এম.এ আজিজ রাসেল

জমে উঠেছে রাখাইন সম্প্রদায়ের মাহা সাংগ্রেং পোয়ে বা মেত্রিময় জলকেলি উৎসব। ১৮ এপ্রিল উৎসবের দ্বিতীয় দিনে আনন্দ উচ্ছ্বাসে মেতে উঠে রাখাইন তরুন-তরুনীরা। তাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে উৎসবের বর্ণিল আবহে শরীক হয়েছে ছোট্ট শিশু ও প্রবীণরাও। ১৮ এপ্রিল দুপুরে শহরের জলকেলির প্যান্ডেল গুলো ঘুুরে দেখা যায়, টেকপাড়া, হাঙর পাড়া, বার্মিজ স্কুল এলাকা, চাউল বাজার, ফুলবাগ সড়ক, পূর্ব-পশ্চিম মাছ বাজার, আরডিএফ প্রাঙ্গন, ক্যাং পাড়া ও বৈদ্যঘোনাস্থ থংরো পাড়ায় দুপুর ১ টা থেকে স্ব স্ব রাখাইন পল্লী থেকে বাদ্য বাজনার তালে তালে দলবেঁধে ছুটে যায় রাখাইরন তরুণরা। আর প্যান্ডেল গুলোতে আগে থেকে সেজে গুঁজে অপেক্ষামান তরুণীরা এক অপরকে মেত্রিময় পানি ছিটিয়ে পুরোনো বছরের হতাশা দূর করে নব আলোকে পথ চলার প্রত্যয় ব্যক্ত করে। যা অবলোকনে হিন্দু, মুসলিম, খ্রিষ্টান ধর্মালম্বীদের পাশাপাশি জড়ো হয় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত পর্যটকরাও। এতে রাখাইন পল্লী সমূহ রূপ নেয় সার্বজনীন অহিংস কেন্দ্র বিন্দুতে। এ যেন বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নে লালিত ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গড়া সোনার এক খন্ড বাংলাদেশ।

মূলতঃ ১৩৭৮ মগীসনকে বিদায় জানিয়ে ১৩৭৯ মগীসনকে বরণ করা জন্য রাখাইন সম্প্রদায় নতুন বর্ষ পালন করার উদ্দেশ্যে এই উৎসব পালন করে করছে বলে জানা গেছে। রাখাইন ভাষায় এ উৎসবকে বলা হয় মাহা সাংগ্রেং পোয়ে। এর বাংলা আভিধানিক অর্থ মৈত্রিময় জলকেলি উৎসব। আজ বুধবার জলকেলি উৎসবের সমাপনী দিন। শহরছাড়াও মহেশখালী, টেকনাফ সদর, হ্নীলা চৌধুরী পাড়া, রামু পানেরছড়া, চকরিয়ার মানিক পুরসহ রাখাইন অধ্যুষিত এলাকা গুলোতে সপ্তাহ জুড়ে রাখাইরন নববর্ষ পালনে নানা অনুষ্ঠান পালিত হচ্ছে। জলকেলির প্যান্ডেল গুলো রঙিন ফুল আর নানা কারুকার্যে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। রাখাইন এলাকার প্রতিটি বাড়িতে এখন উৎসবের বর্ণিল আবহ বিরাজ করছে। জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসমুক্ত ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মানে বৌদ্ধ ধর্মের এসব অনুসারীরা যেন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। ওই উৎসবের মূল লক্ষ্য অতীতের সকল ব্যথা-বেদনা, গ্লানি ভুলে ভ্রাতৃত্ববোধের মাধ্যমে ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়া।

এনজিও কর্মকর্তা মং হ্লা ওয়ান, পুলিশ সুপার কার্যলয়ের কম্পিউটার অপারেটর বাওয়ান, বাংলাদেশ রাখাইন স্টুডেন্ট কাউন্সিল এর উপদেষ্টা ক্যনাই, দুবাই থেন থেন নাই, বিশ্ববিদ্যালয় চ লাইন, জনি, জ জ, মংসিয়াই, ইয়ুদি, জওয়ান, আক্য, আবুরি, ওয়ানশে, কিংজ, হাপু ও ওয়াহ ওয়াহ জানান, আধিকাল থেকে রাখাইন নববর্ষ উপলক্ষে সামাজিক ভাবে সাংগ্রে পোয়ে উৎসব পালন হয়ে আসছি। এবারও ব্যতিক্রম ঘটনি। আনন্দ-উল্লাসে নতুন বছরকে বরণ করছে সবাই। এর মাধ্যমে আমরা একে অপরের গায়ে পানি ছিটানোর মধ্য দিয়ে পুরনো দিনের সব ব্যথা, বেদনা, হিংসা বিদ্বেষ ভুলে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখি। এটি আমাদের কাছে খুবই পবিত্র ও উৎসবের দিন।’

কক্সবাজার সিটি কলেজের অধ্যক্ষ ক্যথিং অং জানান, সাংগ্রে পোয়ে বা জলকেলি রাখাইনদের সামাজিক উৎসব। সময়ের আবর্তে এই উৎসব সার্বজনীনে রূপ নিয়েছে। আজ উৎসবের সমাপনী দিন। এ পর্যন্ত মাহা সাংগ্রেং পোয়ে বা জলকেলি উদযাপনে কোন বিশৃঙ্খল ঘটনা ঘটেনি। এর জন্য রাখাইন সম্প্রদায়ের আবাল বৃদ্ধ বণিতা জেলা পুলিশসহ প্রশাসনের কাছে বিশেষ কৃতজ্ঞ। কারণ উৎসব চলাকালীন পুলিশ ও র‌্যাব আমাদের উৎসবস্থলে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিয়েছে। আশা করছি আজও নির্বিঘেœ জলকেলি উৎসব সফলতার সাথে শেষ হবে। আমরা মনে করি ধর্ম যার যার, উৎসব সবার।

পুলিশ সুপার ড. একেএম ইকবাল হোসেন বলেন, রাখাইনদের জলকেলি উৎসবে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। কোন অঘটন ছাড়া আজ এই উৎসবের সমাপ্তি ঘটবে। এ জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট সবার কাছে কৃতজ্ঞ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সব সময় অতীতের ন্যায় মানুষের নিরাপত্তায় নিরলসভাবে কাজ করে যাবে।