পরিবর্তন ডটকম:
হাইকোর্টের আদেশে দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল হয়েছে। ইসির তালিকায়ও নেই জামায়াতের নিবন্ধন ও দাঁড়িপাল্লা প্রতীক। নিবন্ধন ও প্রতীক না থাকলেও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে কৌশলী অবস্থানে থাকবে জামায়াত।
জামায়াত ও ২০ দলীয় জোট সূত্রে জানা গেছে, রাজনৈতিক স্বকীয়তা অক্ষুণ্ন রেখেই জামায়াত নির্বাচনী মাঠে লড়াই করবে। সেক্ষেত্রে তারা ভিন্ন কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মিশে যাবে না। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য তারা জোটের সঙ্গে আলোচনা করে স্বতন্ত্র প্রার্থী দাঁড় করাবে। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রতীকও যাতে একই থাকে সে জন্যও তারা পরিকল্পনা করে রেখেছে। যাতে প্রতীক দেখে জামায়াতের অস্তিত্ব বোঝা যায়।
বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করে। এরপর ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগ (আইডিএল) নামে তাদের কার্যক্রম চালায়। পরবর্তী সময়ে জিয়াউর রহমানের সরকার বহুদলীয় গণতন্ত্র চালু করলে জামায়াতে ইসলামী আবারও রাজনীতি করার সুযোগ পায়। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসলে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হয়। পরবর্তীতে বিচারের রায়ে জামায়াতের ৫ শীর্ষ নেতা ফাঁসি কার্যকর করা হয়। এর মধ্যে জামায়াত নিষিদ্ধ করার দাবি ওঠে। এখনও জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হয়নি। তবে ২০০৯ সালে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব মওলানা সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীসহ ২৫ ব্যক্তি জামায়াতের নিবন্ধন নিয়ে এক রিট পিটিশন দায়ের করেন। কয়েক দফা শুনানির পর হাইকোর্ট ২০১৩ সালের ১ আগস্ট এক রায়ে জামায়াতকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন দেওয়াকে আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ও আইনগত অকার্যকর মর্মে ঘোষণা করায়, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নামের রাজনৈতিক দলটির নিবন্ধন বাতিল হয়। চলতি বছরের শুরুতে নির্বাচন কমিশন ‘দাঁড়িপাল্লা’ নির্বাচনী প্রতীকের তালিকা থেকে বাতিল করে দেয়।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াত নিষিদ্ধ হলে ভিন্ন কোনো নামে কার্যক্রম চালাবে নিজস্ব সক্রিয়তায়। স্থানীয় সরকারে নির্বাচনে জামায়াত স্বতন্ত্র প্রার্থী দিয়ে নির্বাচন করেছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে ও জামায়াত স্বতন্ত্র প্রার্থী দিয়ে ভোটের মাঠে থাকবে। যেহেতু দলীয় ব্যানারে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ নেই। সে জন্য ২০ দলীয় জোটে থেকে নির্বাচনে ভোটের লড়াইয়ে থাকতে চায়। এ জন্য একটা কৌশল থাকবে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রত্যেকটি আসনেই যাতে একই ধরনের প্রতীক বরাদ্দ পাওয়া যায়। এ জন্য যতরকম কৌশল থাকে তা অবলম্বন করা হবে। উপজেলা নির্বাচনেও জামায়তের প্রার্থীরা প্রায় সবাই একই প্রতীকে নিয়ে নির্বাচন করেছেন।
জামায়তের এক শীর্ষ নেতার বরাত দিয়ে ২০ দলীয় জোটের এক শীর্ষ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘জামায়াত জোটগতভাবেই আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। জামায়য়াত নিজ থেকে কখনো জোট থেকে সরে দাঁড়াবে না। এছাড়া জামায়াত হচ্ছে জোটের বিশ্বস্ত সহযোগী। জোট শরীকরাও চায় না জামায়াতে জোট থেকে বেরিয়ে যাক। কারণ এটা কোনো আদর্শিক জোট নয়, এটি নির্বাচনী জোট। সেক্ষেত্রে বিএনপি যদি জামায়াতকে বাদ না দেয় তাহলে জামায়ত নিজ থেকে কথনো সরে দাঁড়াবে না।’
তিনি বলেন, ‘এটা ঠিক বিএনপির বড় একটা অংশ চায় না জামায়াত ২০ দলীয় জোটে থাকুক। তবে এটা নিয়ে প্রকাশ্যে মতবিরোধ নেই।’
২০ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তাফা ভূঁইয়া পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘জামায়াত তাদের মতো করেই কর্মকৌশলে এগিয়ে যাচ্ছে। বিগত দিনে দেখা গেছে, স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নিয়েছে যেখানে কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী ছিল না। জাতীয় নির্বাচনেও তারা সেইভাবেই এগুচ্ছে। আমার জানা মতে, জামায়াতের নির্বাচনী প্রস্তুতি অন্য রাজনৈতিক দলের চেয়ে গোছানো।’
তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে জামায়াত জোটগতভাবেই অংশগ্রহণ করবে, কারণ ২০ দলীয় জোট এখনও অটুট আছে।’
জামায়াতের রাজনীতি সম্পর্কে জানতে চাইলে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘একটি দল তার নিজস্ব ধারায় রাজনীতি করবে। তাদের রাজনীতি নিয়ে আমি কিছু বলতে চাই না।’
ভিন্ন চেহারায় জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবে জামায়াত
পড়া যাবে: [rt_reading_time] মিনিটে
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।