-মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ্
বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাসন বিশাল একটি জনবর বিশিষ্ট বিভাগ। স্বাধীনতা অর্জনের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকার প্রাথমিক শিক্ষা স্তরকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেন। পরবর্তী সরকারগুলোও শিক্ষার এ স্তরকে যথাযথ অগ্রাধিকার প্রদান করে জাতিকে সুশিক্ষিত করার অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখেন। কিন্তু দেশে রাজনৈতিক উত্থান-পতনের নানা ঘটনা অন্যান্য ক্ষেত্রের ন্যায় প্রাথমিক শিক্ষার প্রসার ও মানসম্মতভাবে এগিয়ে যাওয়ার পথেও বাধা-বিপত্তি ঘটেছে। বিশেষত উল্লেখিত সময়ে উচ্চ শিক্ষাস্তরে অনেক কিছু ঘটলেও প্রাথমিক শিক্ষাস্তরে সত্তরের দশকের মাঝামাঝি হতে নব্বইয়ের প্রথমার্ধ পর্যন্ত তেমনটা সচেতন মহলের দৃষ্টি আকর্ষণে সমর্থ্য হয়নি। তবে প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাসনে ও এর কাঠামোতে ধারাবাহিক কিছু সংস্কার এবং সুসংহত করার প্রয়াস চালানো হয়েছে। ১৯৯০ সালে প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করে একটি আইন প্রণয়ন ও কার্যকর করা শুরু করা হয়। আর নব্বইয়ের দশকের প্রথমার্ধ হতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিভাগকে পূর্ণাঙ্গ একটি মন্ত্রণালয়ে রূপদান করে প্রাথমিক স্তরের ব্যাপক প্রসার ঘটানো হয়। এসময় সারাদেশে প্রায় ২০ হাজার নতুন প্রাথমিক বিদ্যালয়কে প্রঠদান চালু ও নিবন্ধনের আওতায় নিয়ে আসা হয়। যাহোক, প্রাথমিক শিক্ষা স্তর শিক্ষিত মানবসম্পদ গড়ে উঠার ভিত্তিভূমি। এ ভিত্তিভূমিকে সঠিক পথে পরিচালিত করার কাজটি তেমন একটা ভাবা হয়নি সব মহলে। অথচ প্রামিক শিক্ষা যদি ভালভাবে শিশু মনে গেঁথে দেয়া না হয়, ভবিষ্যতে কোন শিক্ষার্থী যে বেশিদূর এগুতে পারে না, এটা নিশ্চয়ই সকলেই স্বীকার করেন। উন্নত-অনুন্নত সব দেশই শিক্ষা প্রশাসনের এ স্তরকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়া হয়, তা সবাই জানেন। লোকপ্রশাসন ও প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাসনের মধ্যকার মিথস্ক্রিয়ার ক্ষেত্রটি কী হতে পারে, তা নিয়ে এখানে আলোকপাত করা হলো।
লোকপ্রশাসনের কী?
লোকপ্রশাসন স্বতন্ত্র একটি বিভাগ বা অধ্যয়নের বিষয় হিসেবে পরিচিত হয়ে আসছে উনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিক হতে। এ বিষয়টি এখনও সমাজ বিজ্ঞান অথবা গণমুখি বিষয়রূপে বিকাশমান। বাংলাদেশের সকর বিশ^বিদ্যালয়ে এটি এখন অন্যতম অধ্যয়নের বিষয় হলেও উচ্চ মাধ্যমিক বা নিন্মস্তরে গুরুত্বের সাথে পাঠ্য তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে না। আর বর্তমান সরকার এ বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তন করে সরাসরি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বা মিনিিিসম্ট্র অব পাবলিক এডমিনিস্ট্রেশন রেখেছে। এখন মন্ত্রণালয়ের নামটিও বেশ মানানসই এবং জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এ বিষয়ের একতজন ছাত্র হিসেবে আমিও খুব গর্ব বোধ করি। যাহোক, আমরা এখানে লোকপ্রশাসনের কিছুটা তাত্ত্বিক বা সংজ্ঞাগত পরিচিতি আরোচনা করব।
১। লোকপ্রশাসন বিজ্ঞানী পল এইচ এপলবি বলেন,“লোকপ্রশাসন হচ্ছে নীতি প্রণয়ন। তবে এ নীতি প্রণয়ন স্ব-ইচ্ছায় প্রণীত কিংবা একান্তভাবে নিরবিচ্ছিন্ন নীতি প্রণয়ন নয়।”
২। এলডি হোয়াইটের মতে ‘‘সরকারি নীতি প্রয়োগের ক্ষেত্রে সব কাজই হচ্ছে প্রশাসন।”
৩। উড্রো উইলসনের মতে “ প্রশাসন একটি সুবিন্যস্ত ও বিস্তারিত আইনের প্রয়োগ। প্রতিটি নির্দিষ্ট আইনকে কাজে পরিণত করাই হচ্ছে এক কথায় প্রশাসন।’;
৪। ডিমকের মতে “প্রশাসন সরকার কী এবং কীরূপ তা নিয়ে আলোচনা করে।”
৫। সাইমন বলেচেন, “সাধারণ অর্থে প্রশাসন বলতে জাতীয়, কেন্দ্রীয় এবং স্থানীয় সরকারের কার্যনির্বাহী বিবাগের কাজকে বুঝায়।”
উপরোক্ত সংজ্ঞাসমূহের আলোকে আমরা বলতে পারি যে, সরকার প্রণীত নীতি ও আইনসমূহের জনকল্যাণার্থে বাস্তবায়ন এবং প্রয়োগের সম্মিলিত প্রচেশ্টাই হলো লোকপ্রশাসন। অন্য কথায় রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সেবা জনগণের জন্য নিশ্চিত করতে রাজনীতিবিদগণের গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াই হলো লোকপ্রশাসন।
প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাসন কী?
প্রাথমিক শিক্ষা স্তরের কার্যক্রম জাতি গঠন বা মানব সম্পদ উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রারম্ভিক ও প্রধানতম স্তর। আধুনিক বিশে^র সকল দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাই প্রাথমিক, মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক এবং উচ্চ মিক্ষা এ তিনটি প্রধান স্তরে বিভক্ত। যাহোক, আমরা এ নিবন্ধে প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাসন বলতে বুঝায়, ৫+ হতে ১০+ বয়সের প্রত্যেক শিক্ষার্থীর প্রথম শ্রেণি হতে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষাচক্র সুসম্পন্ন করানোর সার্বিক প্রক্রিয়া। অন্য কথায় প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাসন হলো, প্রাথমিক শিক্ষার নীতি, উদ্দেশ্য, সরকারি চাকুরি বিধি-বিধান এবং আইনসমূহ যথাযথ বাস্তবায়নের ন্য যে সকল কর্মকান্ড ও সঙগঠন রয়েছে, তার সামগ্রিক পরিচালনা ব্যবস্থাপনা। বস্তুত: প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাসন বাংলাদেশ লোকপ্রশাসনের অংশ বিশেষ।
প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাসন কাঠামো: প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাসন সচিবালয় হতে প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত বিস্তৃত। আর এ প্রশাসন মন্ত্রণালয় হতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এবং মাঠপর্যায়ের অফিসগুলোর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাসনের কাঠামোটি নিন্মরূপ;
উপরোক্ত সাংগঠনিক কাঠামোতে দেশের প্রাথমিক শিক্ষা বিষয়ক যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে। বিশেষত: প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরই সকল কর্মকান্ডের মূল কেন্দ্রবিন্দু। ৮ টি বিভাগে বিভাজিত হয়ে এখানে কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়ে থাকে। আর সেগুলো হলো; প্রশাসন বিভাগ, পরিচালনা ও উন্নয়ন, প্রশিক্ষণ, আইএমডি, পলিসি এন্ড অপারেশন, পরীবিক্ষণ ও মূল্যায়ন, প্রোগ্রাম এবং অর্থ বিভাগ।
১. প্রশাসন বিভাগের কাজসমূহ:
১। মাঠ প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ, ২। জনবল নিয়োগ ও পদোন্নতি, ৩। পাঠ্যপুস্তক বিতরণ, ৪। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা পরিচালনা, ৫। জাতীয় দিবসসমূহ উদযাপন, ৬। আইনগত সহায়তা প্রদান ব্যবস্থাপনা, ৭। পরিবহণ ব্যবস্তাপনা, ৮। কর্মকর্তা-কর্মচারিগণের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি, ৯। প্রধান কার্যালয়ের সাধারণ প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা, ১০। আন্ত:বিভাগীয় কার্যক্রমের সমন্বয় সাধন, ১১। উন্নয়ন সহযোগি সংস্থাসমূহের কার্যক্রম সমন্বয় সাধন, ১২। যুগোপযোগি নীতিমালা প্রণয়ন ও সংস্কার সাধন; প্রভৃতি।
২. পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগ:
১। উন্নয়ন পরিকল্পনা ও কর্মসূচি প্রণয়ন, ২। প্রকল্প কর্মসূচির অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ, ৩। উন্নয়ন সহযোগি ও সরকারি দপ্তরের সাথে সমন্বয় সাধন, ৪। বিদ্যালয় ও উপজেলা পর্যায়ে পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়নে সহযোগিতা প্রদান, প্রভৃতি।
৩. আই এম ডি বা তথ্য ব্যবস্থাপানা বিভাগ:
১। মাঠ পর্যায় থেকে কেন্দ্রিয় পর্যায় পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা সংক্রান্ত সকল তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণ এবং ব্যবহার করা, ২। বার্ষিক বিদ্যালয় জরিপ পরিচালনা, ৩। কর্মকর্তা বা কর্মচারি সংক্রান্ত তথ্য সংরক্ষণ, ৪। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার ফলাফল প্রস্তুতকরণ এবং এ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য সংরক্ষণ করা, ৫। অধিদপ্তরের সকল ডাটা সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং প্রক্রিয়াজাতকরণ, ৬। ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাসনের সকল কার্যক্রমকে ইন্টারনেট/অনলাইনের আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে সার্বিক তত্ত্বধান করা, প্রভৃতি।
৪. পরীবিক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ:
১। মাঠ প্রশাসন ও বিদ্যালয় কার্যক্রম মনিটরিং করা, ২। বিদ্যালয় পরিদর্শন কার্যক্রম মনিটরিং ও মূল্যায়ন, ৩। বার্ষিক বিদ্যালয় জরিপ, শিশু জরিপ পরিচালনা, এ সংক্রান্ত তথ্য সংরক্ষণ এবং প্রতিবেদন প্রণয়ন, ৪। জাতীয় শিক্ষার্থী মূল্যায়ন পরিচালনা, প্রতিবেদন তৈরি ও প্রকাশ, ৫। বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগি সংস্থার সাথে লিঁয়াজো করা ও কাজের সমন্বয় সাধন, প্রভৃতি।
৫. পলিসি অপারেশন বিভাগ:
১। শিক্ষক ও বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা, ২। একীভূত শিক্ষা ব্যবস্থাপনা, ৩। সামাজিক উদ্বুদ্ধকরণ কমসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন, ৪। শিক্ষক নিয়োগ দান করা, ৫। শিক্ষক তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ, ৬। শিক্ষকদের ডাটাবেজ তৈরি ও সংরক্ষণ, ৭। শিক্ষক ক্যারিয়ার পাথ গঠন ও প্রণোদনা প্রদানের ব্যবস্থা করা, ৮। বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগি সংস্থা এবং সরকারি দপ্তরের সাথে কাজের সমন্বয় সাধন, প্রভৃতি।
৬. প্রশিক্ষণ বিভাগ:
১। বিভিন্ন ক্ষেত্রে দীর্ঘ ও স্বল্প মেয়াদী প্রশিক্ষণ পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা, ২। প্রশিক্ষণ ম্যানুয়েল তৈরিকরণ, ৩। শিক্ষক সংস্করণ, শিক্ষক সহায়িকা ও শিক্ষক নির্দেশিকা ইত্যাদি তৈরিকরণ, এবং ৪। বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগি সংস্থা এবং সরকারি দপ্তরের সাথে কাজের সমন্বয় সাধন, প্রভৃতি।
৭. প্রোগ্রাম বিভাগ:
১। কর্মসূচির বাস্তবায়নে অর্থ বরাদ্দসহ কর্ম পরিকল্পনা প্রণয়ন, ২। বিধি কর্মসূচির অগ্রগতি মনিটরিং, ৩। পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং ৪। বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগি সংস্থা এবং সরকারি দপ্তরের সাথে কাজের সমন্বয় সাধন, প্রভৃতি।
৮. অর্থ বিভাগ:
১। অর্থ ব্যবস্থাপনা (উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন), ২। বাজেট প্রণয়ন, ৩। অডিট ও হিসাব সংরক্ষণ এবং প্রতিবেদন তৈরিকরণ, ৪। সেবা ও সংগ্রহ, এবং ৫। বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগি সংস্থা এবং সরকারি দপ্তরের সাথে কাজের সমন্বয় সাধন, প্রভৃতি।
উপরোক্ত বিবরণ হতে আমরা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রশাসনিক ও দাপ্তরিক কাজগুলোর একটি সুস্পষ্ট চিত্র দেখতে পাই। সারাদেশের মাঠ পর্যায়ে কর্মরত কর্মরত কর্মকর্তা, প্রায় ৬৫ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ৩০ সহ¯্রাধিক বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ( কেজি বা এনজিও পরিচালিত বিদ্যালয়সহ) ও ৫ লক্ষাধিক শিক্ষক-শিক্ষিাকার সকল বিষয় তদারকি করে থাকে এ অধিদপ্তর। ৭ টি বিভাগে বিভাগীয় পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন ৭ জন উপপরিচালক ও ৭ জন সহকারি পরিচালক। ৬৪টি জেলায় কর্মরত আছেন ৬৪ জন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এবং প্রতেক জেলায় ২ জন করে সহকারি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার কর্মরত আছেন। আর ৪৮০টি মত উপজেলা ও থানায় (সিটি এলাকা) ৪৮০ জন উপজেলা শিক্ষা অফিসার এবং ২৫ হাজার মত সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার কর্মরত আছেন। শিক্ষকদেরকে পেশাগত প্রশিক্ষণ প্রদান এবং তাঁদেরকে পেশাগতভাবে সুদক্ষ, সমৃদ্ধ এবং শ্রেণি পাঠদান কার্যক্রমের কলা-কৌশল প্রয়োগে সুনিপুণ করে তোলার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে, জেলা পর্যায়ে ৫৫ টি পিটিআই। ৪৮০ টি উপজেলা/থানা পর্যায়ে এ কাজটি পরিচালনা করছে, উপজেলা রিসোর্স সেন্টারসমূহ। প্রত্যক রিসোর্স সেন্টারে কর্মরত আছেন, ১জন করে ইন্সস্ট্রাক্টর এবং ০১ জন করে সহকারি ইন্সস্ট্রাক্টর। প্রত্যেক প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালিত হয় একজন প্রধান শিক্ষকের নেতৃত্বে। আর প্রয়োজনীয় সংখ্যক সহকারি শিক্ষক কর্মরত থাকেন। আর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এক একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শ্রেনি পাঠদানহ সকল প্রকার প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে। যাহোক, এখানে সংক্ষেপে প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাস ব্যবস্থা আলোকপাত করা হয়েছে। নিন্মে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রদত্ত্ব মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান ও কার্যক্রম এক নজরে তুলে ধরা হলো:
১। মোট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা-৬৩৬০১ টি।
-সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়-৩৭৬৭২ টি,
-বিদ্যালয় বিহীন এলাকায় নতুন প্রতিষ্ঠিত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়-৬৩৪ টি,
-সদ্য জাতীয়করণকৃত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়-২৫২৪০ টি।
-পিটিআই সংলগ্ন পরীবিক্ষণ বিদ্যালয়-৫৫ টি।
২। কর্মরত শিক্ষক/শিক্ষিকা:
-মোট শিক্ষক/শিক্ষিকা- ৩ লক্ষ ২২ হাজার ৭৬৬ জন।
৩। ছাত্র/ছাত্রীর সংখ্যা: ২ কোটি ৫০ লক্ষ প্রায়।
৪। বই বিতরণ: মোট ১১ কোটি প্রায়।
৫। ছাত্র/ছাত্রী ভর্তির হার- ৯৭.৯৪% প্রায়।
৬। ঝরে পড়ার হার-২০%-এর নীচে।
৭। শিক্ষা সমাপনের হার-৮০%।
৮। উপবৃত্ত সুবিধাভোগীর সংখ্যা- ১ কোটিরও বেশি।
৯। শ্রেণিকক্ষ-প্রায় ২৬ হাজার।
১০। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় পাশের হার-৯৯% প্রায়।
১১। ৮ম শ্রেণি চালুকৃত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়-১০০০ টি প্রায়।
১২। ঝরে পড়া শিক্ষর্থীদের জন্য প্রতিষ্ঠিত আনন্দ স্কুল সংখ্যা-১৯ হাজারেরও বেশি। ছাত্র/ছাত্রর সংখ্যা ৬ লক্ষাধিক।
১৩। শিশু কল্যাণ ট্রাস্ট বিদ্যালয়ের সংখ্যা-১৫০ টি। ছাত্র/ছাত্রীর সংখ্যা ৩০ হাজার প্রায়।
১৪। স্কুল ফিডিং কার্যক্রম: সারাদেশে ৯৩ টি উপজেলার প্রায় ১৬ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৩১ লক্ষ ছাত্র/ছাত্রী এ কার্যক্রমের আওতাধীন রয়েছে।
লোকপ্রশাসন ও প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাসনের মধ্যকার সম্পর্ক: প্রাথমিক শিক্সা প্রশাসন সামগ্রিকভাবে লোকপ্রশাসনেরই অঙ্গ। প্রাথমিক শিক্ষা বাংলাদেশের নাগরিকদের মৌলিক অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার। এটা সার্বজনীন, সবার জন্য, সকল শিশুর জন্য। বিশেষত: ৫+—১০+ বয়সের শিশুদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি পড়াশোনা করা আবশ্যক। ১৯৯০ সালে দেশে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা অইন জারি করা হয়। এ আইনে ১৯৯২ সালের ১ জানুয়ারি হতে প্রথম পর্যায়ে ৬+—-১০+ বয়সী শিমুদের জন্য দেশের ৬৮ টি উপজেলা/থানায় বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা চালু করা হয়। ১৯৯৩ সাল হতে সমগ্র দেশে এ আইন চালু রয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নে সাথে লোকপ্রশাসনের পাশাপাশি রয়েছে জনগণ ও জনপ্রতিনিধিগণের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ। সর্বোচ্চ জাতীয় পর্যায় থেকে ওয়ার্ড পর্যায়ে প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য পৃথক কমিটি রয়েছে। বিদ্যালয পর্যায়ে রয়েছে ম্যানেজিং কমিটি, শিক্ষক-াভিবাবক কমিটি এবং বিদ্যালয় কল্যাণ সমিতি। এভাবে কোমলম,তি শিমুদেরকে পাঁচ (০৫) বছর মেয়াদী প্রাথমিক শিক্ষাচক্র সুসম্পন্ন করতে প্রশাসন ও জনগণের প্রত্যক্ষ এবং সম্মিলিত প্রয়াস অব্যাহত রয়েছে। অতএব, লোকপ্রশাসন তথা রাষ্ট্যীয় আমলাতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাসন কাজ করছে। উভয় পক্ষের মধ্যকার সম্পর্ক অত্যন্ত নিবীড। কারণ লোকপ্রশাসনের অন্তরালে যাঁরা আছেন, তাঁদেরকে বিত্তি তৈরি করে দিয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার এ স্তরটিই।
প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাসনের সীমাবদ্ধতাসমূহ: প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয, কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে থেকেই এখনও কাজ পরিচালনা করতে হয়। এ মন্ত্রণালয়ে যোগ্য, দক্ষ ও মেধাবী কর্মকর্তা নিয়োগ বা পদায়নের জন্য এটিকে ক্যাডার সার্ভিসভুক্ত করা হয় নি এখনও। ফলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা অন্য মন্ত্রণালয় হতে এ বিভাগে উর্ধ্বতন পদে লোক প্রেষণে নিয়ে আসা হয় এবং গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে পদায়ন করা হয়। এঁদের বেশির ভাগই প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন কার্যক্রমের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা নেই। মাঠ পর্যায়ে কাজ করে অভিজ্ঞতা সঞ্চয়কারি বিভাগীয় কর্মকর্তাগণকে এসব গুরুত্বপূর্ণ পদায়নের ব্যবস্থা করাই সমীচিন হত। আর বিভাগীয় অভিজ্ঞ, দক্ষ ও মেধাবী কর্মকর্তাগণ পদোন্নতিসহ বিবিধ সুযোগ-সুবিধা স্বাভাবিকভাবে পান না বলে, তাঁরা এক ধরণের হতাশায় ভুগেন। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে কর্মরত বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাগণ অনেকেই অসচ্ছ, অদক্ষ ও অনিয়মতান্ত্রিক কার্যক্রমে লিপ্ত হয়ে পড়েন; এ ধরণের হতাশা থেকেই। এখানে নিয়োগ, বদলী, সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি নিয়ে বহুমুখি অনিয়মের চর্চা বিদ্যমান রয়েছে। অধিকন্তু, বিদ্যালয় পর্যায়ে অনেক যোগ্য, দক্ষ ও উচ্চ শিক্ষিত তরূণ লোকজন শিক্ষকতা পেশায় আসলেও, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হতাশা-নিরাশা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন, শিক্ষকমন্ডলী। কাজেই, নিিত নির্ধারণী পর্যায়ে জাতির মেরুদন্ড শিক্ষা এ ভিত্তিভূমি এ প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাসনে সার্বিক স্বচ্ছতা ও গতিশীলতা আনয়ন এবং গৃহীত সকল কর্মসূচি বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার প্রতি সবার যতœবান হওয়ার উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের সময় এসেছে।
উপসংহার: প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাসনের সাথে লোকপ্রশাসনের সম্পর্ক নিয়ে এ নিবন্ধে অলোকপাত করা হয়েছে। লোকপ্রশাসনের একজন ছাত্র হিসেবে আমার মনে হয় বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাসন বিষয়টি লোকপ্রশাসনের বৃহত্তর ক্ষেত্রের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশরূপে অনালোকিত রয়ে গেছে। ফলে, লোকপ্রশাসনে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক কার্যক্রমে অদক্ষ, অনভিজ্ঞ ও ব্যক্তিত্বহীন অনেকটা অভিজ্ঞতাধর্মী। লোকপ্রশাসনের তাত্ত্বিক, একাডেমিশিয়ান ও গবেষকগণের এ বিষয়ে মনযোগ আকর্ষণের নিমিেিত্ত এ ক্ষুদ্র প্রয়াস।