মাতামুহুরী নদীর ব্রিজের করুণ হাল
এম.আর মাহমুদ
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়া উপজেলাধীন মাতামুহুরী নদীর উপর স্থাপিত ব্রিজটির উপর দিয়ে গাড়ী যোগে যাওয়ার সময় সব যাত্রী সৃষ্টিকর্তার নাম স্মরণ করে। কারণ ব্রিজটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। যে কোন মুহূর্তে বিপর্যয় ঘটতে পারে। ব্রিজের উপর দিয়ে যেতে যেতে ব্রিজের অবস্থা দেখে হঠাৎ কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আয়না’ কবিতার ক’টি চরণ মনে পড়ে গেল “আয়না দেখে চমকে বলে মুখটা দেখে ফ্যাকাশে, বেশিদিন আর বাঁচবে না সে ভাবছে বসে একা সে, ডাক্তারেরা লুটল কড়ি, খাওয়ায় জোলাফ খাওয়ায় বড়ি, অবশেষে বাঁচল না সে, বয়স যখন একাশি” মাতামুহুরী নদীর উপরে যোগাযোগ ব্যবস্থা নিরবিচ্ছিন্ন করার জন্য ১৯৬০ সালে ব্রিজটির নির্মাণ কাজ শুরু করে মাত্র ৩ বছরের মধ্যে ওই সময়ের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নির্মাণ কাজ শেষ করেছিল। নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পর চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের যাতায়াত ব্যবস্থা ব্যাপক পরিবর্তন আসে। ওই ব্রিজের উপর দিয়ে বেশুমার যানবাহন চলাচল করেছে। বর্তমানে ব্রিজটির বয়স ৫৭ বছর। বয়সের ভারে ব্রিজটি কাবু হয়ে গেছে। ব্রিজের মধ্যাংশে ফুটো হয়ে গেছে। সওজ কর্তৃপক্ষ লোহার পাটাতন দিয়ে যাতায়াত ব্যবস্থা সচল রেখেছে। অপরদিকে ব্রিজের পশ্চিমাংশে একটি অংশ ক্রমান্বয়ে দেবে যাচ্ছে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আসার পর ব্রিজের তলদেশ থেকে ব্রিজ পর্যন্ত বালির বস্তা দিয়ে আবার বালির বস্তা চারিপাশে ইটের গাঁথুনি তৈরি ব্রিজটির মরণাপন্ন অবস্থা ঠেকানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। কি জানি এতে শেষ রক্ষা কিনা? “বালির বাঁধ একটি বাগধারা যা ছোটকালে পড়েছি যার সহীহ বাংলা অর্থ দাঁড়ায় ক্ষণস্থায়ী” যে বাঁধে স্থায়ীত্ব বেশিক্ষণ হয় না। যাক! উপায় নেই। আরেকটি ব্রিজ নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত জোড়া-তালি দিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল রাখতে হবে। কর্তৃপক্ষ তা-ই করছে। একটি ব্রিজ বিপর্যয়ের কারণে চট্টগ্রাম কক্সবাজার মহাসড়কের মত গুরুত্বপূর্ণ একটি মহাসড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে দেয়া যায় না। বাস্তব কথা হচ্ছে জরুরী ভিত্তিতে ব্রিজটি নির্মাণ করা না হলে যে কোন মূহুর্তে একটি বিপর্যয় নেমে আসার আশংকা হালকাভাবে নেয়া যায় না। বিপদ তো কাউকে বলে আসে না। সে জন্য “সাবধানের মাইর নেই, আবার মাইরেরও সাবধান নেই।”
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজারের জনসভায় ঘোষণা দিয়েছেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ককে অচিরেই চার লাইনে রূপান্তরিত করা হবে। এ গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি চার লাইনে রূপান্তরিত করা হলে, সারাদেশের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা আমূল পরিবর্তন আসবে। ইতিমধ্যে নয়নাভিরাম মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে জনগণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। জরুরী ভিত্তিতে মাতামুহুরী নদীর ব্রিজটি নির্মাণ করা না হলে এ সবের সফলতা ফাঁ ফাঁ বেলুনের মতই হবে। কথাই আছে ‘সময়ের এক ফোটা, অসময়ের দশ ফোটা’ ব্রিজটির প্রতি সেতু মন্ত্রণালয় সদয় না হলে যে কোন মূহুর্তে বিপর্যয় ঘটতে পারে বলে আশংকা করেছে বিজ্ঞজনেরা। গায়ের গেঞ্জি ছিটতে শুরু করলে সেলাই করলেও কাজ হয় না। তাই ব্রিজের ফুটো অংশে লোহার পাটাতন ও দেবে যাওয়া অংশে বালির বস্তা দিয়ে ছেড়া গেঞ্জি সেলাই করে গায়ের দেয়ার অবস্থাই হবে। জ্যৈষ্ঠের কাঁঠাল ফাঁটা গরমের পরেই বর্ষা। বর্ষার প্রবাল বন্যার সময় ব্রিজে সমস্যা হলে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে যেগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়তে পারে। তাই সময় থাকতে ব্যবস্থা নেয়া উত্তম। ইতিমধ্যে এ ব্রিজটি নতুন ভাবে নির্মাণের জন্য একনেকে অনুমোদন হয়েছে। কর্তৃপক্ষ মাটির পরীক্ষাও সম্পন্ন করেছে। টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে কিনা জানা যায়নি। কক্সবাজারবাসীর আকুল আবেদন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়াস্থ মাতামুহুরী নদীর ব্রিজটি যেন দ্রুত কর্ণফুলী নদীর উপর স্থাপিত ব্রিজের মত একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়। এতে যাত্রীদের ভোগান্তী কমবে, বিশ্বের দীর্ঘতম পর্যটন নগরীর দুরত্ব আরো বৃদ্ধি পাবে।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।