ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলে এক শ্রেণি থেকে অন্য শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়ার পর পুনরায় ভর্তি বা সেশন ফির নামে অর্থ আদায় নিষিদ্ধ করে রায় দিয়েছে হাই কোর্ট।
সেশন ফি ও ভ্যাট আদায় নিয়ে দুটি রিট আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি করে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. বদরুজ্জামানের হাই কোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এই রায় দেয়।
রিটকারীদের পক্ষে আদালতে শুনানি করেন ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, অনিক আর হক ও জে আর খান রবিন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রাশেদ জাহাঙ্গীর।
বদরুদ্দোজা বাদল পরে সাংবাদিকদের বলেন, “আদালত বেশ কয়েকটি নির্দেশনা দিয়েছে। এ রায় পাওয়ার এক মাসের মধ্যে নির্দেশনাগুলো পরিপত্র আকারে জারি করে সব ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলে পাঠানোর জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
আর নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়ন করা হয়েছে কিনা- তা প্রতি তিনমাস পর পর প্রতিবেদন আকারে আদালতকে জানাতে বলা হয়েছে।
যেসব নির্দেশনা এসেছে
>> বেসরকারি স্কুল নিবন্ধন অধ্যাদেশ ১৯৬২ অনুসারে স্কুলগুলোতে অভিভাবকসহ শিক্ষক প্রতিনিধিদের নিয়ে ম্যানেজিং কমিটি গঠন করতে হবে।
>> অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচন করতে হবে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। ওই অভিভাবক প্রতিনিধির বক্তব্য গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে।
>> ‘পেছনের দরোজা দিয়ে’ শিক্ষক নিয়োগ করা যাবে না। শিক্ষক ও কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে যাচাই-বাছাই করে যোগ্য ও মেধাবীদের নিয়োগ করতে হবে। তাতে মালিকপক্ষের কোনো প্রাধান্য থাকবে না।
>> এক শ্রেণি থেকে অন্য শ্রেণিতে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভর্তি ফি, সেশন ফি বা একাডেমিক ফি’র নামে কোনো ‘ফি’ আদায় করা যাবে না।
>> ভর্তি ফি, টিউশন ফি নির্ধারণ করবে ম্যানেজিং কমিটি। তাতে অভিভাবক প্রতিনিধিদের মতামত প্রাধান্য পাবে। ওয়েবসাইটে তা প্রকাশ করতে হবে।
>> ইংরেজি মাধ্যমের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অডিট রিপোর্ট ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে এবং প্রত্যেক অভিভাবককে ওই রিপোর্ট সরবরাহ করতে হবে।
>> প্রত্যেক জাতীয় দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় এবং দেশীয় কৃষ্টি-সংস্কৃতির আবহে পালন করতে হবে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলামসহ প্রখ্যাত বাঙালি কবি-সাহিত্যিকদের রচনাবলীর সঙ্গে ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের পরিচয় ঘটাতে হবে।
>> জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ভাষা শহীদ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের গৌরবগাথা ও স্বাধীনতার গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস শিক্ষার্থীদের জানাতে হবে।
>> প্রথম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত এখন যেভাবে বাংলা পড়ানো হচ্ছে তার চেয়ে আরও ভালোভাবে শিক্ষার্থীদের বাংলা ভাষার চর্চা করাতে হবে। যাতে তারা শুদ্ধভাবে বাংলা লিখতে, পড়তে ও বলতে পারে।
অভিভাবকদের করা এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে ২০১৪ সালের ২৩ এপ্রিল হাই কোর্ট ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পুনঃভর্তি ফি বা সেশন চার্জ আদায় থেকে সংশ্লিষ্টদের বিরত রাখার নির্দেশ দিয়েছিল।
শিক্ষা সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে ওই নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছিল।
বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের বেঞ্চ রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে রুলসহ অন্তর্বর্তীকালীন ওই আদেশ দেয়।
তার আগে ২০১৩ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর একটি দৈনিকে ‘ফ্রিস্টাইলে চলছে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন তুলে ধরে নীতিমালা করার নির্দেশনা চেয়ে হাই কোর্টে আরেকটি রিট আবেদন করেন দুই শিক্ষার্থীর অভিভাবক।
ওই আবেদনের শুনানি করে আদালত রুল দেয়। ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে মাসিক বেতন, পুনঃভর্তি ফি বা সেশন চার্জ আদায়ের বিষয়ে নীতিমালা তৈরি এবং তদারক সেল গঠনের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয় সেখানে।
শিক্ষা সচিব, আইন সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তদরের মহাপরিচালকসহ বিবাদীদের চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
দুটি রুলের ওপর একসঙ্গে চূড়ান্ত শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার রায় দিল হাই কোর্ট।