মোঃ আশেকউল্লাহ ফারুকী, টেকনাফ:
চৈত্র, বৈশাখ ও জ্যৈষ্ট এ তিনমাস টেকনাফ সীমান্ত উপজেলার টেকনাফ পৌরসভাসহ ৫ ইউনিয়নে খাবার ও ব্যবহারের পানির সংকট দেখা দেয়। পানির সংকটাপন্ন জনপদগুলো হচ্ছে, টেকনাফ পৌরসভা, টেকনাফ সদর ইউনিয়ন, হ্নীলা, হোয়াইক্যং ও বাহারছড়া ইউনিয়ন। পুকুর ভরাট, খাল বরাট, টিউবওয়েল, রিংওয়েল বিকল ও পানির যতেচ্ছ ব্যবহারের কারণে খাবার ও ব্যবহারের পানি এ ৩ মওসূমে সংকট বেশী দেখা দেয়। এসব তথ্য পানি সংকটাপন্ন এলাকার ভূক্তভোগী জনগণের। এ তিন মাসে খরা মওসুমে ভূগর্ভস্থ থেকে পানিরস্থর নেমে যাওয়ার ফলে পানির সংকট বেশী দেখা দেয়। যেখানে গভীর নলকূপ রয়েছে সেখানে শুধু খাবারের পানি পাওয়া যাচ্ছে। পানির স্থর নেমে যাওয়াতে অগভীর ও রিংওয়েলে পানি পাওয়া যাচ্ছেনা। টেকনাফ পৌরসভা হ্নীলা, হোয়াইক্যং ও বাহারছড়া ইউনিয়নগুলো পাহাড় সংলগ্ম। পৌরসভাসহ ৫ ইউনিয়নের প্রায় এলাকায় ভূগর্ভে পাথর থাকায় এখানে গভীর ও অগভীর নলকূপ কৃতকার্য্য হয়না। যার কারণে ঠিকাদারেরা এখানে কাজ করতে চায়না। টেকনাফ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল দপ্তর কর্তৃক অতীতে যে সব ইউনিয়নে এবং পৌর এলাকায় পানি সংকট রয়েছে সে সব এলাকায় গভীর নলকূপ স্থাপন করলে ও ঔসব নলকূপ গুলো অধিকাংশ প্রভাবশালীর ব্যক্তিমালিকানাধীনে চলে গেছে। প্রভাবশালীদের বাউন্ডারীর ভিতর এসব গভীর নলকূপ থেকে প্রতিবেশী গরীব জনসাধারণ খাবার পানি সংগ্রহ করতে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। টেকনাফ পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডই খাবার ও ব্যবহার পানির সংকট এ তিনমাস লেগেই থাকে। নাইট্যংপাড়ায় একটি এনজিও সংস্থা কর্তৃক নিমির্ত গভীর নলকূপ স্থাপন করে কয়েকটি ওয়ার্ডে পানি সরবারহ ব্যবস্থা করলে ও এতে কোন সুফল পাচ্ছেনা পৌরবাসী। হ্নীলা, হোয়াইক্যং ও বাহারছড়া ইউনিয়নের পাহাড়ের পাশ্বে পানির সংকট অত্যুধিক। এসব এলাকার জনগণ পাহাড়ী ঝর্ণা এবং গর্ত খনন করে খাবার পানি সংগ্রহ করে থাকে। এছাড়া নয়াপাড়া ও লেদা পানির সংকটের প্রভাব পড়ে। খাবার ও ব্যবহারের পানির স্থায়ী সংকট দূরীবিত করতে হলে পানি বিশেষজ্ঞদের মতে ঐতিহ্যৃবাহী বড় বড় পুকুর বা দিঘী ও খাল ভরাট না করা। জায়গা জমির দাম হঠাৎ আকাশচুম্বি হওয়ায় প্রভাবশালী ভূমিদস্যুরা ঐসব পুকুর ভরাট করে দখলে নিচ্ছে। ফলে ব্যবহারের পানির সংকট দেখা দেয়। যেমন, টেকনাফ উপজেলা প্রশাসনের চোখের সামনে পৌরসভার ইসলামাবাদ ও কায়ুকখালী পাড়ার ২টি বড় পুকুর ভরাট হয়ে গেছে। এর মধ্যে ইসলামাবাদ, টেকনাফ বাহারছড়া সড়কের পাশ্বে ইসলামাবাদ এলাকায় ঐতিহ্যৃবাহী বড় পুকুরটি ক্রমান্নয়ে ভরাট করে প্রভাবশালী ভূমিদস্যুরা দখলে নিচ্ছে। প্রথমে এর বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ঠ দপ্তরে সচেতন মহলের অভিযোগ এবং সংবাদপত্রে নেখালেখী করার পর পরিবেশ অধিদপ্তর বন্ধ করে দিলেও রহস্যজনক কারণে ফের পুকুরটি ভরাট হয়ে যাচ্ছে। খাবার পানির সংকট রেহায় পেতে হলে পাহাড়ী এলাকা থেকে প্রবাহিত ঝর্ণার পানি নিয়ন্ত্রন, বৃষ্ঠির পানি সংরক্ষণ, পুকুর ও খাল খননের ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া লেঙ্গুরবিলে বৃটিশামলে নির্মিত বিকল গভীর নলকূপটি পুণঃ সংস্কার করলে গোটা পৌর এলাকায় পানির চাহিদা মেটাতে পারবে। তৎকালীন বৃটিশ সরকার এখান থেকে চলে যাবার পর উক্ত নলকূপটি বিকল হয়ে যায়। উক্ত নলকূপ থেকে এখনো ঝর্ণার পানি নির্গত হচ্ছে। টেকনাফ উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল দপ্তরটি শুধুমাত্র বিশুদ্ধপানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার একমাত্র জনস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানটি অতীতে উল্লেখযোগ্য জনস্বাস্থ্যের জন্য তেমন ভূমিকা পালন করতে পারেনী। দীর্ঘ এক যুগধরে কর্মকর্তার পদশূণ্যতার কারণে এ জনগুরুত্বপূর্ণ দপ্তরটি চালিয়েছিল কর্মচারীরা এ দপ্তরে যাবতীয় কাজ সম্পাদন করেছিল। যার ফলে ঐ সময় ভূক্তভোগী জনগণ এ দপ্তর থেকে কাংখিত সেবা পায়নি। টেকনাফ উপজেলা জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তা কিউ চাইম্যং বলেন, ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে পল্লী অঞ্চল পানি সরবারহ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় গভীর নলকূপ ৬টি, অগভীর ৫টি এবং রিংওয়েল ৭টি বরাদ্ধ পাওয়া গেছে। স্থানীয় চেয়ারম্যান বরাদ্ধের তাগদা দেয়া হয়েছে। কেন যেন, তারা আসতেছেনা তাহা আমার বুধগম্য হচ্ছে না। এদিকে এলাকার লোকজন পানির জন্য হাহাকার করলেও জনপ্রতিনিধিরা এ ব্যাপারে তেমন আন্তরিক নয়। যার কারণে গভীর অগভীর নলকূপও রিংওয়েল বরাদ্দপত্র এমনি পড়ে আছে।
টেকনাফে সুপেয় পানির তীব্র সংকট
পড়া যাবে: [rt_reading_time] মিনিটে
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।