ইমাম খাইর, সিবিএন:
কক্সবাজারকে সুন্দরভাবে সাজানো সবার দায়িত্ব। সারাবিশ্বে থেকে পর্যটক আসেন। আপনারা কক্সবাজার নিয়ে ভাবুন, উন্নয়নের চিন্তা করুন। সবাই মিলে আমরা দেশকে এগিয়ে নিতে চাই।

শনিবার দুপুরে কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভসহ ১০ প্রকল্প উদ্বোধন কালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজারের অপার সম্ভাবনা তুল ধরেন।

তিনি বলেছেন, কক্সবাজার হবে উন্নত একটি জেলা, উন্নত পর্যটন, খেলাধুলা এবং সাংস্কৃতিক কেন্দ্র।

তিনি বলেছেন, ইতোমধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন হয়ে গেছে। এখন কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কও চার লেন হবে অতি দ্রুত।

কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বোয়িং চলাচলের উপযোগী হয়েছে, এখানে প্রতি সপ্তাহে ঢাকা থেকে সরাসরি ফ্লাইট আসবে বলেও তিনি তার বক্তব্যে তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মেরিন ড্রাইভ তৈরি করতে গিয়ে যাদের ঘরবাড়ি অধিগ্রহণ করা হয়েছে নদীর ওইপারে তাদের জন্য আলাদা বাড়ি করে দেওয়া হচ্ছে। তারা মূলত শুটকি ব্যবসায়ী; তাদের জন্য শুটকি শুকানোর পৃথক জায়গাও করে দেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন- কক্সবাজার হবে নতুন অঞ্চল, টার্মিনাল হবে। এটি পর্যটন কেন্দ্রই শুধু নয়, খেলাধুলার কেন্দ্র। আন্তর্জাতিক খেলা হবে এখানে, সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পাশাপাশি ফুটবল খেলার ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।

বক্তব্যকালে প্রধানমন্ত্রী মেরিন ড্রাইভ তৈরির সময় পাহাড় ধসে দুর্যোগে ছয়জন সেনাবাহিনীর সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের গভীরভাবে স্মরণ করেন।

এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সাথে উপস্থিত ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও সেনা প্রধান আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক।

উপস্থিত ছিলেন- আলহাজ্ব সাইমুম সরওয়ার কমল এমপি, আলহাজ্ব আবদুর রহমান বদি এমপি, আশেক উল্লাহ রফিক এমপি, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান, জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন প্রমুখ।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর সফর সঙ্গি কয়েকজন সিনিয়র মন্ত্রী ও সামরিক বেসামরিক উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি স্থানীয় নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে সকাল ১০টায় বাংলাদেশ বিমানের বোয়িং ৭৩৭-৮০০ মডেলের উড়োজাহাজ মেঘদূত এ চেপে কক্সবাজার বিমানবন্দরে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। এসময় কক্সবাজারের সম্প্রসারিত রানওয়ে ব্যবহার করে নামার পর বিমানবন্দরে বড় আকারের উড়োজাহাজ চলাচল উদ্বোধন করেন তিনি।
বেলা ২টা থেকে ৩টার মধ্যে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ও কক্সবাজার সরকারি মহিলা কলেজের ১০০ শয্যাবিশিষ্ট ছাত্রী নিবাস, কক্সবাজার সরকারি কলেজের একাডেমিক ভবন কাম এক্সামিনেশন হল, কক্সবাজারের উখিয়ায় বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মহিলা কলেজের দ্বিতল একাডেমিক ভবন এবং মহেশখালী-আনোয়ারা গ্যাস সঞ্চালন পাইপ লাইন উদ্বোধন করবেন।
প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্প (প্রথম পর্যায়) এলজিইডি অংশের আওতায় কক্সবাজার জেলার সদর উপজেলাধীন বাকখালী নদীর উপর খুরুস্কুল ঘাটে ৫৯৫ মিটার দৈর্ঘ্যের পিসি বক্সগার্ডার ব্রিজ, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও কক্সবাজার আইটি পার্কের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।
এক্সিলাটে এনার্জি বাংলাদেশ লিমিটেড কর্তৃক নির্মিতব্য মহেশখালী ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল, সামিট এলএনজি টার্মিনাল কো. (প্রা.) লি. কর্তৃক নির্মিতব্য মহেশখালীতে দ্বিতীয় ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল, মহেশখালী উপজেলায় এসপিএম (ইনস্টলেশন অব সিংগেল পয়েন্ট মুরিং) প্রকল্প, নাফ ট্যুরিজম পার্ক, কুতুবদিয়া কলেজের একাডেমিক ভবন ও কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অফিস ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর।
১৯৯৬ সালে সেনাবাহিনী এই সড়ক নির্মাণ শুরু করে। কিন্তু নানা জটিলতা, বিশেষ করে উত্তাল সমুদ্রের ভাঙনের কারণে বারবার ব্যাঘাত ঘটে প্রকল্পের। ১৯৯৫ সালে একবার সড়কের একটি অংশ পুরোপুরি সাগরে বিলীন হয়ে যায়। এরপর সমুদ্র শাসন করতে হয়েছে। সড়কটি নির্মাণ করতে গিয়ে পাহাড় ধসে সেনাবাহিনীর ছয় জন কর্মী নিহতও হয়েছেন সড়কটি নির্মাণ করতে গিয়ে। তারপরও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উৎসাহ এবং সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কাজ শেষ করতে পেরেছে নির্ধারিত সময়ের আগেই। সড়কের পাশে সব মিলিয়ে ১১ লক্ষ গাছও রোপন করা হয়েছে।
এই সড়কটি চালু হওয়ায় একদিকে যেমন স্থানীয় বাসিন্দাদের যাতায়াতে দুর্ভোগ কমবে ঠিক তেমনি একদিকে সাগর আর অন্যদিকে পাহাড়ের মাঝখানের এই সড়ক দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে এই সড়ক নিয়ে আসবে অন্য এক সম্ভাবনা।