নুরুল কবির, নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে ফিরে:
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা সদর থেকে সোনাইছড়ি ইউনিয়নের জারুলিয়াছড়ি পর্যন্ত ৫কি.মি. সড়ক সংষ্কার কাজে নিম্মমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে এমন অভিযোগ তুলে স্থানীয় লোকজন কাজ বন্ধ রাখারও দাবী তুলেছেন। ইতিপূর্বে ১কোটি টাকা ব্যায়ে ৫কিমি: সড়ক সংষ্কারে কার্যাদেশ পায় মিল্টন চাকমার নামীয় ‘মিল্টন ট্রের্ডাস’ নামক একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। যদিওবা ঠিকাদারের কাছ থেকে কাজটি কিনে নেয় আলীকদম উপজেলার জনৈক আবু বক্কর নামে এক ব্যাক্তি।
উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা সদরের কলেজ রোড় থেকে শুরু করে দুর্গম সোনাইছড়ি জারুলিয়াছড়ি পর্যন্ত ৫কিমি: রাস্তার বিভিন্ন অংশে ভেঙ্গে যাওয়ার ফলে টেন্ডার আহ্বান করা হয়। আগামী জুন মাসের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা। জানা গেছে, মিল্টন ট্রের্ডাস নামক ঠিকাদারের কাছ থেকে ওই কাজটি কিনে নেয় আলীকদম উপজেলার জনৈক আবু বক্কর। ওই ব্যাক্তি গত ১৫/২০ দিন আগে সংস্কার কাজ শুরু করেন। সংস্কার কাজ অত্যন্ত নিম্মমানের হওয়ায় ঠিকাদারের পাশাপাশি সরাসরি এলজিইডিকে দোষারোপ করছেন এ সড়কে চলাচলরত পরিবহন শ্রমিকসহ স্থানীয় সাধারণ জনগণ। সড়কের গর্তে দেওয়া হয়েছে দুই নাম্বার ইটের লাল খোয়া। তাও আবার রোলার না দিয়ে। কোন কোন স্থানে কোনরকম রোলার না দিয়েও বিটুমিন দিয়ে তাৎক্ষণিক বালু দিয়ে ঢেকে দায়সারাভাবে কাজ করা হচ্ছে। নিম্নমানের কাজের ফলে সামান্য বৃষ্টির আগেই যানবাহনের চাকায় উঠে যাবে বিটুমিন এমনটি মনে করছেন গাড়ি চালক আবদুর রউফ। এ ব্যাপারে সড়ক সংস্কারের দায়িত্বে থাকা এস.ও রেজাউল করিম জানান- কাজের গুনগত মান রক্ষার জন্য তিনি প্রতিনিয়ত ঠিকাদারকে পরামর্শ দিচ্ছেন। ঠিকাদার অগোচরে অনিয়ম করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সড়ক সংষ্কার কাজ শুরু হয় এপ্রিল মাসের শেষের সপ্তায়। ৩০ জুনের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু ঠিকাদার ১৫/২০ দিনের মধ্যেই প্রায় ৩কিমি: সড়ক সংষ্কার কাজ দায়সারা ভাবে সম্পন্ন করে ফেলেছে। সড়কের কার্পেটিং ১২মিলি করার কথা থাকলেও ৪/৫মিলির ওপর দেননি। মাটি ভরাটের ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও সড়কের কোথাও মাটি ভরাট হয়নি। সড়কের পাশের্^ তিন ফুট প্রস্তের ড্রেন করার কথা সিডিউলে উল্লেখ রয়েছে তবে করা হচ্ছে আড়াই ফুট।
কার্পেটিংয়ের গুরুত্বপূর্ণ উপাদন বিটুমিন ৬০-৭০ গ্রেডের ব্যবহার করার কথা থাকলেও ব্যবহার হচ্ছে ইরানি তৈরী পাতলা ও নিম্মমানের বিটুমিন। যদিওবা লোকচক্ষুর আড়াল করতে কয়েকটি বাংলা বিটুমিন রাখা হয়েছে। যার কারণে সড়কটির বিভিন্ন স্থানে ঢেউয়ের আকার ধারণ করেছে। সূত্র মতে, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতে উল্লেখ বলা হয়েছে, ‘টেকসই ও গুণগত মানসম্পন্ন সড়ক নিশ্চিত করতে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে ৬০-৭০ গ্রেডের বিটুমিন ব্যবহার করতে হবে। উল্লেখ্য, জনৈক আবু বক্কর বিভিন্ন লাইসেন্সধারী ঠিকাদারদের কাছ থেকে সাব-কন্ট্রাকে কাজ কিনে দায়সারা ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ইতিপূর্বে মিল্টন ট্রেডার্স নামক ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নাইক্ষ্যংছড়ি, আলীকদমসহ বিভিন্ন স্থানে অনিয়ম দূর্নীতির কারণে জনরোষে পড়েন।
স্থানীয়রা জানান, অভিজ্ঞতা, সর্বনিম্ন দরসহ বিভিন্ন শর্ত পূরণ করে প্রকল্পের কাজ পাচ্ছে একজন, আর তা বাস্তবায়ন করছে আরেকজন। এতে মুনাফার অংশ ভাগ হয়ে যাওয়ায় নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে কোনোমতে কাজ শেষ করছেন কথিত ঠিকাদার, যা ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। সোমবার বিকালে সরেজমিনে গেলে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম জানান- মানুষ না জেনে হয়তো কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলছেন। সত্যিকারার্থে অনিয়ম বা নিম্মমানের কোন সামগ্রী ব্যবহার করা হয়নি। কাজের গুনগত মান রক্ষার জন্য তিনি সর্বাত্তক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে দাবী করেন। অপরদিকে বান্দরবান স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহন চাকমা জানান- বর্তমানে কাজ চলমান আছে। তবে ধীর গতিতে চলছে। কাজ যত দ্রুত সম্ভব শেষ করার চেষ্টায় আছি। অনিয়মের কোনো অভিযোগ এখনো পায়নি। তবে আজ-কালের মধ্যে সড়কের উন্নয়ন কাজ পরিদর্শনের কথা রয়েছে।