এম.এ আজিজ রাসেল:
বাংলা নববর্ষ বরণ শেষ হয়েছে। এবার আগামী ১৭ এপ্রিল রাখাইন নববর্ষ পালনের বর্ণিল আয়োজন চলছে। ওইদিন ১৩৭৮ মগীসনকে বিদায় জানিয়ে সানন্দে বরণ করা হবে ১৩৭৯ মগীসনকে। বর্ষ বরণে প্রতিবছর বৌদ্ধ ধর্মালম্বীরা সাংগ্রে পোয়ে (জলকেলি) উৎসব উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালন করে থাকে। এ উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিকতা বুদ্ধ স্নানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে। ১৩ এপ্রিল সকালে শহরের বার্মিজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গন থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করে রাখাইন শিক্ষার্থীরা। শোভাযাত্রাটি বিভিন্ন রাখাইন পল্লী পদক্ষিণ করে কেন্দ্রীয় অগ্গমেধাস্থ মাহাসিংদোগ্রী মন্দিরে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে শিক্ষার্থীরা বৌদ্ধ ভিক্ষুদের দান করেন নগদ টাকা, চাল, চিনি, দুধ, কলা, নারিকেল, মোমবাতি, সাবান দেশলাইসহ হরেক রকম পণ্য। পালন করেন পঞ্চশীল। একই ভাবে ১৪ এপ্রিল শুক্রবার বিভিন্ন এলাকার প্রবীণ নারী-পুরুষ মন্দির ভিত্তিক শোভযাত্রা বের করবেন। তারা পঞ্চশীল, অষ্টশীল ও বিভিন্ন জিনিস দান করবেন। এছাড়া ১৫ ও ১৬ এপ্রিল রাখাইন পল্লী গুলোতে শিশুরা জলকেলিতে মেতে উঠবে। আর ১৭ এপ্রিল থেকে ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত জাকঝমকভাবে অনুষ্ঠিত হবে মূল সাংগ্রে পোয়ে বা জলকেলি উৎসব। ইতোমধ্যে নববর্ষে রাখাইন বয়ষ্ক নারী-পুরুষরা উপবাস করে থাকেন। এসময় প্রাণী হত্যা, মিথ্যা বলাসহ কমপক্ষে ৮টি দুষ্কর্ম থেকে দূরে থাকতে হবে। শহরছাড়াও মহেশখালী, টেকনাফ সদর, হ্নীলা চৌধুরী পাড়া, রামু, পানিরছড়া, চকরিয়ার মানিক পুরসহ রাখাইন অধ্যুষিত এলাকা গুলোতে সপ্তাহ জুড়ে নববর্ষ পালনে নানা অনুষ্ঠান পালিত হবে। ইতোমধ্যে শহরের টেকপাড়া, হাঙর পাড়া, বার্মিজ স্কুল এলাকা, চাউল বাজার, পূর্ব-পশ্চিম মাছ বাজার, আরডিএফ প্রাঙ্গন, ক্যাং পাড়া ও বৈদ্যঘোনাস্থ থংরো পাড়ায় তৈরি করা হয়েছে জলকেলির ২০টি নান্দিক প্যান্ডেল। রঙিন ফুল আর নানা কারুকাযে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে প্যান্ডেলের চারপাশ। সবার মাঝে এখন বর্ষ বরণের আমেজ। রাখাইন এলাকার প্রতিটি বাড়ি সাজছে নতুন সাজে। ছোট শিশু থেকে শুরু করে বড়রাও ব্যস্ত নতুন কাপড় কিনতে। অনেকেই শেষ করেছেন কেনাকাটার পালা। উৎসবের মূল লক্ষ্য অতীতের সকল ব্যথা-বেদনা, গ্লানি ভুলে ভ্রাতৃত্ববোধের মাধ্যমে ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়া। রাখাইন তরুণ-তরুণীরা নতুন ও আকর্ষণীয় পোশাক পরিধান করে সেজেগুঁজে রাস্তার মোড়ে মোড়ে এবং রাখাইন পল্লীতে তৈরি করা জলকেলি উৎসবের প্যান্ডেলে একে অপরকে পানি নিক্ষেপ করে আনন্দ প্রকাশ করে। এসময় বাদ্য বাজিয়ে নাচ-গানসহ চলে আনন্দঘন অনুষ্ঠান। সাথে ঢাক-ঢোল আর কাঁসার তালে-তালে নেচে উঠেন রাখাইন আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা। ধর্মীয় আচারাধি শেষে ১৭ এপ্রিল থেকে পুরোনো ও জীর্ণতা মুছে পরস্পরের মাঝে জল ছিটিয়ে নব উদ্যোমে নতুত্বকে বরণ করার উৎসবে মেতে উঠবে ছোট বড় সকলেই ।
রাখাইন শিক্ষার্থী ক্যনাই, মং হ্লা ওয়ান, বাওয়ান, থেন থেন নাই, চ লাইন, জনি, জ জ, মংসিয়াই, ইয়ুদি, জওয়ান, আক্য, আবুরি, ওয়ানশে, কিংজ, হাপু ও ওয়াহ ওয়াহ জানান, আধিকাল থেকে রাখাইন নববর্ষ উপলক্ষে সামাজিক ভাবে সাংগ্রে পোয়ে উৎসব পালন হয়ে আসছে। এবারও ব্যতিক্রম ঘটবে না। আনন্দ-উল্লাসে নতুন বছরকে বরণ করে নেব আমরা। এর মাধ্যমে আমরা একে অপরের গায়ে পানি ছিটানোর মধ্য দিয়ে পুরনো দিনের সব ব্যথা, বেদনা, হিংসা বিদ্বেষ ভুলে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখি। এটি আমাদের কাছে খুবই পবিত্র ও উৎসবের দিন।’
কক্সবাজার সিভিল সার্জন ডাঃ পুঁ চ নু জানান, সাংগ্রে পোয়ে বা জলকেলি উৎসব রাখাইনদের সামাজিক উৎসব। বৃহস্পতিবার রাখাইন সমপ্রদায়ের নর-নারীরা বুদ্ধের মূর্তিকে স্নান করানোর মাধ্যমে সামাজিক এ উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেন। এটি চলবে ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত।’
কক্সবাজার পুলিশ সুপার ড. একেএম ইকবাল হোসেন বলেন, রাখাইনদের জলকেলি উৎসব উপলক্ষে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি র্যাবও মাঠে থাকবে।’
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।