শাহেদ মিজান, সিবিএন:
অনেক প্রতীক্ষার পর আজ শনিবার কক্সবাজার আসবেন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। সরকারের টানা দু’মেয়াদে এবারসহ মোট পাঁচবার কক্সবাজারে আসছেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী। নানা কারণে প্রধানমন্ত্রীর এবারের কক্সবাজার সফর ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ। কক্সবাজার সফরে প্রধানমন্ত্রী স্বপ্নের মেরিনড্রাইভসহ ১৬টি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। একই সাথে তিনি আওয়ামী লীগের ‘ঐতিহাসিক’ জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন। কক্সবাজারে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে নেয়া হয়েছে বর্ণাঢ্য প্রস্তুতি। প্রশাসন ও আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এই প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর আগমণে জোরদার করা হয়েছে বিরল নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
প্রধানমন্ত্রীর এবারের কক্সবাজার সফর কক্সবাজারের মানুষের জন্য ঐতিহাসিক ও স্মরণীয় হয়ে থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। কেননা প্রধানমন্ত্রীর এই সফরের মাধ্যমে ২৬ বছর পর উন্মেচিত হচ্ছে স্বপ্নের মেরিনড্রাইভ সড়ক। যে সড়কের হাত ধরে কক্সবাজার বিশ্বপযর্টনে আরেক ধাপ এগিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে রাজনৈতিকভাবে প্রধানমন্ত্রীর এই সফরটি অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করছে। কেননা আওয়ামী লীগ আয়োজিত ‘ঐতিহাসিক’ জনসভা থেকে আগামী নির্বাচনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশান দেবেন প্রধানমন্ত্রী- এমনটি আশাবাদী নেতাকর্মীরা।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কক্সবাজার আগমণের প্রধান উপলক্ষ্য মেরিন ড্রাইভ সড়ক উদ্বোধন। দীর্ঘ ২৬ বছর পর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে সড়কটি উন্মুক্ত হতে যাচ্ছে। এই দীর্ঘ সময়ে কক্সবাজারের বিপুল মানুষ স্বপ্নের এই সড়কটির দিকে চেয়েছিলেন। অবশেষে প্রধানমন্ত্রী নিজে এসে এই স্বপ্নের নবদুয়ার উন্মোচন করবেন। মেরিন ড্রাইভ সড়ক ছাড়াও ১৬টি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীকে বরণে কঠোর প্রস্তুতি নিয়েছে আওয়ামী লীগ ও দলের অঙ্গসংগঠন। প্রধানমন্ত্রীকে বরণে কয়েক দিন ধরে জোর প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে পৃথকভাবে এই প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আয়োজিত প্রধানমন্ত্রীর ‘ঐতিহাসিক’ জনসভায় যোগ দেবেন দু’লক্ষাধিক মানুষ। প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে তোরণে তোরণে ভরে গেছে কক্সবাজার শহর। দু’দিন ধরে জেলা ও উপজেলাতে হয়েছে স্বাগত র‌্যালী। জনসভা নিয়ে তুমুল চাঙ্গা ভাব বিরাজ করছে আওয়ামী লীগসহ অঙ্গ সংগঠনে। প্রধানমন্ত্রীর আগমণ এবং জনসভাকে সফল করতে সব দলীয় সব সংগঠনের নেতাকর্মীরা দারুণ উজ্জীবিত হয়ে উঠেছে।
জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার জন্য কক্সবাজারের দায়িত্বরত ছাড়াও ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আসা পুলিশসহ বিপুল সংখ্যক আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য অতিরিক্ত নিয়োজিত করা হয়েছে। একই সাথে এসেছে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যও। পুরো কক্সবাজারকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রেখেছে তারা। কক্সবাজার শহর ও উখিয়ার ইনানীতে কয়েকদিন আগে থেকেই বিভিন্ন পয়েন্ট ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে তল্লাশী ও নজরদারি জোরদার করা হয়।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর আগমণে আয়োজিত দলীয় ‘ঐতিহাসিক’ বিশাল জনসভা ২ লক্ষাধিক লোকের সমাগমের টার্গেট নিয়ে প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। শুক্রবার বিকাল ৫টায় মঞ্চ প্রস্তুত করে এসএসএফকে হস্তান্তর করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর দলীয় ‘ঐতিহাসিক’ বিশাল জনসভাকে সফল করতে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিকলীগসহ আরো কয়েকটি অঙ্গসংগঠনের তিন হাজার স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত থাকবে। নিরাপত্তার জন্য পুরো জনসভাস্থল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘেরাও করে রাখবে।
এ ব্যাপারে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইশতিয়াক আহমেদ জয় বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে সফল জেলা ছাত্রলীগ আলাদা করে প্রস্তুতি সভা করেছি। তবে আওয়ামী লীগের সাথে সমন্বয় করে আমরা জনসভা সফল করতে নিষ্ঠার সাথে কাজ করবো।’
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান চেয়ারম্যান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজারের মানুষকে লাখো কোটি টাকার উন্নয়ন দিয়েছেন। তার কৃতজ্ঞতা স্বরূপ এখন আমাদের উচিত প্রধানমন্ত্রীকে সেভাবে অভ্যর্থনা জানানো। সে লক্ষ্যে আমরা ২লাখ মানুষ সমাগমের টার্গেট নিয়ে জনসভা আয়োজন করেছি। আশা করি এটি কক্সবাজারের বিরল ও ঐতিহাসিক রাজনৈতিক জনসভা হবে।’
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এড. সিরাজুল মোস্তফা বলেন, ‘নয় বছরের ব্যবধানে প্রধানমন্ত্রী তিনবার কক্সবাজারে আসছেন। এটা আমাদের জন্য সৌভাগ্যের ব্যাপার। আরো সৌভাগ্য তিনি আমাদেরকে উন্নয়ন দিয়ে যাচ্ছেন। তাই প্রধানমন্ত্রীর আগমণকে সার্থক করে তুলতে আমরা অন্যরকম একটা জনসভা উপহার দেবো।’ জনসভায় প্রধানমন্ত্রী আগামী নির্বাচন নিয়ে বিশদ কথা বলবেন। দলীয় নেতাকর্মীরা প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনা নিয়ে আগামী জন্য প্রস্তুতি নেবেন বলে আশা করেন তিনি।
জেলা প্রশাসনের প্রস্তুতি নিয়ে জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, ‘প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার জন্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তার নিশ্চিত করা হয়েছে। এই জন্য প্রশাসন সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে।’
প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের টানা দু’ মেয়াদে কক্সবাজারে দেড় লাখ কোটি টাকা উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। এসব প্রকল্পের মধ্যে মাতারবাড়ি কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্র হচ্ছে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে মেগা প্রকল্প। এছাড়াও কক্সবাজার বিমানবন্দর সম্প্রসারণ, মহেশখালী এলএনজি টার্মিনাল, মেডিকেল কলেজ, নাফ ট্যুরিজম পার্ক প্রকল্পও বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ প্রকল্প। এসব প্রকল্পের অর্ধেক বাস্তবায়ন হয়েছে। অবশিষ্টগুলো বাস্তবায়নের পথে। সব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে একটি স্বপ্নের কক্সবাজারকে দেখতে পাবে বাংলাদেশ।