বিশেষ প্রতিবেদক:

উখিয়ায় ৫ম শ্রেনীর শিশু শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলার একমাত্র আসামি আজিজুল ইসলামকে নাগালে পেয়েও আটক করছে না পুলিশ। অথচ ওই আসামী নিজ এলাকা এবং উখিয়া সদরে প্রকাশ্যেই ঘুরাফেরা করছেন বলে অভিযোগ বাদির। এমনকি পুলিশের গ্রেফতার এড়িয়ে ওই আসামী ধর্ষণের শিকার শিশু ও বাদিকে প্রতিনিয়ত মামলা প্রত্যাহারে হুমকি দিয়ে আসছে বলেও অভিযোগ। বাদি অভিযোগ করেন, আসামী গ্রেফতার এড়িয়ে হাসপাতাল থেকে ‘মেডিকেল রিপোর্ট’ পক্ষে নেয়ার চেষ্টা করছে। গত ১৮ এপ্রিল উখিয়া থানায় মামলা দায়ের হলেও গতকাল পর্যন্ত ২৬ দিনেও পুলিশ ধর্ষণ মামলার এ আসামিকে গ্রেপ্তার করেনি। উল্টো মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার সাথে আঁতাত করে আসামী আদালত থেকে জামিনের চেষ্টা করছেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উখিয়া থানার উপ-পরিদর্শক পার্থ প্রতীম দেব বলেন, ‘মেডিকেল রির্পোটের জন্য অপেক্ষা করছি। আসামী মিস মামলা করে হাইকোর্ট থেকে জামিনের জন্য চেষ্টা করছে বলে জানি।’

আসামী গ্রেফতার প্রসঙ্গে উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ভারপ্রাপ্ত মো. কায় কিসলু বলেন, ‘মামলাটির তদন্ত চলছে। ঘটনার পারিপার্শ্বিকতাসহ নানা বিষয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশের কাছে ঘটনাটি সন্দেহজনক মনে হচ্ছে। দেখা যাক কি হয়।’ মামলার তদন্তকালীন সময়ে আসামী গ্রেফতারে বাধা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না, সেরকম কোন বাধা নেই।’

দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার ড. একেএম ইকবাল হোসেন বলেন, ‘আসামী গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হবে।’

এদিকে শিশু ধর্ষণ মামলার একমাত্র আসামী গ্রেফতার না হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিভিন্ন সংস্থা। নারী ও শিশু সুরক্ষা নেটওয়ার্কের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘দেশে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্ষণ ও নারী সহিংসতা বেড়ে গেছে। উখিয়ায় শিশু ধর্ষণের ঘটনায় ২৬ দিনেও একমাত্র আসামী গ্রেফতার না হওয়া উদ্বেগজনক। আসামী গ্রেফতার না হলে অন্যদের মধ্যেও এ ধরনের অপরাধ করার প্রবণতা বৃদ্ধি পাবে।’

হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডারস ফোরাম কক্সবাজারের আহবায়ক অ্যাডভোকেট অরূপ বড়–য়া তপু বলেন, ‘ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হওয়ার পর দ্রুত আসামীকে আদালতে হাজির করা পুলিশের দায়িত্ব। একই সাথে পুলিশ মামলাটি তদন্ত করবে। মামলাটিতে আদালত ভিকটিমের ২২ ধারায় জবানবন্দিও রেকর্ড করা হয়েছে। আর এ অবস্থায় তদন্তের অজুহাতে আসামীকে না ধরা পুলিশের দায়িত্ব অবহেলা ছাড়া আর কিছুই নয়।’

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সিনিয়র লিগ্যাল অফিসার অ্যাডভোকেট শাজ্জাতুন্নেছা লিপি কয়েকদিন আগে বলেন, ‘মামলার তদন্তের স্বার্থে আসামীকেও গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরী। কিন্তু পুলিশ সেদিকে এগুচ্ছে না বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। ভিকটিমের ন্যায় বিচারের স্বার্থে আমরা আসামীকে দ্রুত গ্রেফতারের দাবী জানাচ্ছি।’

হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডারস ফোরাম এর সদস্য সচিব মিজানুর রহমান বাহাদুর এক বিবৃতিতে উল্লেখ করেন-ভিকটিম শিশুটির নিরাপত্তা, চিকিৎসা ও ন্যায় বিচার প্রাপ্তির স্বার্থে অভিযুক্ত আজিজুল ইসলামকে আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করা অত্যান্ত জরুরী। একই সাথে ভিকটিমের ন্যায় বিচার প্রাপ্তিতে যে কোন ধরণের অপকর্ম ও ষড়যন্ত্র বন্ধে জেলার সকল সচেতন নাগরিক ও সংগঠনকে সোচ্চার হওয়ার আহবান জানানো হয়।

উল্লেখ্য, কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার ইনানী মোহাম্মদ শফির বিল এলাকার মৃত মোহাম্মদ কালুর পুত্র আজিজুল ইসলাম তাঁর ১৩ বছর বয়সী পালক মেয়ে সন্তানকে ধর্ষন করেন। ধর্ষনের পর রক্তক্ষরণ শুরু হলে তাকে হুমকি-ধমকি দিয়ে চিকিৎসা নিতে দেয়া হয়নি। আজিজ নিজেই ওষুধ নিয়ে মেয়েটিকে খেতে বাধ্য করতো। এমনকি দীর্ঘদিন ধরে তাকে বিভিন্ন কৌশলে ঘরে আটকে রাখা হয়। মেয়েটির অবস্থা বেগতিক দেখে আজিজের স্ত্রী তাহমিনা শিশুটিকে ১২ এপ্রিল কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডাঃ খাইরুন্নেছা মুন্নীকে দেখান। চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ১৩ এপ্রিল কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ১৭ এপ্রিল ঘটনাটি জেলা আইনশৃংখলা কমিটির বৈঠকে আলোচনা হলে এ ঘটনায় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক। ওই দিনই বেসরকারি সংস্থা নারী ও শিশু সুরক্ষা নেটওয়ার্কের সহায়তায় শিশুটিকে ওয়ান ষ্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়। ১৮ এপ্রিল ধর্ষক আজিজের বিরুদ্ধে উখিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন শিশুটির পালক মা তাহমিনা আক্তার। ২১ এপ্রিল আদালতে জবানবন্দি দেয় ধর্ষণের শিকার শিশুটি। একই সাথে আদালত শিশুটিকে মামলার বাদি ও তার পালিত মা তাহমিনার জিম্মায় দেন।