বিশেষ প্রতিবেদক
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত এলাকায় চাঁদাবাজদের দৌরাত্ন্য বেড়ে গেছে। চিহ্নিত চাঁদাবাজচক্রের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কিছু বীচকর্মী। তারা বীচ বাইক, ঝুপড়ি দোকানদার, টিউব ব্যবসায়ী, ছাতা ব্যবসায়ী, পান ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নীরবে চাঁদাবজি করছে। দাবীকৃত চাঁদা না দিলে নিমে আসে হুমকি। ঘটছে অপহরণের ঘটনাও। দুই দিন আগেও সৈকতের লাবনী পয়েন্টে ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে আহত হন কক্সবাজার সরকারী কলেজের এক শিক্ষক। এ নিয়ে সৈকতের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, পর্যটক ও সাধারণ পথচারীরা উদ্বিগ্ন।
টুরিস্ট পুলিশের একটি সুত্রে জানা গেছে, সৈকতের হকারদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করে আসছে কিছু বীচকর্মী। প্রতি বীচ বাইককে দৈনিক ৫০ টাকা হারে চাঁদা দিতে হচ্ছে। বীচকর্মী আনোয়ার এই সিন্ডিকেটের প্রধান।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, আবু শামা, রাসেল, কুদ্দুস, কাজল, সাগর নামে বেশ কয়েকজন চিহ্নিত চাঁদাবাজ সৈকতের কীটকট ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে রেখেছে। তারা বিভিন্ন নামে বেনামে আদায় করে মাসিক চাাঁদা আদায় করে থাকে। এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে রয়েছে আবু শামা।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, আবু শামা শহরের দক্ষিণ বাহারছড়া এলাকার বাসিন্দা হওয়ায় বেপরোয় চাঁদাবাজি চালিয়ে যাচ্ছে। তার নেতৃত্বে ঝিনুক মার্কেট, ঝুপড়ি দোকান ও ঝুপড়ি ঘরে প্রতিনিয়ত ঘটছে নানা অপরাধ। চিহ্নিত অপরাধীদের নেতৃত্বে প্রতি মাসে ২০ লাখ টাকারও বেশি চাঁদাবাজি হচ্ছে ওখানে। একই সঙ্গে ইয়াবা ও মাদক ব্যবসা থেকে শুরু করে বিভিন্ন অপরাধ মূলক কর্মকান্ড সংঘটিত হচ্ছে। ট্যুরিষ্ট পুলিশের নামেও সে চাঁদা আদায় করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
গত রবিবার (৭ মে) বেলা আড়াইটার দিকে সৈকতের কিটকট ব্যবসায়ী আবদুল হামিদের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবী করে শহরের দক্ষিণ বাহারছড়া এলাকার বাসিন্দা আবু শামার নেতৃত্বে একদল চাঁদাবাজ। দাবীকৃত চাঁদা না দেয়ায় তাকে অপহরণ করে শহরের বাহারছড়ার একটি বাড়ীতে বন্দি করে রাখে। মুক্তিপণের জন্য দাবী করা হয় ৫০ হাজার টাকা। না দেয়ায় তাকে ব্যাপক মারধর করা হয়। খবর পেয়ে স্থানীয়দের সহায়তায় আবদুল হামিদকে উদ্ধার করে স্বজনেরা। সে কক্সবাজার শহরের দক্ষিণ ঘোনারপাড়ার আবদুল জলিলের ছেলে।
আবদুল হামিদ জানান, সৈকতে প্রতিনিয়ত চাঁদাবাজি শিকার হচ্ছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়িরা। চাঁদা না দিলে অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে মারধর করে টাকা আদায় করা হয়। প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের কারণে অনেকে ভয়ে মুখ খোলেনা।
স্থানীয় একটি সুত্র জানিয়েছে, সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টজুড়ে শুধু চাঁদাবাজি নয়, বিভিন্ন মদকদ্রব্য বিক্রি, ছিনতাইও সমাজের গর্হিত অপরাধের সঙ্গে জড়িত রয়েছে চিহ্নিত অপরাধিরা। অপরাধিচক্র সিন্ডিকেট তৈরি করে সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্ট, লাবণী পয়েন্ট, কলাতলি পয়েন্টসহ পুরো সৈকত পর্যটকদের নানা হয়রানি করে চলছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সৈকতে বসার চেয়ার অর্ধেক ফ্রি দিতে আদালতের নির্দেশান থাকলেও তা মোনে না সংশ্লিষ্টরা। একঘন্টায় নেয়া হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকা। সমুদ্রের আশপাশে বহু চেয়ার-টেবিল ও বেঞ্চ পেতে পর্যটকদের কাছ থেকে প্রতিদিন বিপুল অর্থ আদায় করে নিচ্ছে স্থানীয় কিছু অসাধু চক্র। প্রতি ১০টি চেয়ারের মালিক একজন। দিনে আড়াই হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা আয় হয় তাদের। টাকা না দিলে বসা যাবে না। সেখানে মাঝে মধ্যে শিশুরা নিজেদের অজান্তে বসতে গেলে নাজেহাল হতে হয় তার পরিবারের সদস্যদের। এসব কারণে পর্যটকেরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উপর নাখোশ।
এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার ট্যুরিষ্ট পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হোসাইন মো. রায়হান কাজেমী বলেন, বীচ এলাকা অপরাধমুক্ত রাখতে আমরা সার্বক্ষণিক তৎপর। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে সাথে সাথে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে চাঁদাবাজদের দৌরাত্ন্য
পড়া যাবে: [rt_reading_time] মিনিটে
