর্যা কার্ড (এসএমপি-৩) ধারীরা নরমাল ডেলিভারি ১৫০০ টাকা ও সিজার ডেলিভারি ৭০০০ টাকা দিয়ে করতে পারেন।
অন্যদিকে শিশুদের জন্য অত্যন্ত সুযোগ রয়েছে এই হোপ হসপিটালে। নবজাতক থেকে শুরু সব বয়সের শিশুদেরকে ফ্রি ও স্বল্প ফিতে চিকিৎসা দেয়া হয়।
দাপ্তরিক সূত্র মতে, বিগত ২০১৬ সালে ১৬০ জন সিজার ও ৩২০জন মহিলার নরমাল ডেলিভারি করানো হয়। মহিলা ও শিশুদের জন্য রয়েছে বিশেষ ওয়ার্ড। এছাড়াও ফিস্টুলা ও জরায়ুর অপারেশনও স্বল্পমূল্যে অত্যন্ত যতেœর সাথে করা হয়।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, হোপ হসপিটালের সুসজ্জিত মহিলা ও শিশু ওয়ার্ডে প্রায় রোগী ভিড় থাকে। তবে জরায়ু ও ফিস্টুলা রোগীদের জন্য বিশেষ ইউনিট গড়ে তোলা হয়েছে। এসব রোগীদের চিকিৎসা সার্বক্ষণিক নিযুক্ত রয়েছে অভিজ্ঞ চিকিৎসকেরা। সেই সাথে পর্যাপ্ত নার্স এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। সব চিকিৎসা স্বল্পমূল্যে মিলছে।
কথা হলে সেবা গ্রহনকারী আয়েশা খাতুন বলেন, ‘বাইরে কোন হাসপাতালে এই সেবার মুল্য প্রায় ১৫/২০ হাজার টাকা। সেই চিকিৎসা হোপ হাসপাতালে অনেক কম খরচের মধ্যে পাই। এছাড়াও নানা ধরণের ছোটখাটো রোগেও অত্যন্ত কম খরচে চিকিৎসা পাই। তাই আমরা এখানে চিকিৎসা করাই। ’
হাসপাতালের মহিলা ওয়ার্ডে জরায়ু অপারেশন করা তাছলিমা আকতার জানান, তিনি বাইরের হাসপাতালে যাচাই করে দেখেছেন ৩০ হাজার টাকা নিচে জরায়ু অপারেশন করা যায়নি। কিন্তু এই হোপ হাসপাতালে তার ফ্রি চিকিৎসা হয়েছে। অর্থ অভাবের কারণে এতদিন তিনি চিকিৎসা করতে পারেনি।
হাসপাতাল সূত্র মতে, প্রশাসনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সাফল্য হচ্ছে প্রত্যন্ত ইউনিয়ন পর্যায়ে ৪টি বার্থ সেন্টার বা প্রসুতি কেন্দ্র স্থাপন। খুনিয়াপালং, ইসলামপুর, পোকখালী ও ভারয়াখালীতে ৪টি বাথ সেন্টার স্থাপন করে হোপ ফাউন্ডেশন গর্ভকালীন মাতৃত্বসেবা ঐ সব এলাকার দরিদ্র মানুষের দোড়গোড়ায় নিয়ে গেছে। শুধুমাত্র গর্ভকালীন সেবা নয় ঐ সব কেন্দ্রে দক্ষ ও অভিজ্ঞ মিডওয়াইফ/প্যারামেডিক দ্বারা নরমাল ডেলিভারীও করানো হচ্ছে এবং বিগত ৬ মাসে এই সব সেন্টারে প্রায় ২০টি ডেলিভারী করানো হয়েছে।
হোপ ফাইন্ডেশনের কান্ট্রি ডাইরেক্টর এস.এম ফেরদৌসুজ্জামান পিএসপি বলেন, ‘গরীব ও অস্বচ্ছল রোগীদের টার্গেট করে হোপ হসপিটালের কার্যক্রম চলছে। এক্ষেত্রে মহিলা ও শিশুদের জন্য বিশেষ সুবিধায় চিকিৎসা করা হয়। অন্যান্য রোগীদের জন্য সুবিধাজনক ব্যয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়।’
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।