মোহম্মদ ইয়াছির আরফাত:

স্ত্রী-সন্তান, পিতা-মাতা, ভাই-বোনের মুখে দু’মুঠো দু’বেলা অন্ন তুলে দেওয়ার জন্যই তারা মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে জীবিকার সন্ধানে সমুদ্রে ট্রলার নিয়ে যাত্রা করে। যাত্রাকালের অনুকূল আবহাওয়া ফেরার আগেই যদি প্রতিকূল হয়ে যায় তখন কি হবে তারা তা জেনেও জানতে চায়না, বাস্তবতা তাদের জানতে দেয়না! কারণ অনেক সময় ট্রলার মালিকের কাছ থেকে মজুরী হিসেবে অগ্রিম টাকা (তাবাই) নেওয়া তাদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। অর্থাৎ টাকা নেওয়ার পরে যাওয়া-না যাওয়ার ব্যাপারে তাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার আর কোনো মূল্য থাকেনা! তাছাড়া একবেলা উপোষ থাকলে কেও এসে তাদের অন্নজল দিবেনা এই চরম সত্যটিও তারা জানে। তাই স্বেচ্চায় মৃত্যুকে আলিঙ্গনের পূর্বপ্রস্তুতি নিয়েই যেন ছুটে চলে উত্তাল সাগরের বুকে…!

তারা একবার ফিরে হাঁসিমুখে, অন্যবার মুত্যুঞ্জয়ী হয়ে, আরেকবার হয়তো সিডর, নার্গিস, আইলা কিংবা “মোরার” কবলে পড়ে আর ফিরে আসেনা। অথবা কখনো শুধু নিতর দেহটি ফিরলেও এটি যেন সাগরে মাছ আহরণ করতে যাওয়া জেলে-শ্রমিকের একটি ট্রাজেডি গল্পের স্বাক্ষী হয়ে রয়।

একই ধরণের করুণ গল্প প্রতি বছর তৈরী হয়, শুধু ভিন্ন হয় গল্পের চরিত্রগুলো। তবে এবার যেন অতীতের সবকিছু ছাপিয়ে। যা শুনলাম, ঘূর্ণিঝড় মোরায় সাগরে মহেশখালীর বিভিন্ন প্রান্তের পঞ্চাশের অধিক নিখোঁজ জেলের মধ্যে আমার পুটিবিলা এলাকারই রয়েছে ৩৫জন!! বিভিন্ন সোর্স অনুযায়ী যাদের জীবিত/মৃত পাওয়ার সম্ভাবনাও নেই!!

তাদের পরিবারগুলোতে চলছে আর্তনাদ-আহাজারি আর এলাকায় চলছে শোকের মাতম। এটা কি চলতেই থাকবে?? বছর বছর জেলেদের ট্রাজেডিক মৃত্যুর মিছিল কি আরো দীর্ঘ হবে?? আমরা তা আর চাইনা, চাই স্থায়ী সমাধান । এই ধরণের মর্মানিন্তক ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে দরকার সঠিক নীতিমালা প্রণয়ন এবং যথাযথ বাস্তবায়ন।। সবাই এগিয়ে আসুন সরকার, স্থানীয় প্রশাসন, গুণীজন, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি, পেশাজীবী, শিক্ষক, কর্মকর্তা, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, ট্রলার মালিক ও সমাজের সর্বস্থরের সচেতন নাগরিকের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে সামর্থ্যানুযায়ী নিখোঁজ/মৃত জেলে পরিবারের পাশে দাঁড়াই,আল্লাহ সবার সহায় হোন ।