এম.জিয়াবুল হক,চকরিয়া
চকরিয়া উপজেলার বহুল আলোচিত রামপুর মৌজার চিংড়ি জোনের ৪২০একর প্লট নিয়ে ১৫টি রিট মামলার প্রেক্ষিতে শুনানী শেষে অবশেষে নতুন ইজারা বাতিল ও পূর্বের ইজারা গ্রহীতাদের বৈধতা দিয়েছে উচ্চ আদালত। রামপুর মৌজার বি.এস. ২০১০ দাগের ৪২০ একর চিংড়ি প্লট নিয়ে পৃথক ১৫টি রীট মামলায় চলতি গত ১ জুন উচ্চ আদালতের বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি আতাউর রহমান খানের সমন্বয়ে গঠিত একটি দ্বৈত বেঞ্চে মামলার শুনানী অনুষ্টিত হয়। শুনানী শেষে আদালত বর্তমান ইজার গ্রহীতার রীট আবেদনে দেয়া রুল এবশ্লিউট করেন।

ইতিপূর্বে ৪২০ একর প্লটের ইজারা গ্রহীতার ৭২৯/২০১১ ইং নং রীট মামলায় বিগত ২০ফেব্রুয়ারী’১৩ইং রায় প্রদান করেন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে উক্ত রায় প্রাপ্তির এক মাসের মধ্যে নবায়ন চুক্তিনামা সম্পাদনের আদেশ দেন। কিন্তু অদ্যাবদি উচ্চ আদালতের রায় বাস্তবায়ন করা হয়নি মর্মে ভূক্তভোগী রীট আবেদন কারী শাহাব উদ্দিন জানান।

অনুসন্ধানে জানাগেছে, ১৯৮৫-৮৬ সালে ৪২০ একর জমি ২০ একর করে ২১ জন জলদাশের নামে ইজারা প্রদান করা হয়। উক্ত ৪২০ একর জমি জলদাশ গং সাবলীজ প্রদান করেন। পরবর্তীতে জলদাশ গং এর সাথে সাবলীজ গ্রহীতার বিরোধ হলে সাবলীজ গ্রহীতা সহকারী জজ আদালত, চকরিয়া-এ অপর ২২/৯১ ইং মামলা দায়ের করেন। উক্ত মামলার ইজারচুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে সাব লীজ প্রদান করায় জলদাশ গংএর লীজ বাতিল করা হয় এবং সরকারকে উক্ত ৪২০ একর জমি দখলে নেয়ার আদেশ প্রদান করা হয়। উক্ত রায়ের বিরুদ্ধে জলদাশ গং অপর আপীল মামলা নং – ৪৫/৯২ ইং দায়ের করিলে ১ম সাবজজ আদালত কক্সবাজার নি¤œ আদালতের দেয়া রায় বহাল রাখেন।

ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, কক্সবাজার প্রথম সাবজজ আদালতে রায়ের বিরুদ্ধে জলদাশ গং হাইকোর্ট ডিভিশনে সিভিল রিভিশন মামলা নং-১১৫৯/৯৫ ইং দায়ের করলে উক্ত মামলায় ও নি¤œ আদালতের রায় বহাল রাখা হয়। আদালতের রায়ের ভিত্তিতে ভূমি মন্ত্রনালয় ১৯৯৩ সালের ৭ নভেস্বর ৮৬৪ নং স্বারক মূলে জলদাশ গংয়ের ইজারা বাতিল করেন। জলদাশ গং লীজমানি বকেয়া রাখায় তাদের বিরুদ্ধে পৃথক ২১ টি সার্টিফিকেট মামলা রুজু করা হয়। লীজ মানির পরিমান বর্তমানে ২১ কোটি টাকার বেশী।

জলদাশ গংয়ের ইজারা বাতিলের পর ৪২০ একর জমি সরকারী নীতিমাল মোতাবেক শাহার উদ্দিন সহ অপর ৩৬ জন কে ইজার প্রদান করা হয়। শাহাব উদ্দিন গংয়ের ইজারার বিরুদ্ধে জলদাশ গং আবার হাইকোর্ট ডিভিশনে রীট মামলা নং-২৪৬/৯৬ ইং দায়ের করেন। পরবর্তীতে শাহাব উদ্দিন গং ও পৃথক রীট মামলা নং-৪৫৯৮/৯৭ ইং দায়ের করেন। এ রীট মামলা দুটি একই সময়ে শুনানী অনুষ্টিত হলে মহামান্য হাইকোর্ট জলদাশ গং এর ২৪৬/৯৬ ইং মামলা খারিজ করেন এবং শাহাব উদ্দিন গং এর ৪৫৯৮/৯৭ইং মামলা এবশ্লিউট করেন। জলদাশ গং হাইকোর্টের উভয় আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগের লীভ টু আপীল মামলা নং-৫৩৫/৯৯ ইং এবং ৫৩৬/৯৯ইং দায়ের করিলে উক্ত লীভ টু আপীল মামলাদ্বয়ের কোন মেরিট নাই মর্মে আদেশ প্রদান করা হয় এবং লীভ টু আপীল খারিজ করা হয়।

এদিকে ২০১০ সালে শাহাব উদ্দিন গংয়ের ইজারার মেয়াদ শেষ হলে জলদাশ গং সমস্ত তথ্য উপাত্ত রেখে পূনরায় ৪২০ একর জমি ইজারা পাওয়ার জন্য বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে। শাহাব উদ্দিন গংয়ের আবেদনের প্রেক্ষিতে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ইজারার মেয়াদ ২০১১ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বৃদ্ধি করেন । কিন্তু চুক্তি সম্পাদন না হওয়ায় শাহাব উদ্দিন গং আবার হাইকোর্টে রিট মামলা দায়ের করিলে ওই রীট মামলা সমূহে স্টেটাসকো প্রদান করেন এবং সরকারের প্রতি রুল জারি করা হয়। পরবর্তীতে ওই ১৫ টি রীট মামলায় জলদাশ গং ও পক্ষ ভূক্ত হয়।

রিট মামলার আবেদন কারী হাসান মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন , উচ্চ আদালতের দেয়া রায় দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্টার ক্ষেত্রে একটি মাইল ফলক হয়ে থাকবে। এতে জলদাশ গংয়ের বেআইনি অপতৎপরতার পথ রুদ্ধ হবে। তিনি বলেন আদালতের রায়ের আলোকে ৪২০ একর চিংড়ী প্লটের ইজারা গ্রহীতাগনের ইজারা নবায়ন করতে এবং বিভিন্ন হয়রানি ও জলদাশ গংয়ের বেআইনি অপতৎপরতা থেকে রক্ষা পেতে ইতোমধ্যে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। যাতে স্থানীয় নিরীহ চিংড়ী চাষীগণ নিরবিচ্ছিন্ন চিংড়ী চাষের মাধ্যমে দেশের চলমান অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে পারে।

একই সাথে রিট মামলাকারী ভুক্তভোগীরা ওই চিংড়ি জমির বিপরীতে কোটি টাকা লীজমানি বকেয়া রাখার দায়ে জলদাশ গংয়ের বিরুদ্ধে ১৯৯৫-৯৬ সালে দায়ের হওয়া সার্টিফিকেট মামলা গুলো নিস্পত্তি করে সরকারী রাজস্ব আদায়ের জোর দাবী জানিয়েছেন।