রাশেদুল মজিদ

সাড়ে ৪ একর আয়তনের দেড়শত বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী হাঁসেরদীঘি ভরাট করে স্থাপনা নির্মানে নেমেছেন খোদ কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সদস্য ডাঃ সাইফুদ্দিন ফরাজী। বেশ কিছুদিন ধরে তিনি দীঘিটি ভরাট করে তাতে সীমানা দেয়াল নির্মান করে বিভিন্ন স্থাপনা তৈরীর কাজ করছেন। স্থানীয়দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে স্থানীয় ভূমি অফিস অভিযান চালিয়ে ভরাট কাজ বন্ধ করে দেন। গতকাল বুধবার দীঘিটি পরিদর্শন করেন পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের পরিদর্শক মো. মুবিনুল ইসলাম। তিনি গতকাল রাতে সকালের কক্সবাজারকে বলেন, ‘দীঘিটি পরিদর্শন করেছি। দীঘির বেশ কিছু অংশ ভরাট করা হয়েছে। এছাড়া সেখানে সীমানা পিলার ও স্থাপনা নির্মানের কাজ চলছে। এসব কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘দীঘিটি ভরাট কার্যক্রম বন্ধ করে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়া এবং সকল স্থাপনা সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একই সাথে তাদের সাত দিনের সময় বেঁেধ দেয়া হয়েছে। সাত দিনের মধ্যে নির্দেশ বাস্তবায়ন করে পরিবেশ অধিদপ্তরকে অবহিত করার নির্দেশ দেয়া হয়। অন্যথায় প্রচলিত আইনে মামলা দায়ের করা হবে।’

ঈদগাও পৌরসভা বাস্তবায়ন আন্দোলনের সভাপতি কাফি আনোয়ার বলেন, ‘হাঁসের দীঘি বৃহত্তর ঈদগাঁও’র ঐতিহ্যবাহী জলাধার এবং বিলুপ্তপ্রায় দেশীয় মৎস্যের প্রজননক্ষেত্র। আইন অমান্য করে এটি ভরাট করে ফেলা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, ‘এ ঘটনায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসক বরাবরে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অভিযোগ দেয়া হয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতিকেও (বেলা)। যেকোন মূল্যে আমরা দীঘিটি রক্ষা করতে চাই।’

স্থানীয় ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, বৃটিশ উপনিবেশিক শাসনামলে তৎকালীন নয়াবাদ মৌজার (বর্তমান ঈদগাঁও, ইসলামাবাদ) আরাকান সড়কের পশ্চিম পাশের ৪ দশমিক ৪০ একর জমির উপর জনস্বার্থে ওই হাঁসের দীঘিটি (মৌজা: ঈদগাঁও, আর এস জোত খতিয়ান নং-৯৯২/২৭, এমআরআর খতিয়ান নং-১০২২, আরএস দাগ নং-১৩৫৪, বিএস খতিয়ান নং- ৩১৫১, বিএস দাগ নং-১৯৭৬, জমির শ্রেণী : পুকুর ) খনন করা হয়।

ওই সময়ের এতদাঞ্চলের প্রশাসনিক প্রেসিডেন্ট হিসেবে তৈয়ব উল্লাহ ফরাজীর উপর হাঁসের দীঘি সহ সকল সরকারি দীঘি,পুকুর,জলাশয় , জলাধারের সুরক্ষা ও রক্ষণাবেক্ষনের দায়িত্ব ন্যস্থ হয়। দেশ বিভাগের পরবর্তীকালে দীঘিটির মালিকানা পায় বাংলাদেশ সরকার। ১৯৬৪-৬৫ সালের ৭৮৫ নং সার্টিফিকেট মামলামূলে ১৭৫ টাকা নিলামমূল্যে পুকুরশ্রেণী হিসেবে ওই দীঘিটির দখলপ্রাপ্ত মালিক হন তৈয়ব উল্লাহ ফরাজীর ৩ পুত্র মমতাজুল হক, আবদুল খালেক ও আবদুল মালেক। ১৯৯৮সালে ৩৭/৯৮ নং মামলার সোলেনামা মুলে ৪ দশমিক ৪০ একর আয়তনের দীঘিটি পুকুর শ্রেণী হিসেবে সম্পূর্ণভাবে রায়তী মালিকানায় মমতাজুল হকের খাসদখলীয় স¤পত্তি হয়। সেই থেকে ওই দীঘিটি অক্ষতভাবে এঅঞ্চলের ঐতিহ্য,জনস্বার্থ,পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে আসছে। বর্তমানে মমতাজুল হকের মৃত্যুর পর তাঁর উত্তরাধিকারী পুত্র ও কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সদস্য ডাঃ সাইফুিদ্দন ফরাজী কোন প্রকার শ্রেণী পরিবর্তন ব্যতিরেখে দেশের প্রচলিত আইন না মেনে তা ভরাট করে চলেছেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্র্তৃপক্ষের সদস্য ডাঃ সাইফুদ্দিন ফরাজী গতকাল রাতে সকালের কক্সবাজারকে বলেন, ‘পুকুরটি আমাদের। আমার বাবা কিছু অংশ বিক্রি করেন। এখন আমরা তা ভাগ করে সীমানা দেয়াল দিচ্ছি। পুকুরটি সেচ দিয়ে দেয়া হয়েছে। অনেক আগেই এটি ভরাট হয়ে গেছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমি এখন পুকুর ভরাট করছি না। আপনারা গিয়ে দেখে আসতে পারেন।’

পরিবেশ অধিদপ্তর ও ভূমি অফিসের কর্মকর্তাদের পরিদর্শন ও অভিযান সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এলাকার কিছু লোক এসব করেছে। তারা কিছু না বুঝেই এসব করছে। ভূমি অফিস ও পরিবেশ থেকে লোকজন গিয়ে ফিরে এসেছে।’

কক্সবাজার সদর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) পঙ্কজ বড়–য়া বলেন, ‘উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ পাওয়ার পর সেখানে কর্মকর্তাদের পাঠিয়ে দীঘি ভরাট ও নির্মান কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।’

এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘খবর পাওয়ার পর অভিযান চালিয়ে কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এখন পরিবেশ অধিদপ্তর জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিবে।’

দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে: কর্নেল (অবঃ) ফোরকান আহমেদ বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। আইন না মানলে যে কারো বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিতে পারে। এক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই।’