প্রথম আলো:

প্রবল বর্ষণ ও দমকা হাওয়ার মধ্য দিয়েই সাধারণ মানুষ নদীপথে নৌকায় করে গন্তব্যে যাচ্ছেন। ছবিটি বুধবার সকালে সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার সুরমা নদী থেকে তোলা। ছবি: আনিস মাহমুদ
বাংলাদেশে বর্ষাকালে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টি হয়। ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র পর সেই বায়ু চলে এসেছে এ দেশে। উপকূল ছাড়িয়ে এটি বিস্তৃত হয়েছে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের ওপর। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, জুন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে দক্ষিণ-পূর্ব মৌসুমি বায়ুর বিস্তার হবে সারা দেশে। এই মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হবে, যার পরিমাণ প্রায় ৪৬০ মিলিমিটার। এর সঙ্গে মৌসুমি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে বঙ্গোপসাগরে।

সম্প্রতি আবহাওয়া অধিদপ্তরের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস প্রদানে বিশেষজ্ঞ কমিটির বৈঠক থেকে এ তথ্য জানা যায়। কমিটির দেওয়া পূর্বাভাসে উল্লেখ করা হয়, জুনে মৌসুমি বৃষ্টিপাতের কারণে দেশের উত্তর, মধ্যাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কিছু কিছু স্থানে বন্যা হতে পারে।

১৯৭০ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত ৩০ বছরের বৃষ্টিপাতের গড় হিসাব করে স্বাভাবিক বৃষ্টির পরিমাণ নির্ধারণ করে থাকে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তাদের তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের মে মাসে বৃষ্টি হয়েছে ২২৯ দশমিক ৭ মিলিমিটার, যা স্বাভাবিকের চেয়ে ১৬ দশমিক ১ শতাংশ বৃষ্টি কম। এই মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টির পরিমাণ ধরা হয়ে থাকে ২৭৪ মিলিমিটার। অবশ্য মার্চে স্বাভাবিকের চেয়ে ১৫২ শতাংশ ও এপ্রিলে ১০৬ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছিল।

দেশের আটটি বিভাগের মধ্যে মে মাসে অবশ্য ময়মনসিংহ ও রংপুরে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে। ময়মনসিংহে ১৩ শতাংশ ও রংপুরে ১০ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। ঢাকা বিভাগে ২৫ শতাংশ কম বৃষ্টি হয়েছে।

আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের মতে, ৩০ বছরের মধ্যে কোনো একটি বছরের মে মাসে হয়তো বেশি বৃষ্টি হয়েছিল। আবার কোনো একটি বছরের মে মাসে কম বৃষ্টিপাত হয়। স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত কম হওয়া মানে এই নয় যে, বৃষ্টি কমে গেছে।

তবে মে মাসে দাবদাহ বয়ে যায় রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগে। এ কারণে এসব অঞ্চলে বেশ কম বৃষ্টি হয়। মে সর্বোচ্চ দেশের তাপমাত্রা ছিল ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠে যায়। গত ২১ মে এটি রেকর্ড করা হয় খুলনায়।

জুনে যত বৃষ্টি
বাংলাদেশ ও এর আশপাশের অঞ্চলে মৌসুমি বায়ু সাধারণত ১ জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত এই চার মাস অবস্থান করে থাকে। এ দেশের প্রতিবছরের মোট বৃষ্টিপাতের ৭১ শতাংশ হয়ে থাকে এই চার মাসে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয় জুলাইয়ে। এই মাসে গড় বৃষ্টির পরিমাণ ৫২৩ মিলিমিটার। এরপরই রয়েছে জুন। এই মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টির পরিমাণ ৪৫৯ দশমিক ৪ মিলিমিটার। আগস্টে ৪২০ দশমিক ৪ ও সেপ্টেম্বর মাসে ৩১৮ দশমিক ২ মিলিমিটার। ২০১৬ সালের জুন মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টি পরিমাণ কমে হয়েছিল ৩৬৩ মিলিমিটার।

বৃষ্টি কমবেশি যা-ই হোক, মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বর্ষাকালে টানা এক থেকে তিন দিন, কখনো কখনো টানা পাঁচ দিন থেকে সাত দিনও বৃষ্টি হয়ে থাকে। এর ফলে তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসে।

ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেবে না নিম্নচাপ
চলতি জুন মাসে বঙ্গোপসাগরে দু-একটি মৌসুমি নিম্নচাপ সৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তবে এগুলোর ঘূর্ণিঝড় বা সাইক্লোনে রূপ নেওয়া সম্ভাবনা কম বলে জানান আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, লঘুচাপ থেকে সুস্পষ্ট নিম্নচাপ, সুস্পষ্ট নিম্নচাপ থেকে নিম্নচাপ, আর নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড় বা সাইক্লোন সৃষ্টি হয়। মৌসুমি নিম্নচাপ উত্তর বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে সৃষ্টি হয়ে থাকে। উপকূলের খুব কাছে সৃষ্টি হওয়াতে এসব নিম্নচাপ খুব বেশি শক্তি সঞ্চয় করতে পারে না। তা ছাড়া নিম্নস্তরের বাতাস আর ঊর্ধ্বস্তরের বাতাসের গতির পার্থক্যের জন্য শক্তির জোগান পায় না মৌসুমি নিম্নচাপ। তাই এ ধরনের নিম্নচাপের ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।

মৌসুমি বায়ুর সক্রিয়তার ওপর বর্ষাকালে বৃষ্টিপাত নির্ভরশীল। এ সময় সারা দেশের মতো প্রতিবেশী দেশ ভারতের আসাম, মিজোরাম, মেঘালয় রাজ্যে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, এ সময় বৃষ্টির পানি এসব রাজ্যের পাহাড়ি ঢলে চলে আসে বাংলাদেশে। এ কারণে দেশের উত্তর, মধ্য ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বন্যা হতে পারে।

মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে জুন মাসের প্রথম থেকে বৃষ্টি হচ্ছে সারা দেশে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ছয়টা থেকে আজ শুক্রবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি ১৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে ফেনী জেলায়। এ সময় যশোরে ১৩১, খুলনায় ১২৪, চট্টগ্রামে ১১২, পটুয়াখালীতে ১১০, সন্দ্বীপে ১০৬ ও মাইজদীতে ১০২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। রাজধানী ঢাকা ৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হলেও আকাশ রয়েছে মেঘাচ্ছন্ন।