খায়রুল বাশার শিবলী, মালয়েশিয়া থেকে:
বেশ কিছু দিন আগের কথা। বাসস্ট্যান্ড দাঁড়িয়ে আছি বাসের অপেক্ষায়। হঠাৎ করে বুঝতে পারলাম কেউ যেন আমার কাঁধে এসে হাত রাখলো। ফিরে দেখতেই বলে ওঠলো ভাই আপনি বাংলাদেশী? আমি বললাম হ্যা, আমি বাংলাদেশী। আমার কথাটা শেষ না হতেই ছেলেটা কান্না শুরু করে দিল। কিছু বোঝে ওঠতে পারছিলাম না। হতভাগ হয়ে গেলাম। পরে আমি বললাম, ভাই আপনার কি সমস্যা আমায় বলেন। আমি আপনাকে সব দিক থেকে সহযোগীতা করবো। সে বললো, সেই নাকি ৫মাস আগে মালেশিয়া আসে। যে তাকে ভিসা দিয়ে আনছে, মালয়েশিয়া এসে তার সাথে কোন দিন নাকি দেখাও দূরের বিষয়, কথাও হয় নি। এক মালেশিয়ার দালাল তাকে এয়ারপোর্ট থেকে রিসিভ করে পাহাড়ের ভিতর বাগানে কাজ দেন। সেটা কোন সমস্যা না। বিদেশ যখন আসছে যে কোন একটা কাজ তো করতেই হবে। রাত দিন এক করে কাজ করতে করতে তিন মাস পার করে দেন। কিন্তু বেতনের কোন খবর নাই। মালিক বলছে চার মাসের মাথায় বেতন দিবে। কিন্তু সে আর চাপ নিতে পারছে না। দেশে অনেক টাকা ঋণ করে বিদেশ আসছে। তাও বিয়ে করে আসছে। বাবা মা ও তাকে ভুল বোঝতে শুরু করে। তাই রাতে পালিয়ে আসে, সাথে আবার পাসপোর্ট নেই। তার এক বন্ধুর ভাইয়ের কাছে যাবে। তাছাড়া সাথে কোন টাকা পয়সাও নেই। কত বাংলাদেশীর সাথে দেখা করছে। কেউ ফিরেও থাকায় না নাকি। যে যার নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। সব কিছু শুনে চোখের পানি আর ধরে রাখতে পারলাম না। পরে আমি বাসের চিন্তা বাদ দিয়ে ছেলেটা নিয়ে খাবার হোটেলে যায়। খাওয়ালাম তাকে। বাসের টিকিট করে দিলাম। খরচের জন্য ৫০ টাকা দিলাম এবং আমার ফোন নাম্বারটা দিলাম। এখানে শেষ হয়তো ছেলেটার জন্য অপেক্ষা করছে আরো কঠিন মুহূর্ত- কে জানে!

লেখকের সাথে ওই অসহায় ‍যুবক।

এত কিছু লিখার পিছনে একটায় কারণ, বিদেশ নামটায় স্বপ্ন। এটা যে বিদেশ নামের জেল তা না আসলে কেউ বোঝে না। তাই বলছি দালাল থেকে নিজেও বাঁচুন। অন্যকেও বাঁচান। দয়া করে, আবারো বলছি দয়া করে বিদেশ আসার আগে ভাল করে যাচাই বাচাই করুন। ওই ছেলেটার মত সময়, জীবন যেন কারো কাম্য নয়।