১৬ প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর হবে
শাহেদ মিজান, সিবিএন:
আগামী ৬ মে কক্সবাজার সফরে আসছেন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। সরকারের টানা দু’মেয়াদে এবারসহ মোট তিনবার কক্সবাজারে সফরে আসবেন। কক্সবাজারে প্রধানমন্ত্রী স্বপ্নের মেরিনড্রাইভসহ ১৬টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। একই সাথে তিনি আওয়ামী লীগের জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন। প্রধামন্ত্রীর এই আগমণ উপলক্ষ্যে জোর প্রস্তুতি চলছে। জেলা প্রশাসন এবং সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের মধ্যে তোড়জোড় চলছে। দেশনেত্রীর আগমণকে সফল করতে সবাই নির্ঘুম সময় পার করছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কক্সবাজার আগমণের প্রধান উপলক্ষ্য মেরিন ড্রাইভ সড়ক উদ্বোধন। দীর্ঘ ২৫ বছর পর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে সড়কটি উন্মুক্ত হতে যাচ্ছে। এই দীর্ঘ সময়ে কক্সবাজারের বিপুল মানুষ স্বপ্নের এই সড়কটির দিকে চেয়েছিলেন। অবশেষে প্রধানমন্ত্রী নিজে এসে এই স্বপ্নের নবদুয়ার উন্মোচন করবেন। এর মাধ্যমে কক্সবাজারের পর্যটনসহ
াতিক বিমানবন্দরে সম্প্রসারিত বিমানবন্দরে ৭৩৭-৮০০বোয়িং বিমান চলাচল উদ্বোধন করবেন। এছাড়া ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন, চেইন্দায় আইটি পার্ক, খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাঁকখালী নদী সেতু, এসপিএম প্রজেক্ট, নাফ ট্যুরিজম পার্ক ও কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অফিস ভবনের উদ্বোধন করবেন।
জেলা প্রশাসন সূত্র আরো জানায়, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের টানা দু’ মেয়াদে কক্সবাজারে দেড় লাখ কোটি টাকা উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। এসব প্রকল্পের মধ্যে মাতারবাড়ি কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্র হচ্ছে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে মেগা প্রকল্প। এছাড়াও কক্সবাজার বিমানবন্দর সম্প্রসারণ, মহেশখালী এলএনজি টার্মিনাল, মেডিকেল কলেজ, নাফ ট্যুরিজম পাক প্রকল্পও বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ প্রকল্প। এসব প্রকল্পের অর্ধেক বাস্তবায়ন হয়েছে। অবশিষ্টগুলো বাস্তবায়নের পথে। সব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে একটি স্বপ্নের কক্সবাজারকে দেখতে পাবে বাংলাদেশ।
সূত্র মতে, স্বপ্নের মেরিড্রাইভ সড়ক প্রকল্পে খরচ হয়েছে এক হাজার ৪০ কোটি টাকা। সালে শুরু হয়ে দীর্ঘ ২৫ বছর পর স্বপ্নের এই সড়কটির কাজ সমাপ্ত হলো। সদ্য সমাপ্ত হওয়া কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৫৬ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। ২০১২ সালে শুরু হয়ে ২০১৬ সালের শেষে দিকে দৃষ্টিনন্দন এই মেডিকেল কলেজ ভবন নির্মাণ কাজ শেষ হয়। কক্সবাজার সরকারি মহিলা কলেজের ১০০ শয্যা বিশিষ্ট ছাত্রীনিবাস নির্মাণে ব্যয় হয়েছে সাড়ে পাঁচকোটি টাকা। উখিয়া বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মহিলা কলেজের একাডেমিক ভবন নির্মাণে ব্যয় হয়েছে তিন কোটি টাকা। কুতুবদিয়া কলেজের একাডেমিক ভবন নির্মাণে ব্যয় জানা যায়নি। কক্সবাজার সরকারি কলেজের একাডেমিক ভবন নির্মাণে ব্যয় হয়েছে সাড়ে তিনকোটি টাকা। ১১২৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সম্প্রসারিত বিমানবন্দরের কাজ চলছে। এরই মধ্যে ৭৩৭-৮০০বোয়িং বিমান চলাচল উপযোগী হয়েছে বিমানবন্দর।
ভিত্তিপ্রস্তর হতে যাওয়া প্রকল্পগুলোর মধ্যে চেইন্দায় আইটি পার্কের জন্য বরাদ্দ ধরা হয়েছে দেড়শ কোটি। মহেশখালীতে এলএনজি টার্মিনালে ব্যয় হচ্ছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ হাসাতাল, খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাঁকখালী নদী সেতুর জন্য বরাদ্দ ধরা হয়েছে ২’শ কোটি টাকা, এসপিএম প্রজেক্ট র জন্য বরাদ্দ ধরা হয়েছে, নাফ ট্যুরিজম পার্কের জন্য প্রাথমিক ভাবে ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর জনসভা নিয়ে তুমুল চাঙ্গা ভাব বিরাজ করছে আওয়ামী লীগসহ অঙ্গ সংগঠনে। প্রধানমন্ত্রীর আগমণ এবং জনসভাকে সফল করতে সব দলীয় সব সংগঠনের নেতাকর্মীরা দারুণ উজ্জীবিত হয়ে উঠেছে। জেলা থেকে উপজেলা পর্যায়ে পর্যন্ত নেতাকর্মীরা প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে জোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর আগমণে দলীয় এক বিশাল জনসভা ৬ মে শনিবার কক্সবাজার শেখ কামাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামের উত্তর পাশের মাঠে এই জনসভা আয়োজন হবে। লক্ষাধিক লোকের সমাগমের টার্গেট নিয়ে জনসভার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে জনসভা আয়োজনের কাজ শুরু হয়ে গেছে। মঞ্চ নির্মাণ, প্রচার-প্রচারণাসহ সব ধরণের কাজ শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে ব্যানার-পোস্টার সাটাই হয়ে গেছে। চলছে মাইকিংসহ নানা প্রচারণা।
প্রধানমন্ত্রীর দলীয় জনসভাকে সফল করতে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিকলীগসহ আরো কয়েকটি অঙ্গসংগঠন পৃথক পৃথক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। ৩০ এপ্রিল অনুষ্ঠিত জেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তুতি সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম, ২ মে অনুষ্ঠিত জেলা ছাত্রলীগের প্রস্তুতি সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ। জেলা ছাড়াও উপজেলা পর্যায়েও আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনগুলো সভার মাধ্যমে আলাদাভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করছে।
এ ব্যাপারে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইশতিয়াক আহমেদ জয় বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে সফল জেলা ছাত্রলীগ আলাদা করে প্রস্তুতি সভা করেছি। তবে আওয়ামী লীগের সাথে সমন্বয় করে আমরা জনসভা সফল করতে নিষ্ঠার সাথে কাজ করবো।’
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান চেয়ারম্যান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজারের মানুষকে লাখো কোটি টাকার উন্নয়ন দিয়েছেন। তার কৃতজ্ঞতা স্বরূপ এখন আমাদের উচিত প্রধানমন্ত্রীকে সেভাবে অভ্যর্থনা জানানো। সে লক্ষ্যে আমরা এক লাখ মানুষ সমাগমের টার্গেট নিয়ে জনসভা প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।’
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এড. সিরাজুল মোস্তফা বলেন, ‘নয় বছরের ব্যবধানে প্রধানমন্ত্রী তিনবার কক্সবাজারে আসছেন। এটা আমাদের জন্য সৌভাগ্যের ব্যাপার। আরো সৌভাগ্য তিনি আমাদেরকে উন্নয়ন দিয়ে যাচ্ছেন। তাই প্রধানমন্ত্রীর আগমণকে সার্থক করে তুলতে আমরা অন্যরকম একটা জনসভা উপহার দেবো।’ জনসভায় প্রধানমন্ত্রী আগামী নিয়ে বিশদ কথা বলবেন বলবেন। একই সাথে কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন করবেন।
জেলা প্রশাসনের প্রস্তুতি নিয়ে জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, ‘প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার জন্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তার নিশ্চিত হবে। নিরাপত্তার কোনো রকম ঘাটতি থাকবে না। এই জন্য প্রশাসন সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।’