বাংলাদেশ প্রতিদিন:
দলীয় সাংগঠনিক ভিত্তি না থাকলেও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন নিয়ে দরকষাকষির প্রস্তুতি নিচ্ছে শরিক দলগুলো। জেলা পর্যায়ে এসব দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই। গত পৌরসভা ও উপজেলা নির্বাচনে মেয়র-চেয়ারম্যান পদে দলীয় একজন প্রার্থীও তারা দিতে পারেনি। তবে সংসদ নির্বাচনে ২০টি আসনের দাবি নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে দরকষাকষি করবে শরিকরা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিকদের সঙ্গে কথা বলে তাদের এ অবস্থান সম্পর্কে জানা গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শখানেক নামসর্বস্ব ও অনিবন্ধিত দল একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন জোটে যুক্ত হওয়ার চেষ্টায় মাঠে নেমেছে। এসব দল ক্ষমতাসীন ১৪ দল ও বিএনপির ২০ দলে ঠাঁই না পেয়ে বিকল্প প্লাটফরম তৈরির চেষ্টা করছে। তাদের লক্ষ্য, জোটবদ্ধ থেকে বড় কোনো জোটের শরিক হয়ে ক্ষমতার স্বাদ নেওয়া। গত কয়েকটি জাতীয় নির্বাচনে ভোটের ফল ঘেঁটে দেখা গেছে, নির্বাচন কমিশনে ৪০টি নিবন্ধিত দলের মধ্যে মাত্র ৫টি সারা দেশে প্রার্থী দেওয়ার সক্ষমতা রাখে। ৮ থেকে ১০টি দল আংশিক প্রার্থী দিতে সক্ষম। নিবন্ধিত বাকি দলগুলো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার যোগ্যতাই রাখে না। এসব দল জোটের কাঁধে ভর করে রাজনীতি করছে। আর এই দলগুলো নিয়েই জোট ভারী করে রাজনীতি করছে প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। গত বছরের জুন থেকে ক্ষমতাসীন ১৪-দলীয় জোটের সঙ্গে যুগপৎ কর্মসূচি পালন করছে নাজমুল হুদার বিএনএ। আগামী নির্বাচনে জোটবদ্ধ হওয়ার দৌড়ে অনেকটাই এগিয়ে আছে তারা। জোটের অন্য শরিকদের অমত থাকলেও নাজমুল হুদার নেতৃত্বাধীন জোট ১৪-দলে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সবুজ সংকেত পেয়েছে বলে কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে। ২০০৪ সালে গঠিত ১৪ দলে সক্রিয় দলগুলো হলো : আওয়ামী লীগ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল—জাসদ (ইনু), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল—জাসদ (আম্বিয়া), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল—বাসদ (একাংশ), বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় পার্টি (জেপি), সাম্যবাদী দল (একাংশ), গণআজাদী লীগ, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি (একাংশ), গণতন্ত্রী পার্টি, ন্যাপ, কমিউনিস্ট কেন্দ্র ও বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন। এই ১২টি দলের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন নেই ৪টির। ১৪ দলের শরিক সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া। তিনি মহাজোট সরকারে টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রী ছিলেন পাঁচ বছর। গত নির্বাচনে তিনি অংশ নেননি। দলটির সারা দেশে সাংগঠনিক ভিত্তি সেই অর্থে নেই। বিগত উপজেলা ও পৌরসভা নির্বাচনে তার দলের কোনো প্রার্থী ছিল না। তবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে সাম্যবাদী দল। দিলীপ বড়ুয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কাছে সাম্যবাদী দল ৪টি আসন দাবি করবে।
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বাধীন জাসদের ছয়জন এমপি রয়েছেন। ইতিমধ্যে এই দলের ভাঙন হয়েছে। একটি অংশ আলাদা দল করেছে। আগামী নির্বাচন নিয়ে ভাবনা কী— জানতে চাইলে জাসদ (ইনু) সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আসন ভাগাভাগি নিয়ে এখনো কথাবার্তা শুরু হয়নি। সময়ই বলে দেবে আমরা কয়টি আসন চাইব। ’ জাসদের অন্য অংশও ১৪ দলের শরিক। আগামী নির্বাচনে লড়তে তাদেরও প্রস্তুতি চলছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জাসদ (আম্বিয়া) সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা জোটগতভাবে নির্বাচনে যাওয়ার প্রস্তুতি রাখছি। ’ কয়টি আসন চাইবেন— জানতে চাইলে বলেন, ‘এখনো বলা যাচ্ছে না। নির্বাচনের সময় দরকষাকষিতে যাব। ’ ওয়ার্কার্স পাটিতে সাতজন এমপিসহ একজন মন্ত্রী রয়েছেন। দলটি আগামী নির্বাচনে ২০টির অধিক আসন আওয়ামী লীগের কাছে দাবি করবে বলে জানা গেছে।
১৪ দলের অন্য শরিক গণতন্ত্রী পার্টির রুবী রহমানকে গত সংসদে সংরক্ষিত আসনে সদস্য মনোনীত করে আওয়ামী লীগ। এই দলের সারা দেশে কর্মী-সমর্থক না থাকলেও আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কাছে ১১টি আসন চাইবে। এ প্রসঙ্গে গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি শুরু করেছি। ’
জোটের আরেক শরিক গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি। এই দল নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত নয়। সংগঠনের সভাপতি জাকির হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আসন নিয়ে কথা বলার আগে আমাদের জোর চেষ্টা চলছে দলটির নিবন্ধন নেওয়া। নিবন্ধন পাওয়ার পর আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন নিয়ে কথা বলব। ’ ন্যাপের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘একাদশ সংসদ নির্বাচনে কতটি আসন চাওয়া হবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। গত নির্বাচনে ৫টি আসন চেয়েছিলাম। তবে সংরক্ষিত আসনে ১টি পেয়েছি। ’ এবার আরও বেশি আসন চাওয়া হতে পারে বলে জানান তিনি। গণআজাদী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস কে সিকদার বলেন, ‘আমাদের দল এখন অনেক বেশি সম্প্রসারিত। সারা দেশেই কমবেশি নেতা-কর্মী রয়েছে। তারা নির্বাচনে অংশ নিতে চায়। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কাছে আসন দাবি করব। ’ বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল—বাসদ একাংশের আহ্বায়ক রেজাউর রশিদ খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে আমরা ১৫-২০টি আসন চাইব। ৩৪ জেলায় আমাদের দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি রয়েছে। ’
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।