হাফেজ মুহাম্মদ কাশেম, টেকনাফ :
হালকা-মাঝারী কয়েক পশলা বৃষ্টি হতে না হতেই টেকনাফের সর্বত্র ‘গরীবের ছাউনী’ হিসাবে পরিচিত লবণ মাঠে ব্যবহৃত পলিথিন বেচা-কেনার ধুম পড়েছে। ছাউনীতে ব্যবহৃত ওম পাতা ও বাঁশের বাজারে যেন আগুন জ্বলছে। টেকনাফ, হ্নীলা, শাহপরীরদ্বীপ, হোয়াইক্যং, সাবরাংসহ প্রত্যেক স্থানে বিশেষতঃ হ্নীলা ও টেকনাফে সিন্ডিকেট বাণিজ্যের কারণে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গিয়েছে ওমপাতা ও বাঁশ। বর্ষাকাল এখনও শুরু হয়নি। যেভাবেই হউক মাথা গোঁজার স্থানে আবশ্যিক ভাবে ছাউনী দিতে হবে। খেটে খাওয়া শ্রমিক, অসহায় দিন মজুরসহ নিম্ম আয়ের ও অভাবী শ্রেণীর মানুষ নিরুপায় হয়ে বিকল্প ছাউনী হিসাবে লবণ মাঠে ব্যবহৃত পলিথিন বা ত্রিপলের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন বলে জানা গেছে। টেকনাফের হাট বাজারে বর্তমানে এসব পলিথিন বা ত্রিপল বেচা কেনার ধুম পড়েছে। বিকিকিনি হচ্ছেও প্রচুর। সহজলভ্য হওয়ায় এর কদরও দিন দিন বাড়ছে। এমনকি প্রতিদিনই পলিথিন বা ত্রিপল কিনতে উদয়াস্ত মহিলাসহ ক্রেতাদের ভিড় দেখা যায়।
জানা যায় আধুনিক পদ্ধতিতে লবণ উৎপাদনে পুরু শক্ত এবং সাইজে বড় এসব পলিথিন (রং কাল) মাঠে ব্যবহার করেন লবণ চাষীরা। বর্তমানে লবণ উৎপাদন মৌসুম আর নেই বললেই চলে। পুরোপুরিই বন্দ হয়ে গিয়েছে। লবণ চাষীরা মাঠে ব্যবহৃত পলিথিন ধুয়ে না ধুয়ে ভাঁজ করে হাট বাজারে বিক্রি করতে নিয়ে আসেন। আবার এসব বিক্রির নির্ধারিত কোন স্থানও নেই। প্রধান সড়কের পাশে, যেকোন মার্কেটের সামনে জনসমাগম মোড়ে স্তুপ করে রাখে। ‘গরীবের ছাউনী’ হিসাবে পরিচিতি লাভ করায় কেউ তাদের বাধাও দেয়না। হোয়াইক্যং, হ্নীলা, টেকনাফ, সাবরাং, নয়াপাড়া, শাহপরীরদ্বীপ, শামলাপুর বাজার এবং ষ্টেশনসহ বিভিন্ন হাট বাজারে প্রত্যেক দিনই এই পলিথিন বেচা-কেনা হচ্ছে। ৮ হাত প্রস্থ ২০-২২ হাত লম্বা একটা পলিথিন সাড়ে ৩ শত থেকে ৫০০ টাকায় পর্যন্ত বেচাকেনা হচ্ছে। ফুটো থাকলে অবশ্য দামও কমে যায়। অনেক মহিলাাকেও দেখা গেছে ছাউনীর জন্য এই পলিথিন কিনতে। পছন্দ হলে ভাঁজ করে সুতলি দিয়ে বেঁধে রিক্সায় বা টমটমে করে সহজে বাড়ী নিয়ে যেতে পারে। বাঁশ ও ওমপাতার মতো বাড়তি পরিবহণ খরচ লাগেনা। ছাউনী হিসাবে ব্যবহারও তুলনামূলক সহজ। পলিথিন ছাউনীর কাজে ব্যবহার স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্মত কিনা, টেকসই হবে কিনা, কোন ধরণের ক্ষতির আশংকা বা সম্ভাবনা আছে কিনা এনিয়ে সাধারণ গরীব মানুষের ভাবনা এবং মাথা ব্যথা নেই। কম খরচে মাথা গোঁজার ঠাঁই হলেই হল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায় ছাউনী হিসাবে পাকা ছাদ ও ঢেউটিনের ব্যবহার অতি সাম্প্রতিক। আবহমান কাল থেকেই ছাউনী হিসাবে ওম পাতা, শন, খড় ও বাঁশের ব্যবহার চলে আসছে। তাছাড়া এসব গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যও বটে। কিন্তু ওমপাতা ও বাঁশের মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় গরীব লোকেরা নাড়া (ধান কেটে ফেলার পর নিচের শক্ত অংশ), বেরমী (প্যারাবনে গজানো এক প্রকার খড়), শন এবং মুচপাতা (বনের এক প্রকার গাছের গোল গোল পাতা) দিয়ে ঘরের ছাউনী হিসাবে ব্যবহার করে আসছে। উপরোক্ত ৪ প্রকারের উপকরণ বর্তমানে সহজে পাওয়া যায়না। এখন লবণ মাঠে ব্যবহৃত পলিথিন সে স্থান দখল করে নিয়েছে। প্রচুর বেচাকেনা হচ্ছে এসব পলিথিন।